শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন রনিল বিক্রমাসিংহে। বৃহস্পতিবার (১২ মে) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাকে শপথবাক্য পাঠ করান লঙ্কান প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। ৭৩ বছর বয়সী অভিজ্ঞ এ রাজনীতিবিদ শ্রীলঙ্কার ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) নেতা।
লঙ্কান সংবাদমাধ্যম ডেইলি মিরর জানিয়েছে, প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবনে শপথ নেন বিক্রমাসিংহে এবং তারপর আশীর্বাদ নিতে ওয়ালুকারমা মন্দিরে যান।
মাহিন্দা রাজাপাকসের পদত্যাগের পর থেকেই জল্পনা-কল্পনা চলছিল, বিপদকালে কে হবেন শ্রীলঙ্কার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী? এর মধ্যেই গত বুধবার গোতাবায়া রাজাপাকসের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন বিক্রমাসিংহে। তারপর থেকেই গুঞ্জন শুরু হয়, আগে পাঁচবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা রনিল বিক্রমাসিংহেই দেশের হাল ধরতে চলেছেন।
সর্বপ্রথম ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বিক্রমাসিংহে। এরপর ২০০১ থেকে ২০০৪ সাল, ২০১৫ থেকে ২০১৫ (১০০ দিন), ২০১৫ থেকে ২০১৮ এবং ২০১৮ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি লঙ্কান প্রধানমন্ত্রীর পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০১৮ সালের অক্টোবরে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা বিক্রমাসিংহেকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত করেন। কিন্তু এর দুই মাস পরেই তাকে আবারও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
১৯৪৯ সালের ২৪ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন রনিল বিক্রমাসিংহে। ১৯৭৭ সালে প্রথমবারের মতো দেশটির সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। সে সময় তিনি সবচেয়ে কম বয়সে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেন। ১৯৯৪ সালের পর থেকে ইউএনপির রাজনীতিতে যুক্ত রনিল বিক্রমাসিংহে।
১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ আর্থিক সংকটে ভুগছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা। দেশটির চারদিকে এখন শুধুই হাহাকার। চলছে জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট। তেল সংগ্রহের জন্য হাজার-হাজার মানুষ লাইনে ভিড় করছে। কাগজের অভাবে স্কুল পর্যায়ের পরীক্ষা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে শ্রীলঙ্কা। কারণ, কাগজ আমদানির মতো বৈদেশিক মুদ্রা তাদের কাছে নেই। বিদেশি ঋণের ভারে আজ জর্জরিত দ্বীপরাষ্ট্রটি। পরিস্থিতি এমন অবস্থায় ঠেকেছে, তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি ব্যয়ও মেটাতে পারছে না। যার ফলে জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছুঁয়েছে।
দেশের অর্থনীতির এমন দুরবস্থার জন্য দায়ী করে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ও তার ভাই প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের পদত্যাগ দাবিতে রাস্তায় নামে লঙ্কান জনগণ। শুরুর দিকে বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ থাকলেও ধীরে ধীরে তা সহিংস হয়ে ওঠে। বিশেষ করে, গত সোমবার বিক্ষোভকারীদের ওপর সরকার সমর্থকদের হামলার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
এক রাতের মধ্যে আগুন দেওয়া হয় মন্ত্রী-এমপিসহ অর্ধশতাধিক নেতার বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে। বিক্ষোভ-সহিংসতায় প্রাণ হারান এক এমপি, আহত হন আরও একজন। হামলার শিকার হয়েছেন সরকারি কর্মকর্তারাও। পরে চাপের মুখে পদত্যাগ করেন লঙ্কান প্রধানমন্ত্রী। তবে প্রেসিডেন্টকেও ক্ষমতা ছাড়তে হবে দাবি করে এখনো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা।