“গেদু চাচা” বাংলাদেশের প্রবীণ পাঠকদের কাছে সুপরিচিত। ‘গেদুচাচার খোলাচিঠি’- একসময় তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল বাংলাদেশের সাংবাদিকতা এবং রাজনীতিতে। রম্য রচনার মাধ্যমে সমাজের নানা অসঙ্গতি এই ‘গেদু চাচার খোলা চিঠিতে উঠে আসত। এরশাদ সরকারের স্বৈরাচারের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল ‘গেদু চাচার খোলাচিঠি। খ ম হ- নামে এই খোলা চিঠিগুলো লিখতেন খোন্দকার মোজাম্মেল হক। যিনি করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন গত জুন মাসে।
আরেকজন প্রথিতযশা সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ ছিলেন ফেরদৌস আহমেদ কোরেশী। পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি এবং ডাকসাইটে রাজনীতিবিদ ছিলেন তিনি। ব্রেইনস্ট্রোকে গত আগস্টে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং এই মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশের সাংবাদিকতা জগতের এই দুই দিকপালেরই পৈতৃক বাড়ি ফেনীতে। আজ জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক স্মরণসভায় সাংবাদিকতা এবং রাজনীতিতে এই দুই সোনালি মানুষের অবদানকে স্মরণ করা হয়।
স্মরণসভায় বক্তারা বলেন, ‘ফেনী সব সময়ই দেশকে অনেক বড় বড় সাংবাদিক উপহার দিয়েছে, যারা পুরো সাংবাদিক সমাজকে আলোকিত করেছেন। বাংলার গণমাধ্যমে তারা একেকজন ছিলেন অগ্রপথিক। রাজনীতিতেও রেখেছেন অনন্য ভূমিকা। সদ্য প্রয়াত ড. ফেরদৌস আহমদ কোরেশী ও খন্দকার মোজাম্মেল হক ছিলেন তাদের অন্যতম। তারা ছিলেন জ্ঞানভিত্তিক সাহসী সাংবাদিকতার অগ্রপথিক। তাদের অবদান জাতি কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ রাখবে।
প্রবীণ সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধা ড. ফেরদৌস আহমদ কোরেশী ও খোন্দকার মোজাম্মেল হকের স্মরণসভায় বক্তারা একথা বলেন। ‘ফেনী সাংবাদিক ফোরাম, ঢাকা’ জাতীয় প্রেস ক্লাবে আজ বুধবার (১৮ নভেম্বর) তাদের এই দুই উপদেষ্টার সম্মানে এই স্মরণসভার আয়োজন করে।
ফোরামের সহ-সভাপতি আমানুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ উল্লাহ ভূ্ইঁয়ার সঞ্চালনায় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি ডেইলি অবজারভার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী
সভায় বক্তব্য রাখেন ফোরামের উপদেষ্টা দৈনিক সংবাদের বার্তা সম্পাদক কাজী রফিক, ফোরামের উপদেষ্টা ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বিএফইউজের সভাপতি এম আবদুল্লাহ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি ও বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব ওমর ফারুক, এবি পার্টির সদস্য সচিব ও দিগন্ত টিভির ডিইডি মুজিবুর রহমান মঞ্জু, ড. ফেরদৌস আহমদ কোরেশীর সহধর্মিণী প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল-পিডিপি’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নিলুফার পান্না কোরেশী, তার বড় মেয়ে ডা. অনিন্দিতা শবনম কোরেশী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক শাহেদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিভাগ সাংবাদিক ফোরাম, ঢাকা’র সাধারণ সম্পাদক শাহীনুল ইসলাম চৌধুরী, ফেনী সাংবাদিক ফোরাম, ঢাকা’র সাবেক সাধারণ সম্পাদ ও দৈনিক সমকালের প্রধান প্রতিবেদক লোটন একরাম, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাবেক সহ-সভাপতি আজমল হক হেলাল, সাপ্তাহিক আজকের সূর্যোদয়ের নির্বাহী সম্পাদক খোন্দকার বেলায়েত হোসেন ও খোন্দকার মোজাম্মেল হকের ভ্রাতুষ্পুত্র খোন্দকার তারেক রায়হান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ‘ড. কোরেশী ছাত্রজীবনে ছিলেন মেধাবী ছাত্রনেতা। জ্ঞানভিত্তিক রাজনীতির চর্চার পাশাপাশি সাংবাদিকতায়ও দিকপালের ভূমিকা পালন করে গেছেন। অনুকরণীয় অনুসরণীয় দীপ্ত প্রদীপ রেখে গেছেন। তিনি তার অনুসারীদের মধ্যে কিংবদন্তি হয়ে থাকবেন। গেদুচাচা কলামের মাধ্যমে খোন্দকার মোজাম্মেল হক গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনরুদ্ধারে কাজ করে গেছেন। তার বিত্ত ছিল না, কিন্তু চিত্ত দিয়ে সকলকে মুগ্ধ করে গেছেন।’
ডেইলি অবজারভার সম্পাদক বলেন, ‘ফেনী একসময় বহু সাংবাদিক উপহার দিয়েছে। সময় সময় তারা বাংলার সাংবাদিক সমাজকে আলোকিত করেছেন। বাংলার গণমাধ্যমে তারা একেকজন ছিলেন অগ্রপথিক; কিন্তু সেই ধারা যেন ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাচ্ছে। নতুন প্রজন্মকে সেটা উদ্ধার করতে হবে। নিজ নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী ফেনীবাসী সাংবাদিকের সামনে এগিয়ে যেতে হবে, নতুনদের সাংবাদিকতায় উদ্ভূদ্ধ করতে হবে।