দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির প্রলোভনে টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রতারকচক্রের ১৩ জন সদস্যকে গ্রেফতার করে র্যাব।
দেশের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা ও অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে একটি চক্রের ১৩ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। বুধবার (১৬ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে র্যাব-২-এর একটি দল।
র্যাব জানায়, গ্রেফতাররা রাজধানীর পল্লবীতে অফিস খুলে দেশের বিভিন্ন এলাকার চাকরিপ্রত্যাশীদের টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে নিয়োগের কথা বলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতেন। চক্রটির সদস্য সংখ্যা প্রায় ৪০-৫০ জন। তাদের বড় একটি অংশ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে।
গ্রেফতাররা হলেন- শামীম হোসেন, রেবেকা সুলতানা, মো. ওমর ফারুক, শহিদুল ইসলাম, মো. ইমরান, শরীফুল ইসলাম, আল-আমিন, কাজী হাবিব, মাহাবুবুর রহমান ওরফে সরোয়ার, রুবেল শেখ, আব্দুল মতিন, সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া, রফিকুল ইসলাম খোকা।
গ্রেফতারদের কাছ থেকে তিনটি অফিস আদেশ, তিনটি আবেদন ফরম, বিভিন্ন ব্যাংকের চারটি চেক, তিনটি চেকের ফটোকপি, আটটি খালি ও সই করা স্ট্যাম্প, আট সেট জীবনবৃত্তান্ত, রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহার্য লেখা দুটি খাম, নগদ ৮৪ হাজার ৪০০ টাকা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, বিভিন্ন ব্যক্তির পাসপোর্ট, ই-ভিসার ছবি, ২২টি মোবাইল ফোনসহ প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব-২ অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আবু নাঈম মো. তালাত এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘সংঘবদ্ধ একটি প্রতারকচক্র সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে নিয়োগের বিভিন্ন প্রক্রিয়া যেমন- সাক্ষাৎকার, স্বাস্থ্যপরীক্ষা, নিয়োগপত্র, প্রশিক্ষণ দেওয়া ইত্যাদি সম্পন্ন করে গ্রামের সহজ-সরল চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণসহ র্যাব-২-এ এমন অভিযোগ করেন। চার ভুক্তভোগী এ বিষয়ে পল্লবী থানায় পৃথক চারটি মামলার পর র্যাব-২ গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ায়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়।’
র্যাব জানিয়েছে, চক্রটি মোট তিনটি ধাপে তাদের প্রতারণা চালিয়ে আসছিল। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রতারকচক্রের প্রাথমিক স্তরের সদস্যরা টাকার বিনিময়ে চাকরির আশ্বাস দিয়ে তরুণদের প্রলুব্ধ করতেন। গ্রামের সহজ-সরল চাকরিপ্রত্যাশী তরুণরা প্রতারকচক্রের প্রলোভনে জমিজমা বিক্রি, ধার-কর্জ করে টাকা জোগাড় করে ঢাকায় আসতেন।
ঢাকায় আসার পর প্রতারকচক্রের দ্বিতীয় স্তরের সদস্যরা তাদের দায়িত্ব নিতেন। দ্বিতীয় স্তরের সদস্যরা তরুণদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য বিভিন্ন প্রক্রিয়ার আয়োজন করতেন। এসব প্রক্রিয়া শেষে তাদের নিয়োগপত্রসহ আনুষঙ্গিক নথিপত্র সরবরাহ করা হতো।
বিশেষ কিছু চাকরির ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্তরের কয়েকজন সদস্য সুনির্দিষ্ট কিছু ভূমিকা পালন করতেন। যেমন- সেনাবাহিনীর ‘মেস ওয়েটার’ পদে নিয়োগপ্রাপ্তদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য তাদের একজন নিজেকে সিনিয়র মেস ওয়েটার হিসেবে পরিচয় দিতেন এবং কৌশলে সেনানিবাসের আশপাশে বিভিন্ন এলাকার কমিউনিটি সেন্টারে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করিয়ে তাদের বলতেন প্রশিক্ষণ চলছে।
তৃতীয় স্তরের সদস্যরা বিভিন্ন কার্যক্রমে নিজেদের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে অথবা ক্ষেত্রবিশেষে উচ্চপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তার নিকটাত্মীয় পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগীদের বিশ্বাস জোরদার করতে কাজ করতেন। টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মূল কাজটি করতেন প্রতারকচক্রের প্রথম ও দ্বিতীয় স্তরের সদস্যরা।
ভুক্তভোগীদের বিশ্বাস অর্জনসহ সবস্তরের সঙ্গে সমন্বয় এবং কমিশন বণ্টনের দায়িত্ব পালন করতেন প্রতারকচক্রটির তৃতীয় স্তরের সদস্যরা। তারা ভুয়া বা জাল নিয়োগপত্রসহ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র তৈরি করে প্রয়োজন অনুযায়ী সেগুলো দ্বিতীয় স্তরের সদস্যদের সরবরাহ করতেন। জানি