নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে রহিমা ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স লিমিটেডে বয়লার বিস্ফোরণে একে একে ছয় শ্রমিক মারা গেছেন। দগ্ধ আরও এক শ্রমিক হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন। স্টিল তৈরির এই কারখানাটিতে নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছিল না বলে জানিয়েছেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। বয়লারে অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে বিস্ফোরণ হয়েছে বলে দাবি করেছে ফায়ার সার্ভিস।
গত ৪ মে বিকাল ৪টার দিকে রূপগঞ্জের ভুলতা এলাকার কারখানাটিতে বিস্ফোরণ হয়। এতে কারখানার সাত শ্রমিক দগ্ধ হন। তাদের উদ্ধার করে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেখানে একে একে ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে।
অতিরিক্ত তাপমাত্রায় বিস্ফোরণ হয়েছে দাবি করে নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের জোন-২ এর উপ সহকারী পরিচালক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘এই ঘটনার পরে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আমাদের খবর দেওয়া হয়নি। আশপাশের লোকজনের কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে আমরা সেখানে গিয়েছি। ঘটনাস্থলে মালিক ও ভুক্তভোগী শ্রমিক কাউকে পাইনি। পরে জানতে পেরেছি, বিস্ফোরণ হয়েছে। এটা একটা নতুন প্রতিষ্ঠান ছিল। তারা মাঝে মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে কাজ চালাতো। কারখানায় বয়লারে অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে বিস্ফোরণ হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানাতে পেরেছি। আর এটা যেহেতু একেবারে নতুন প্রতিষ্ঠান, তাই নিরাপত্তা সরঞ্জাম সেভাবে ছিল না। এরপরও আমরা আরও তদন্ত করে দেখছি।
নতুন হলেও প্রতিষ্ঠানটির ছাড়পত্র রয়েছে বলে জানান কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের উপমহাপরিদর্শক রাজীব চন্দ্র দাস। বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি ‘আমাদের কাছ থেকে ছাড়পত্র নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি চালু করা হয়েছে। এ বছরের শুরুতে তারা ছাড়পত্র নিয়েছিল। তবে গত মার্চে আমাদের টিম বেশ কিছু ভায়োলেশনের নোটিশ করেছিল। আমি পরিদর্শনে গিয়ে দেখেছি সেই ভায়োলেশনের নোটিশ রয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের টিম জানিয়েছে, আগামীতে প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করে নোটিশের বিষয়গুলো কী কী মানা হয়েছে সে অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে এই দুর্ঘটনা ঘটে গেছে।’
প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা সরঞ্জামের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করেছি। প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা সরঞ্জামের বিষয়গুলো যথাযথভাবে দেখাতে পারেনি। এর আগে যখন আমাদের টিম পরিদর্শন করেছিল তখনও তারা দেখাতে পারেনি। তবে তাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তাদের নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘শ্রমিকের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছি। আমাদের দপ্তর ও সরকারের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের যে যে সহযোগিতা করা দরকার তা অবশ্যই করবো। আমাদের আইনের ধারা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই দপ্তরের পরিদর্শক মেহেদী হাসান বলেন, ‘পরিদর্শনে গেলে প্রতিষ্ঠানটি প্রথমে ছাড়পত্র দেখাতে পারেনি। সেই অনুযায়ী আমরা নোটিশ করেছি। পরে জানতে পেরেছি, প্রতিষ্ঠানটি ছাড়পত্র নিয়েছে।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সি সার্কেল) আবির হোসেন বলেন, ‘এই ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। পরীক্ষামূলকভাবে অল্প কিছুদিন ধরে প্রতিষ্ঠানে কাজ চলছিল। তদন্ত চলছে।