1. nagorikkhobor@gmail.com : admi2017 :
  2. shobozcomilla2011@gmail.com : Nagorik Khobor Khobor : Nagorik Khobor Khobor
শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৫৮ পূর্বাহ্ন

পু‌লি‌শের সাপ্তা‌হিক ছু‌টি নেই- প্রণোদনাও নেই ! তারপরও পু‌লিশ মান‌বিক

এমইএস:
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর, ২০২০
  • ৪০৮ বার পঠিত
বাংলা‌দেশ পু‌লিশ

দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সময়ের কোনও বাঁধাধরা নিয়ম নেই। ১২ ঘণ্টা, ১৬ ঘণ্টা এমনকি ১৮ ঘণ্টাও ডিউটি করতে হয় প্রতিদিন। সাপ্তাহিক ছুটি বলতেও কিছু নেই। বছরে দুই-একবার ছুটির আবেদন করলে কখনও মেলে, আবার কখনও মেলে না। দীর্ঘদিন এভাবে ডিউটি করতে গিয়ে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় তখন পুলিশের কাছে ভালো আচরণ আশা করেন কীভাবে? এত কিছুর পরও পু‌লিশ মান‌বিক যার প্রমান ক‌রোনা ভাইরা‌সের প্রকোপ শুরু থে‌কে আজ পর্যন্ত মানু‌ষের পা‌শে থে‌কে সেবা দি‌চ্ছেন তারা।  অর্জিত ছুটি যতই জমা থাকুক, সেক্ষেত্রেও ১২ মাসের বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে না, নাম প্রকাশ না করে নিজের ভেতরে জমে থাকা কষ্টের এই কথাগুলো বললেন শাহবাগ থানার একজন সাব ইন্সপেক্টর (এসআই)। কষ্ট আর হতাশা কেবল তার একারই নয়—কনস্টেবল, ইন্সপেক্টর, এএসপি ও এসপি পদমর্যাদার কয়েকজন পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে একই চিত্র পাওয়া যায়।

শৃঙ্খলা বাহিনী বা ইমার্জেন্সি সার্ভিস হিসেবে ১৮৬১ সালের পুলিশ আইনেই সাপ্তাহিক ছুটির কোনও বিধান রাখা হয়নি। আইনে বলা হয়েছে—‘পুলিশ সদস্যরা সর্বদা দায়িত্বরত (অন ডিউটি) হিসেবে বিবেচিত হবেন।’ সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, জনবল ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে পুলিশের এই কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব করা সম্ভব, যেন কোনোভাবেই একজন পুলিশ সদস্যের প্রতিদিনের ডিউটি ৮ থেকে ১০ ঘণ্টার বেশি না হয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশে কর্মরত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা  বলেন, ‘‘কনস্টেবল কিংবা পুলিশ সুপার বলে কোনও কথা নেই। পুলিশ আইন ও সংবিধান অনুযায়ী ইমার্জেন্সি সার্ভিস হিসেবে যখন যার প্রয়োজন, তার ডিউটিতে থাকা বাধ্যতামূলক। এখানে মানবিকতা কিংবা অমানবিকতা বলে কোনও শব্দ নেই। পুলিশের আইন অনুযায়ী, পুলিশ সদস্যরা ২৪ ঘণ্টা অন ডিউটিতে থাকবেন। আইনেই পুলিশ বাহিনীকে  ইমার্জেন্সি সার্ভিস’ হিসেবে ঘোষণা করা আছে।

পুলিশের ইউনিট ভেদে ডিউটির ধরনও ভিন্ন হয়। যেমন, যেসব পুলিশ সদস্য অফিসিয়াল দায়িত্বে থাকেন, তারা সবসময় না পারলেও প্রায়ই সাপ্তাহিক ছুটি ভোগ করার সুযোগ পান। কিন্তু থানায় কিংবা অন্য ইউনিটগুলোতে এই সুযোগ নেই। ডিউটি অফিসার নামে থানায় সাব-ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার একজন দায়িত্ব পালন করে থাকেন। দুই শিফটে দু’জনকে ১২ ঘণ্টা করে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করতে হয়। তিন জন হলে আট ঘণ্টা করে ডিউটি হতো। কিন্তু সেই জনবল আমাদের নেই। বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্য সংখ্যা হচ্ছে দুই লাখ ১২ হাজার।’
সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী অন্যান্য সরকারি কর্মচারীর মতো পুলিশেরও বছরে ৩৩ দিন করে অর্জিত ছুটি জমা হয়। পিআরএল বা অবসরে যাওয়ার সময় অন্য সরকারি কর্মচারীদের ন্যূনতম এক বছরের ছুটি জমা থাকতে হয়। কিন্তু পুলিশের ক্ষেত্রে দেখা যায়, অবসর নেওয়ার আগে প্রায় সবারই অর্জিত ছুটি এক বছরের চেয়ে অনেক বেশি জমা থাকে। কিন্তু পিআরএল সুবিধা পেয়ে থাকেন ওই এক বছরই।

