ভুয়া কষ্টিপাথরের মূর্তি, ভুয়া ধাতবমুদ্রা ও ভুয়া ম্যাগনেট রাডার বিক্রির কথা বলে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রতারক চক্রের মূলহোতা সাইফুল ইসলাম@কষ্টি সাইফুল@ ম্যাগনেট সাইফুলকে আটক করেছে র্যাব-১১ সিপিসি-২ সদস্যরা।
সাম্প্রতিক সময়ে কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী ভুয়া কষ্টিপাথরের মূর্তি, ভুয়া ধাতবমুদ্রা ও ভুয়া ম্যাগনেট রাডারসহ অন্যান্য অতি মূল্যবান জিনিসপত্র আসল বলে আখ্যায়িত করে তা মানুষের কাছে বিক্রির কথা বলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। মূলত এসব প্রতারক চক্রের মূল টার্গেট সহজ সরল মানুষ। তারা এসব ভুয়া জিনিসপত্র চড়া দামে বিক্রির করা যাবে এই মর্মে আশ্বস্ত করে সাধারণ মানুষের নিকট হতে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাদেরকে করছে সর্বশান্ত।
এধরনের প্রতারণার স্বীকার একজন জনৈক ভ‚ক্তভোগী গত ২৮ নভেম্বর র্যাব-১১, সিপিসি-২, কুমিল্লায় স্ব-শরীরে হাজির হয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন যেখানে সে উল্লেখ করেন, ভুয়া কষ্টিপাথরের মূর্তি, ভুয়া ধাতবমুদ্রা ও ভুয়া ম্যাগনেট রাডার বিক্রির কথা বলে তার নিকট হতে তিন লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারকচক্রের মূলহোতা মোঃ সাইফুল ইসলাম@কষ্টি সাইফুল@ ম্যাগনেট সাইফুল (৪০)।
প্রতারক সাইফুল ইসলাম কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মাইজখার ইউনিয়নের হালিকামরা গ্রামের মোঃ মনু মিয়ার ছেলে।
প্রতারক চক্রের মূল হোতা সাইফুল ইসলাম@কষ্টি সাইফুল@ ম্যাগনেট সাইফুল নিজেকে কষ্টিপাথরের মূর্তি, ধাতবমুদ্রা ও ম্যাগনেট রাডার বিক্রেতা হিসেবে দাবী করে। জনৈক ভুক্তভোগী পেশায় একজন মাছ ব্যবসায়ী এবং ব্যবসার খাতিরে প্রতারক মোঃ সাইফুল ইসলাম এর সাথে পরিচয় হয় এবং দিনে দিনে তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। পরবর্তীতে প্রতারক মোঃ সাইফুল ইসলাম তার নিকট প্রস্তাব করে যে, তার কাছে অতি মূল্যবান কষ্টিপাথরের মূর্তি, ধাতবমুদ্রা ও ম্যাগনেট রাডার আছে যা সে স্বল্প মূল্যে বিক্রি করতে চায়। তার প্রস্তাবে প্রলোভিত হয়ে জনৈক ভুক্তভোগী সেগুলো কেনার জন্য তাকে প্রথমে ১ লক্ষ টাকা প্রদান করে। টাকা পাওয়ার পর প্রতারক মোঃ সাইফুল বিভিন্ন পায়তারা করতে শুরু করতে থাকে। টাকা প্রদান করেও জিনিস না পাওয়ায় জনৈক ভুক্তভোগী পুনরায় প্রতারক সাইফুলের সাথে যোগাযোগ করে তার জিনিসগুলো তাকে দিতে বলে। কিন্তু লোভী প্রতারক সাইফুল আরো টাকা পাওয়ার আশায় পুনরায় তার কাছে ২ লক্ষ টাকা দাবী করে এবং তাকে আশ্বস্ত করে সে যদি এবার টাকা দেয় তাহলে তাকে সব জিনিসগুলো দিয়ে দিবে। জনৈক ভুক্তভোগীর মনে আশার সঞ্চার হয় এবং জিনিসগুলো পাওয়ার আশায় সে আবার প্রতারক সাইফুলকে ২ লক্ষ টাকা প্রদান করে। টাকা পাওয়ার পর প্রতারক সাইফুল ভুক্তভোগীর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে আর কোন উপায়ান্তর না দেখে ভুক্তভোগী র্যাব-১১, কুমিল্লা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
উক্ত অভিযোগের সত্যতা যাচাইপূর্বক র্যাব-১১, সিপিসি-২ গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে এবং মাঠ পর্যায়ে ছায়া তদন্ত শুরু করে। গোয়েন্দা সূত্র হতে প্রাপ্ত তথ্য ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় এই ঘটনার মূল আসামী প্রতারক মোঃ সাইফুল ইসলামকে চিহ্নিত করার নিমিত্তে একাধিক টীম মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করে। এরই ভিত্তিতে গত ২৯ নভেম্বর রাতে কুমিল্লা সদরের ধনপুর এলাকা হতে প্রতারক মোঃ সাইফুল ইসলামকে আটক করা হয়। আটককালে তার নিকট হতে একটি ভুয়া কষ্টিপাথরের মূর্তি, একটি ভুয়া ধাতব মুদ্রা, ও একটি ভুয়া রাডার ম্যাগনেট উদ্ধার করা হয়।
আটক হওয়া আসামীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, সে এবং তার দলের সদস্যরা এসব ভুয়া কষ্টিপাথরের মূর্তি, ধাতবমুদ্রা ও ম্যাগনেট রাডার বিক্রির জন্য সর্বদা সাধারণ মানুষকে টার্গেট করে থাকে। এসব ভুয়া কষ্টিপাথরের মূর্তি, ধাতবমুদ্রা ও ম্যাগনেট রাডার সম্পর্কে মানুষের মনে অন্ধ বিশ্বাস সৃষ্টি করিয়েই মূলত তারা তাদের স্বার্থ হাসিল করে থাকে। এই প্রক্রিয়া অবলম্বন করে ইতিমধ্যে তারা কয়েকজনের নিকট হতে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানায়।
এ ঘটনায় কোতয়ালী মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
র্যাব-১১, সিপিসি-২ এর কোম্পানী অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।