জঙ্গিবাদের উদ্বুদ্ধ হয়ে চার বছর বাবা ও মার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন শাওন মুনতাহা ইবনে শওকত (৩৪) ও নুসরাত আলী জুহি (২৯)।বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) র্যাব সদর দফতরে জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে এই দম্পতি তাদের মা-বাবার কাছে ফিরে আসেন। দীর্ঘ চার বছর পর বাবা-মা এই দম্পতিকে ফিরে পেয়েছেন। এই দম্পতির দুই সন্তান রয়েছে।
সিলেটের বাসিন্দা শাওন একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে হিযবুত তাহরীর যুক্ত হন। ২০১১ সালে মেডিকেল শিক্ষার্থী নুসরাতকে বিয়ে করেন এবং নুসরাতও জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে জড়িয়ে যান।২০১৭ সাল থেকে এই দম্পতি দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকার এসে বিভিন্ন এলাকায় বসবাস শুরু করেন এবং মা-বাবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।
শাওনের বাবা শওকতুর রহমান বলেন, আমি একজন ব্যাংকার ছিলাম। আমার ছেলে কীভাবে জঙ্গিবাদে জড়িয়েছে আমি তা জানি না।কান্নাকণ্ঠে তিনি আরো বলেন, কারো সন্তান যাতে এভাবে জঙ্গিবাদের না জড়ায় সবাইকে এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে একে একে আত্মসমর্পণ করেন আবিদা জান্নাত আসমা (১৮), মোহাম্মদ হোসেন ওরফে হাসান গাজী (২৩), মো. সাইফুল্লাহ (৩৭), সাইফুল ইসলাম (৩১), মো. আবদুল্লাহ আল মামুন (২৬), মো. সাইদুর রহমান (২২) ও আবদুর রহমান সোহেল (২৮)। আসমার মা শাহিনা সুলতানা বলেন, আমার মেয়ে মেধাবী ছিল। সে অনেক কিছু করবে সমাজের অনেক বড় অফিসার হবে। কিন্তু কীভাবে যে কি হয়েছে, জানি না। এখন আমার মেয়ের জন্য সবাই দোয়া করবেন। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা আসমা বলেন, ২০১৯ সালে এসএসসি পাস করি। তারপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একজনের সঙ্গে জড়িয়ে বিয়ে করি এবং জঙ্গিবাদের জড়িয়ে যাই। জঙ্গিবাদের জড়িয়ে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সে নিঃসঙ্গ জীবন অনেক কষ্টের ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, আমি ভুল করে এ পথে এসেছিলাম। ভুল বুঝতে পেরে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করি এবং আশা করছি আমার স্বামীও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে।
জঙ্গি আত্মসমর্পণ এই অনুষ্ঠানের নাম দিয়েছে ‘নব দিগন্তের পথে’।র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে বলেন, জঙ্গি সেজেই তাদের সঙ্গে মিশে পরে নজরদারিতে এনে তাদের পথটি যে ভুল, তা তাদের বোঝানো হয়েছে। তাদের আলোর পথে ফিরিয়ে আনার এটা প্রথম ধাপ। এই নয়জনের মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে পুরনো একটি মামলা রয়েছে, বাকিদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই বলে জানিয়েছেন র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক। তিনি বলেন, তাদের মস্তিষ্কে যে ধারণা বা মতবাদ বসে আছে, সেটা অস্ত্র দিয়ে নির্মূল করা যায় না। সেখান থেকে তাদের বুঝিয়ে বের করে আনা ছাড়া বিকল্প নেই। আর সে জন্য র্যাব ডি-র্যাডিকালাইজেশন এই পুনর্বাসন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। তিনি বলেন, র্যাব এ ক্ষেত্রে মাত্র ২৫.৭ ভাগ করতে পারে, বাকিটা অন্যদের করতে হবে। আমরা তাদের জঙ্গি থেকে পৃথক করতে চাই।
যারা আত্মসমর্পণ করেছেন তাদের মধ্যে মামুনকে ফার্মেসি, সাইফুল্লাহ ও সোহেলকে গাভী, সাইদুর, হাসান ও সাইফুলকে ট্রাক্টর দিয়ে পুনর্বাসন করা হচ্ছে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।
এ জাতীয় আরো খবর..