গত শুক্রবার সন্ধ্যায় দৈনিক সময়ের আলোকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজি এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা: শফিকুল ইসলাম, বিপিএম (বার)। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দৈনিক সময়ের আলোর প্রধান প্রতিবেদক আলমগীর হোসেন। নাগরিক খবরকে পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
সময়ের আলো: করোনা মহামারিতে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের যে মানবিক কর্মকাণ্ড সবাই দেখেছিল সে সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
ডিএমপি কমিশনার : মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই পুলিশকে প্রতিপক্ষ ভাবে। আমরা যে প্রতিপক্ষ না, মানুষের বিপদে-আপদে আমরা যে তাদের পাশে দাঁড়াই, এটা বোঝানো ছিল আমাদের একটি উদ্দেশ্য। সাধারণ মানুষও যেভাবে ইতিবাচকভাবে আমাদের কাজগুলোতে সাড়া দিয়েছে এবং বিভিন্ন ব্যাপারে আমাদের যে সাহায্য-সহায়তা নিয়েছে এতে আমরা খুবই অনুপ্রাণিত হয়েছি। বিশেষ করে আমাদের তৃণমূলে যারা কাজ করেন, থানার ওসি, সাব-ইন্সপেক্টর এরা অনেক উৎসাহিত হয়েছেন। কেননা ভালো কাজ করলে যখন প্রশংসিত হবেন তখন আরও ভালো কাজ করার উৎসাহ তৈরি হয়।
সময়ের আলো: করোনা মোকাবিলা করতে গিয়ে পুলিশ সদস্যরা কতটা আতঙ্কগ্রস্ত ছিলেন?
ডিএমপি কমিশনার : পুলিশ সদস্যরা সবসময়ই ঝুঁকি মাথায় নিয়েই দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কাজ করে থাকেন। খেয়াল করলে দেখবেন, কোভিড-১৯-এর শুরুর দিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যাওয়ার পর ভয়ে অনেকের লাশের দাফন করা হচ্ছিল না। স্বজনরাও লাশের কাছে যাচ্ছিলেন না। এসব গণমাধ্যমেও প্রচার হয়েছে। সেখানে কিন্তু আমাদের পুলিশ সদস্যরা মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে লাশের দাফন বা সৎকার করেছেন।
সময়ের আলো : করোনা মহামারিতে অন্যরকম পুলিশিং দেখা যায়। এর কি বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য ছিল?
ডিএমপি কমিশনার : আমরা দেখতাম, মানুষ সবসময় আমাদের প্রতিপক্ষ ভাবছে। এই প্রতিপক্ষটা যেন না ভাবে। আমরা যে সমাজেরই অংশ, সমাজ থেকেই যে আমরা উঠে এসেছি, সেটা উপলব্ধি করানোর বিষয় ছিল। আমরা মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি, সেটা দেখানোর একটা সুযোগ হয়েছিল করোনার ওই সময়ে। তাই আমরা সর্বোচ্চভাবেই সে কাজগুলো করার চেষ্টা করেছি। মানুষও যেভাবে সাড়া দিয়েছিল তাতে আমরাও খুব উৎসাহিত হয়েছি। পুলিশের প্রতি মানুষের নেতিবাচক ধারণা পাল্টে দেওয়া এবং আমরা যে প্রতিপক্ষ নই সেটাই ছিল লক্ষ্য।
সময়ের আলো : সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে করোনা মোকাবিলা করতে গিয়ে পুলিশকে কতটা বিপদের মুখে পড়তে হয়?
ডিএমপি কমিশনার: বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর প্রতিটি সদস্য অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে করোনা মোকাবিলায় কাজ করছেন। এসব কাজ করতে গিয়ে আমাদের পুলিশ বাহিনীর মোট ১০৬ জন সদস্য প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। এর মধ্যে ডিএমপিতে মারা যান ৩৩ জন। এ ছাড়া ২৭ হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।
সময়ের আলো: পুলিশের মানবিক কর্মকাণ্ডের সেই ধারাবাহিকতা থাকবে কি না?
ডিএমপি কমিশনার: করোনাকালের ওই কাজগুলো (মানবিক কর্মকাণ্ড) ছিল তাৎক্ষণিক একটি প্রতিক্রিয়া ও ব্যবস্থা। স্বাভাবিক পুলিশিংয়ে প্রতিদিনের যে কাজ সেটা কিন্তু করোনাকালেও আমরা চালিয়েছি, এখনও চালিয়ে যাচ্ছি। যেমন- জাতীয় জরুরী সেবা ‘৯৯৯’ – এ যেভাবে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। থানাগুলোতে যেমন মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করেছি অর্থাৎ থানায় গিয়ে সাধারণ মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হন, সহজেই যাতে মামলা করতে পারেন। ছিনতাই ও মাদক প্রতিরোধেও ব্যাপকভাবে কাজ করা হচ্ছে। অনেক অপরাধীকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। অর্থাৎ গতানুগতিক পুলিশিংয়ের যে কাজ সেটা নিয়মিতই করা হচ্ছে। মূল কথা হলো- যার যে কাজ, সে কাজটুকু যদি আমরা ঠিকমতো করতে পারি তাহলেই মানুষ আমাদের প্রশংসা করবে।
সময়ের আলো: সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য সময়ের আলোর পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
ডিএমপি কমিশনার: সময়ে আলোকেও পুলিশের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ।