কুমিল্লায় র্যাব-১১ এর সিপিসি-২ পৃথক তিনটি অভিযানে একজন ধর্ষকসহ দুইজন মাদক ব্যবসায়িকে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব জানায়, প্রেমের জালে ফেলে ভূয়া কাবিন নামার মাধ্যমে বিয়ে করে প্রায় ৪ মাস যাবৎ ধর্ষন করার অভিযোগে ১৬ মে রাতে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানার রামপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মোঃ রেজাউল করিম@মাছুম(৩৬), পিতা-আব্দুল বারেক, মাতা-আমেনা বেগম, সাং-আন্দসার, থানা-কোতয়ালী মডেল, জেলা-কুমিল্লাকে গ্রেফতার করে র্যাব ১১ সিপিসি ২ এর সদস্যরা।
গ্রেফতারকৃত আসামীর স্বীকারক্তিতে র্যাব জানায়, গত ০৫/১১/২০২১ইং তারিখে শিল্পি আক্তার(২৬) এর সাথে ধৃত আসামী মোঃ রেজাউল করিম@মাছুম(৩৬) এর মোবাইল ফোনের মাধ্যমে রং নাম্বারের পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে তারা মোবাইল ফোনে কথা বলা শুরু করে। কথা বলতে বলতে তারা একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠতা এবং প্রেমের সম্পর্কে সমপৃক্ততা হয়। একপর্যায়ে তারা একে অপরের সাথে দেখা করার জন্য গত ২৩/১১/২০২১ইং তারিখে কুমিল্লা জেলার কোতয়ালী থানাধীন কোর্টবাড়ী বিশ্বরোড এলাকায় যায়। এ সময় তারা একে অপরকে পছন্দ করে এবং রেজাউল করিম@মাছুম নিজেকে অবিবাহিত বলে দাবী করে শিল্পি আক্তারকে বিয়ে করতে চায়।
উল্লেখ্য শিল্পি আক্তার একটি দরিদ্র পরিবারের মেয়ে বিষয়টি রেজাউল বুঝতে পারে এবং শিল্পি আক্তারকে বিয়ে করে সুখে শান্তিতে রাখার জন্য আশ্বস্ত করে এবং বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে বিয়ের জন্য রাজি করে বিয়ের পরিকল্পনা করে।
রেজাউল শিল্পি আক্তারকে বিয়ে করার জন্য তার পরিবারের সাথে কথা বলে তাদেরকেও বিয়ের জন্য রাজি করে। পরবর্তীতে গত ১৬/১২/২০২১ইং তারিখে রেজাউল শিল্পিকে কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ মডেল থানাধীন পদুয়ার বাজার বিশরোড সংলগ্ন রেল ক্রসিং এর সামনে দেখা করতে বলে এবং শিল্পি সেইখানে আসলে রেজাউল শিল্পকে বিয়ে করার জন্য একশত টাকার স্টাম্পে বিয়ের হলফ নামায় শিল্পিকে স্বাক্ষর করতে বলে। অতঃপর রেজাউলের কথামত শিল্পি স্ট্যাম্পে(বিয়ের হলফ নামা) স্বাক্ষর করলে রেজাউল শিল্পীকে তাদের বিয়ে হয়েছে এখন থেকে তারা স্বামী স্ত্রী বলে জানায়।
পরবর্তীতে তারা যে যার মত নিজ নিজ বাড়ীতে চলে
যায়। গত ০১/০১/২০২২ইং তারিখে রেজাউল শিল্পকে তার ভাড়াবাসা কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানাধীন দৌলতপুর পশ্চিমপাড়া (গ্রীন হাউজ) ফ্লাটে নিয়ে যায়। রেজাউলের ভাড়া বাসায় তারা স্বমী-স্ত্রী হিসেবে গত ০১/০১/২০২২ইং হতে ১৪/০৪/২০২২ইং তারিখ পর্যন্ত বসবাস করে এবং এ সময়ে তাদের মধ্যে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক হয়। এ ৪ মাস রেজাউল বেকার থাকলেও শিল্পি ইপিজেড এলাকায় গার্মেন্টস কর্মীর চাকুরী করে সংসার চালায়। গত ১২/০৪/২০২২ইং তারিখে শিল্পির চাকুরীর কাজে স্বামীর এনআইডি কার্ড চাওয়া হলে শিল্পি রেজাউলের এনআইডি কার্ড দেখে জানতে পারে রেজাউল, তার ঠিকানা মোঃ রেজাউল করিম@মাছুম(৩৬), পিতা-আব্দুল বারেক, মাতা-আমেনা বেগম,সাং-আন্দসার, থানা-কোতয়ালী মডেল, জেলা-কুমিল্লা। তার দেওয়া বিবাহ সম্পর্কিত হলফ নামায় রেজাউলের নাম ও ঠিকানা নাম মোঃ রেজাউল করিম, পিতা-মোঃ ছাদেক উল্লাহ খান, মাতা, রেহানা বেগম, সাং-কটপাড়া, থানা-চৌদ্দগ্রাম, জেলা-কুমিল্লা উল্লেখ করেন,যাহা মিথ্যা। শিল্পী রেজাউলকে পুনরায় ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক বিয়ে করার জন্য চাপ প্রয়োগ করলে রেজাউল তাকে বিভিন্ন হুমকি ধামকি প্রদান করতে থাকে।
