কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনের ফল নিয়ে ‘ভিন্ন কিছু’ হয়নি বলে দাবি করেছেন রিটার্নিং অফিসার শাহেদুন্নবী চৌধুরী। দুপক্ষের গোলযোগ, বৃষ্টি ও বিদ্যুৎ না থাকার কারণে ফল ঘোষণায় কিছুটা দেরি হয়েছে বলে জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের রিটার্নিং অফিসার এ কথা বলেন।
আধা ঘণ্টার বেশি কেন ভোটের ফল ঘোষণা স্থগিত ছিল? সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটির পেছনে অন্য কোনো কারণ ছিল না। পরিস্থিতি প্রতিকূলে ছিল বিধায় সময় লেগেছে। দুপক্ষই অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছিল।
ওই সময় বারবার কার সঙ্গে টেলিফোনে কথা হচ্ছিল? এমন প্রশ্নের জবাবে শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেন, তখনকার পরিস্থিতি সম্পর্কে আমি ফোনে কথা বলছিলাম সিইসি, ডিসি ও এসপির সঙ্গে। অন্য কারোর ফোন আসেনি।
স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, পরাজিত প্রার্থী চাইলে আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। তবে নতুন করে ফল দেওয়া সম্ভব নয়। ফল ঘোষণার সময় তারা কেন অভিযোগ জানাননি। কারণ তাদের হাতে তো রেজাল্ট শিট ছিল। উনার কাছে যদি ডকুমেন্টস থাকে। আইনি পথে যেতে পারেন।
মনিরুল হক সাক্কুকে ফোন দিয়ে আনা হয়েছিল কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে রিটার্নিং অফিসার বলেন, সাক্কুকে আমি ফোন দিয়ে আনিনি, উনি এটা বললে অসত্য বলেছেন।
বুধবার শেষ মুহূর্তে নানা নাটকীয়তার পর কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে নতুন নগরপিতা পায় আওয়ামী লীগ। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে মাত্র ৩৪৩ ভোটে জয় পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রিফাত।
বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণ থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা বেসরকারিভাবে এ ফল ঘোষণা করেন। চূড়ান্ত ফলে আরফানুল হক রিফাত নৌকা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৫০ হাজার ৩১০ ভোট।
তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী (বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত) মনিরুল হক সাক্কু টেবিল ঘড়ি প্রতীকে ৪৯ হাজার ৯৬৭ ভোট পেয়েছেন। বিএনপির বহিষ্কৃত আরেক নেতা নিজাম উদ্দিন কায়সার ঘোড়া প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২৯ হাজার ৯৯ ভোট।
এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রাশেদুল ইসলাম (হাত পাখা) ৩ হাজার ৪০ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কুমিল্লা নাগরিক ফোরামের সভাপতি কামরুল আহসান বাবুল (হরিণ) ২ হাজার ৩২৯ ভোট পেয়েছেন। এবারের নির্বাচনে ৫৯ শতাংশ ভোট পড়েছে।
রাতে ফল ঘোষণার শেষ সময়ে সৃষ্ট উত্তেজনা ছাড়া সারা দিন শান্তিপূর্ণভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে শেষ হয় কুসিকের ভোটগ্রহণ।
১০৫ কেন্দ্রের মধ্যে যখন ৯০টির কাছাকাছি ফল ঘোষণা হয়, তখন মনিরুল হক সাক্কুর সমর্থকরা ভোটের ফল ঘোষণার স্থান কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আসতে শুরু করেন। তারা মনিরুল হক সাক্কুর নামে স্লোগান দেন।
এর মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তা ঘোষণা দেন, মেয়র পদে আর অল্প কিছু কেন্দ্রের ফল ঘোষণা বাকি আছে। সেসব কেন্দ্র থেকে ফল আসতে দেরি হচ্ছে। এ সময় তারা কাউন্সিলর প্রার্থীদের ভোটের ফল ঘোষণা করতে চান।
তখন বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন মনিরুল হকের সমর্থকরা। তারা ফল ঘোষণার দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে মনিরুল হক কয়েকজন নেতাকর্মীকে নিয়ে ফল ঘোষণা মঞ্চের সামনে বসে পড়েন।
এর আধাঘণ্টা পর আওয়ামী লীগের একদল নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে সেখানে প্রবেশ করে। তারা ফল ঘোষণা কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
সাক্কুর ওপর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা চড়াও হয়। একপর্যায়ে দুপক্ষের লোকজনের মধ্যে সামান্য হাতাহাতিও হয়। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন।
পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে মনিরুল হক সাক্কু ঘোষণা দেন— আমাকে পাশ বা ফেলের রেজাল্ট দিন। না দিলে আমার লাশ যাবে। এমন পরিস্থিতিতে প্রায় ১ ঘণ্টা ফল ঘোষণা স্থগিত ছিল।
নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর তা প্রত্যাখ্যান করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাক্কু। তিনি আইনি লড়াইয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।