আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিনকে ভয় করা অনেক বড় গুণ। কুরআনুল কারিমের অনেক আয়াতে তাঁকে ভয় করার নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। কিন্তু আল্লাহকে ছাড়া আর কাউকে কি ভয় করা যাবে? এ সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনাই বা কী? কাকে ভয় করতে হবে এ মর্মে নির্দেশ দিয়ে কুরআনুল কারিমে মুমিন বান্দাকে উদ্দেশ্য আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-তোমরা একমাত্র আমাকেই ভয় কর যদি মুমিন হও।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ১১২)
না’, আল্লাহ তাআলাকে ছাড়া কোনো মুমিন কাউকে ভয় করতে পারে না। ভয় করা সম্পর্কে ইসলামে ৩টি বিধান রয়েছে। এরমধ্যে প্রথমটি শিরক, দ্বিতীয়টি হারাম এবং তৃতীয় ক্ষেত্রে ভয় করা জায়েয বা বৈধ।
– প্রথমত : যে ভয় ‘শিরক’
আল্লাহ ছাড়া কোনো মানুষকে কল্যাণ-অকল্যাণের ব্যাপারে গোপনে ভয় করা। অর্থাৎ এরূপ ধারণা করা যে, দুনিয়া ও পরকালে ওলি-আওলিয়া, ফেরেশতা, জ্বিন, বিশাল বৃক্ষ কিংবা ক্ষমতাধর কেউ গোপনে তার ক্ষতি করার নিশ্চিত ক্ষমতা রাখে এমন বিশ্বাস পোষণ করা। চাই সে ব্যক্তি কিংবা প্রাণি জীবিত হোক বা মৃত।
আখেরাতে ব্যাপারে শিরকি ভয় হলো এমন নিশ্চিত ক্ষমতার অধিকারী বলে বিশ্বাস করা যে, সেসব ওলি-আওলিয়া, ফেরেশতা, জ্বিন কিংবা বিশাল প্রাণি বা জীব পরকালে তাদের উপকারে আসবে, সুপারিশ করবে, অন্যায়ের আজাব দূর করবে; তাই তাদেরকে আল্লাহর পাশাপাশি কল্যাণ লাভে ভয় করা।
যদি কেউ তাদের সমালোচনা কিংবা তাদের কোনো অন্যায় কথা অবমাননা করে তবে দুনিয়া ও পরকালে তাদের নিশ্চিত ক্ষতি হবে, এমন বিশ্বাস পোষণ করা।
মক্কার কাফির মুশরিকরা যেমনটি মনে করতো যে, তাদের দেব-দেবির সঙ্গে বেআদবি করলে কিংবা সমালোচনা করলে সে দেব-দেবি তাদের দুনিয়া ও পরকালে নিশ্চিত ক্ষতির কারণ হবে।
মানুষের এমন সব শিরকি ভয়ের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
‘আল্লাহ কি তার বান্দার জন্য যথেষ্ট নয়? অথচ তারা (মুশরিকরা) আল্লাহ ব্যতিত তাদের যে সব দেবতা রয়েছে, তারা আপনাকে সে সব উপাস্যের অনিষ্টের ভয় দেখায়।’ (সুরা যুমার : আয়াত ৩৬)
– দ্বিতীয়ত ‘যে ভয় হারাম বা নিষিদ্ধ’’
ভয়ে আল্লাহর বিধান পালন থেকে বিরত থাকা হারাম বা নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা এ বিধান যেমন ‘নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ইত্যাদি ফরজ নির্দেশ পালন করলে নিজের ক্ষতি হবে কারো প্রতি এমন ভয় পোষণ করা হারাম। এ ব্যাপারে হাদিসে কুদসিতে এসেছে-
‘কেয়ামতের দিন মহান আল্লাহ বান্দাকে বলবেন, অন্যায় কাজ দেখার পর কোন জিনিস তোমাকে তা পরিবর্তন করতে বাধা দিয়েছে? তখন বান্দা বলবে, হে প্রভু! মানুষের ভয়ে করিনি! তখন আল্লাহ বলবেন, মানুষের চেয়ে আমিই তো ভয়ের অধিকতর হক্বদার ছিলাম।’ (ইবনে মাজাহ) সুতরাং কোনো মানুষের ভয়ে আল্লাহর বিধান পালন বিরত থাকা হারাম।
– তৃতীয়তা : ‘যে ভয় বৈধ’
স্বাভাবিক স্বভাবগত ভয় করা জায়েয বা বৈধ। যে ভয়তে আল্লাহর সম্মান কিংবা ক্ষমতা ও নির্দেশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় না। আর তাহলো শত্রুকে ভয় করা, হিংস্র প্রাণি থেকে ভয় করা, আগুণ থেকে ভয় করা, পানিতে ডুবে মরার ভয় করা ইত্যাদি।
মনে রাখতে হবে এ জাতীয় ভয় দোষের নয়। বরং এ সব ব্যাপারে ভয়ের সঙ্গে সঙ্গে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। বরং নিজেদের নিরাপত্তার ব্যাপারে মানুষকে সতর্ক থাকতে কুরআন-হাদিসে নসিহত প্রদান করা হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমের অনেক আয়াতে তাকে ভয় করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর যারা তাকে ভয় করে চলে, তাদের জন্য অসংখ্যা কল্যাণের ঘোষণা দিয়েছেন।
সুতরাং শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলাকে ভয় করতে হবে। স্বভাবগত বিষয় ব্যতিত আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করা যাবে না।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআন ও হাদিসের নির্দেশনা অনুসারে তাকে ভয় করার তাওফিক দান করুন।