এমতাবস্তায়, গত ১৪/০৪/২০২২ইং তারিখে শিল্পি রেজাউলের নিজ বাড়িতে গিয়ে উক্ত ঘটনা রেজাউলের পরিবারকে জানালে শিল্পি জানতে পারে সে তিনটি
বিবাহ করেছে, যার মধ্যে দুইজন স্ত্রী রেজাউলের বাড়িতে রয়েছে এবং একজনকে ইতিমেধ্যে ডিভোর্স দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও রেজাউলের স্ত্রীদের মাধ্যমে শিল্পি জানতে পারে রেজাউল শিল্পির মত আরও অনেক মেয়ের সাথে বিয়ের ভূয়া হলফ নামা করে তাদের সাথেও বিবাহ বর্হিভূত অবৈধভাবে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। পরবর্তীতে শিল্পি নিরুপায় হয়ে তার বাবার বাড়িতে চলে আসে।
শিল্পী তার বাবার বাড়িতে চলে আসার পর থেকে রেজাউল শিল্পিকে প্রায় ফোন করে এবং বলতে থাকে রেজাউলের বাসায় থাকাকালীন শিল্পি ও তার অন্তরঙ্গ মূহুর্তের অনেক গুলো ভিডিও রেজাউল করে রেখেছে। যা সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিবে। উক্ত কথা শুনে শিল্পি কান্নায় ভেঙ্গে পরে এবং রেজাউলের কাছে বিষয়টি থেকে মুক্তির জন্য অনুরোধ করলে রেজাউল শিল্পির কাছ থেকে টাকা দাবী করে। শিল্পি দরিদ্র পরিবারের মেয়ে, সে রেজাউলের চাহিদামত টাকা জোগাড় করতে না পেরে কোন উপায় না পেয়ে ন্যায় বিচার প্রাপ্তির আসায় চলতি মাসের ১৩ মে র্যাব-১১, সিপিসি-২, কুমিল্লায় এসে অভিযোগ দায়ের করে।
রেজাউলকে গ্রেফতারের সময় তার নিকট থেকে জব্দকৃত একাধিক বিয়ের হলফনামা এবং ভূয়া এনআইডি কার্ড জব্দ করা হয়। যেগুলো ব্যবহার করে রেজাউল শিল্পির মত আরও ৬/৭ জন মহিলার সাথে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ভূয়া কাবিন নামা তৈরী করে তাদের সাথে বিবাহ বর্হিভূত অবৈধভাবে শারীরিক সম্পর্ক করেছে বলে স্বীকার করে।
উক্ত বিষয়ে গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে কুমিল্লা জেলার কোতয়ালী মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধীত ২০০৩) এর ৯(১)ধারায় র্যাবের সহযোগীতায় ভিকটিম শিল্পি আক্তার বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের।
এছাড়া অপর একটি অভিযানে ১৫ মে দুপুরে র্যাব-১১, সিপিসি-২ সদস্যরা কুমিল্লা সদরের কুমিল্লা সদরের আমড়াতলী এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে ৬ কেজি গাঁজাসহ একজন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে।
আটককৃত মাদক ব্যবসায়ী হলেন কুমিল্লা সদরের রসুলপুর গ্রামের জাফর আলম এর ছেলে মোঃ রবিউল হাসান শামীম(২৮)।
পৃথক অভিযানে একই দিন সন্ধ্যায় পৃথক অন্য আরেকটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। উক্ত অভিযানে ০৬ কেজি গাঁজাসহ একজন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে।
আটককৃত মাদক ব্যবসায়ী হলেন ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলার আটরশি (বাইশরশি বিশ্বাস বাড়ী) গ্রামের মৃত. কুদ্দুস এর ছেলে মোঃ কাইয়ুম@ কায়েস(৩১)।