গভীর রাত বা ভোরে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে পিকআপে তোলা হয় যাত্রী। এরপর কিছু দূর গিয়ে সব কেড়ে নেওয়া হয়। ছুরি বা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়। ডাকাতি শেষে বিমানবন্দর এলাকায় নিয়ে চলন্ত পিকআপ থেকে সড়কে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়। এতে কেউ মারা যান কেউ আহত হয়ে বাঁচার জন্য ওঠে দাড়ায়।
রাজধানীতে সক্রিয় একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দলকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। এ বিষয়ে বুধবার (২০ জানুয়ারি) সকালে মিন্টো রোডে এক সংবাদ সম্মেলন করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) এ তথ্য জানায়।
পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের চনপাড়া বটতলা মোড় থেকে ডাকাত দলের দলনেতা সজলসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে একটি পিকআপ, দেশীয় অস্ত্র, সাত হাজার টাকা ও একাধিক মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ জানায়, এই ডাকাত দলের খপ্পরে পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন রাজধানীর দক্ষিণখান কাওলার নামাপাড়ার বাসিন্দা আপন মিয়া। পেশায় সবজি ব্যবসায়ী আপন মিয়া ও তার সঙ্গী নজরুল ইসলাম কারওয়ান বাজারে যাবেন বলে গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর রাতে বিমানবন্দর থানার কাওলার পথচারী-সেতুর (ফুটওভার ব্রিজ) পূর্ব পাশে অপেক্ষা করছিলেন। একটা সময় তারা একটি পিকআপ ভ্যানে উঠে বসেন। ওঠার পর পিকআপে থাকা মুসা ও রফিক ছুরি ধরেন আপন ও নজরুলের বুকে। এ সময় ডাকাত দলের প্রধান সজল তাদের কাছে থাকা টাকা ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নেন এবং আপন মিয়াকে ধাক্কা দিয়ে পিকআপ থেকে ফেলে দেন। খানিক দূরে গিয়ে নজরুলকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তার ওপর ফেলে চলে যায় ডাকাত দলটি।
ডাকাতির এমন একটি ঘটনার ভিডিওতে দেখা যায়, বিমানবন্দর সড়কে একের পর এক বাস-ট্রাক চলছে। এ সময় একটি পিকআপ ভ্যান থেকে একজনকে ফেলে দেওয়া হয়। তিনি সড়কেই পড়ে ছিলেন। ওই যাত্রীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার পরও সেখানে তাকে উদ্ধারে কোনো গাড়ি থামেনি।
ওই ঘটনায় আপন মিয়া মারা যান এবং বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা হয়। মামলার পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত শুরু করে। ডাকাত দলটি ধরতে গোয়েন্দা (গুলশান) বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. গোলাম সাকলায়েনের নেতৃত্বে পুলিশের একাধিক দল অভিযান চালায়। অভিযানে ডাকাত দলের প্রধান সজলসহ মুসা, বাচ্চু, সজীব, মুন্না ও সিদ্দিক নামের ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার ডাকাত দলের ছয় সদস্য
গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে, সংঘবদ্ধ এই ডাকাত দল সপ্তাহে একাধিক দিন ডাকাতির জন্য বের হয়। ডাকাতি করাই তাদের পেশা। পিকআপের সামনে থাকে তিনজন এবং পেছনে থাকে দুই থেকে তিনজন। মূলত, তাদের টার্গেট থাকে নগরীর মাছ, ফলমূল ও সবজির পাইকারি ব্যবসায়ীরা। আবদুল্লাহপুর, ফায়দাবাদ, তুরাগ এলাকা থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত, কখনো রামপুরা থেকে যাত্রাবাড়ী, যাত্রাবাড়ী থেকে ভূলতা-গাউছিয়া-এই সড়কগুলো থেকে যাত্রী তোলে ডাকাত দলটি।
এ বিষয়ে গোয়েন্দা (গুলশান) বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, রেডিসন হোটেল থেকে বিমানবন্দরের দিকে যেতে বেশ কিছুটা পথে কোনো গতিরোধক নেই। ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একজন যাত্রীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার পরও কোনো গাড়িই থামেনি। এ জায়গায় আগে একটি পুলিশ ফাঁড়ি ছিল। মেট্রোরেলের কাজ শুরুর পর ফাঁড়িটি সরিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয় মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত অপরিচিত কারও গাড়িতে ওঠতে নিষেধ করেন।।
এ জাতীয় আরো খবর..