পুলিশ সদস্যরা মনে করেন, জমা থাকা অতিরিক্ত ছুটির বিনিময়ে যদি আর্থিক সুবিধা দেওয়া হতো, তাহলে ছুটি নিয়ে এত কথা উঠতো না। অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের জন্যেও পুলিশ সদস্যদের বাড়তি কোনও সুবিধা দেওয়া হয় না। সেজন্যেও ওভারটাইমসহ সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো উচিত।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। বিমানবন্দরে দায়িত্ব পালনের জন্যে আর্মড পুলিশের আলাদা একটি ব্যাটালিয়ন রয়েছে। এই ব্যাটালিয়নের ৮০০ সদস্যসহ প্রায় এক হাজার ২০০ পুলিশ সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন। কনস্টেবল থেকে এএসআই পদমর্যাদার সদস্যরা বিভিন্ন পোস্ট বা স্থানে দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

এপিবিএন সূত্র জানায়, ছয় ঘণ্টা ডিউটি শেষে ১২ ঘণ্টা পর পুনরায় তাদের ডিউটিতে যেতে হয়। ফলে দিনে দু’বার ডিউটি করতে হচ্ছে এপিবিএন সদস্যদের। তাদের সাপ্তাহিক কোনও ছুটি নেই। তবে আবেদন করলে দু’তিন মাস পর ৮ থেকে ১০ দিনের ছুটি পেয়ে থাকেন কনস্টেবলরা। অন্যদিকে এসআই, ইন্সপেক্টর, এএসপি ও এডিশনাল এসপি পদের কর্মকর্তারা প্রতিদিন ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা ডিউটি করে থাকেন।

অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ কথা বলতে চাননি। বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের এক কনস্টেবল বলেন, আমাদের কোনও সাপ্তাহিক ছুটি নেই। ফলে নিজের প্রয়োজনীয় কাজ থাকলেও সেগুলো করা কঠিন হয়ে পড়ে। সব সময় ছুটি চেয়েও পাওয়া যায় না। এসব কারণে পরিবার থেকে অনেকটা বিছিন্ন থাকতে হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, কনস্টেবল, এস আই পর্যায়ের সদস্যদের মাঠ পর্যায়ে কাজ বেশি থাকে। তার ওপরের পদগুলো সুপারভাইজরি পদ। ফলে যিনি সুপারভাইজ করবেন তার কাজের ধরন হবে ভিন্ন। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পুলিশে মাঠ পর্যায়ে পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় অতিরিক্ত কাজের চাপ নিতে হয়। এতে শারীরিক ও মানসিক শক্তি কমে আসে। তখন কেউ কেউ শর্ট-ট্যাম্পার্ড হয়ে যান। ফলে মাঝে মধ্যে মানুষের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে থাকেন।
পুলিশের ছুটির বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ শাখার উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান নাগ‌রিক খবর‌কে ব‌লেন সরকারি চাকরি বিধিতে ছুটির যে বিধান রয়েছে তা পুলিশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। ১৮৬১ সালের পুলিশ আইনের ২২ ধারায় বলা আছে— পুলিশ সদস্যরা সর্বদা দায়িত্বরত (অন ডিউটি) বলে বিবেচিত হবেন। তাই আমরা ২৪ ঘণ্টার জন্যই দায়িত্ব পালন করে থাকি।
পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ শাখার এআইজি মো. সোহেল রানাও এ বিষয়ে আইনের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আইন অনুযায়ী পুলিশ ইমার্জেন্সি সার্ভিসের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া বাংলাদেশে জনসংখ্যার তুলনায় পুলিশের জনবল অনেক কম। মানুষের জীবন ও সম্পত্তির সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সদস্যদের নিরলসভাবে কাজ করতে হয়। কাজের চাপ নিতে হয় অনেক বেশি। এ কারণে সরকারি বিধি অনুযায়ী যে কর্মঘণ্টা ও ছুটির নিয়ম রয়েছে, সেই অনুযায়ী পুলিশ সদস্যদের ছুটি ভোগ করা সম্ভব হয় না।
পুলিশের ছুটি ও অতিরিক্ত দায়িত্ব এসেনশিয়াল সার্ভিস। এখানে ছুটি কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত। একটা ছুটি তো থাকবেই। সেটা সবাই পায়। কিন্তু ইমার্জেন্সির ক্ষেত্রে সময় মেনে দায়িত্ব পালন বলতে কিছু নেই। তবে এটা ঠিক যে, একটা লোক দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করলে তার কাছ থেকে ভালো আচরণ আশা করা যায় না। সেজন্য জনবল বাড়ানো উচিত। সপ্তাহে একদিন ছুটি থাকা উচিত। ওভারটাইমসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও বাড়াতে হবে। একজন লোকের সাধারণ কাজের সময় আট ঘণ্টা। কিন্তু পুলিশে এটা চালানো অত্যন্ত ডিফিকাল্ট। তাদের অনেক রকম ডিউটি থাকে। তারপরও চেষ্টা করা উচিত, যেন কারও প্রতিদিন আট থেকে ১০ ঘণ্টার বেশি ডিউটি না থাকে। বাংলা‌দে‌শে অন‌্য কোন প্রতিষ্ঠা‌ন বা বা‌হিনী নেই যেখা‌নে চ‌ব্বিশ ঘন্টা অন ডিউ‌টি‌তে থাক‌তে হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 nagorikkhobor.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com