গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার তারাইল বিল বছরের অধিকাংশ সময় জলমগ্ন থাকে। পৌষ মাসে বিল থেকে পানি নেমে যায়। এরপর কৃষক সেখানে বোরো আবাদ করেন। আবার বর্ষার আগেই ধান কেটে নেন।
কিন্তু গত বর্ষায় ভাঙন প্রতিরোধে পাথুরিয়া খালের মুখে বাঁধ দেওয়ায় নামতে পারেনি তারাইল বিলের পানি। শুষ্ক মৌসুমেও ২ হাজার একর জমিতে পানি জমে আছে। ফলে বোরো ধানের চাষাবাদ করতে পারছেন না কৃষকরা। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ৩ হাজার কৃষক।
কৃষকরা জানান, এ বিলের অধিকাংশ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়। বিলের জমিতে বছরে একটি মাত্র ফসল বোরো ধান ফলে। এ ধান দিয়েই বিলবাসী সারা বছরের খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজন মেটান। এদিকে ধান রোপণের মৌসুম শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই বোরো চাষাবাদ নিয়ে কৃষকের দুশ্চিন্তার শেষ নেই।
তারাইল গ্রামের কৃষক রঞ্জন বাইন (৫৬) বলেন, তারাইল-পাচুড়িয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও সেচ প্রকল্পের ৩নং পোল্ডারের মাধ্যমে শৈলদহ নদী থেকে পাথুরিয়া খাল দিয়ে তারাইল বিলের পানি ওঠানামা করে। বর্ষা মৌসুমে পানির চাপে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও ৩নং পোল্ডার ভাঙনের মুখে পড়ে। পানি উন্নয়ন বোর্ড পাথুরিয়া খালের মুখে বাঁধ দিয়ে ভাঙন প্রতিরোধ করে। বাঁধের কারণে শুষ্ক মৌসুমে বিলের পানি খাল দিয়ে নদীতে নামতে পারছে না। তাই বিলের তারাইল, সোনাখালী, ফুলবাড়ি, চর গোপালপুর গ্রামের ২ হাজার একর জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে ৩ হাজার কৃষক জমিতে চাষাবাদ করতে পারছেন না।
সোনাখালী গ্রামের কৃষক জমির খান (৬০) বলেন, বছরে আমাদের বিল মাত্র একবার জাগে। এরপর সেখানে আমরা ধান চাষাবাদ করি। যা ফলাই তা দিয়ে সারাবছর চলতে হয়। এ বছর জলাবদ্ধতার কারণে চাষাবাদ করতে পারছি না। আমরা দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
তারাইল গ্রামের কৃষক নেপাল মজুমদার (৫৫) বলেন, প্রতি বছর পৌষ মাসের প্রথম সপ্তাহে পানি নেমে যায়। এরপর আমরা ধান রোপণ করি। এ বছর পৌষ মাস চলে গেছে। মাঘ মাসও বিদায়ের পথে। কিন্তু বিলের পানি নামছে না। তাই ধান চাষ নিয়ে আমরা মহা অনিশ্চয়তায় পড়েছি।
তারাইল গ্রামের কৃষক সুকলাল মন্ডল (৫০) বলেন, সরকার দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করলে আমরা ধান রোপণ করতে পারবো। ধান রোপণের ব্যবস্থা করে দিয়ে সরকার আমাদের রক্ষা করবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
কেটালীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নিটুল রায় বলেন, কোটালীপাড়ার বিল এলাকায় অনেক উন্নয়ন কাজ হয়েছে। এসব কাজ করার সময় খাল-নালা ঠিকাদাররা বাঁধ দিয়ে বন্ধ করেছেন। উন্নয়ন কাজ শেষ হওয়ার পর তারা খাল-নালার বাঁধ খুলে দেননি। তাই ধান চাষা মৌসুমে কিছু কিছু জায়গায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। আবার কোথাও সেচ সমস্যা হচ্ছে। প্রকৌশল বিভাগের মাধ্যমে আমরা এগুলো চিহ্নিত করছি। জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, এসিল্যান্ড ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় আমরা খাল ও নালার বাঁধ কেটে দিচ্ছি। এতে দ্রুত কৃষক জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাব।
বাঁধ দেওয়ার বিষয়ে গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফইজুর রহমান বলেন, তারাইল-পাচুড়িয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রক্ষার জন্য ৩নং পোল্ডারের খালের মুখে বাঁধ দেওয়া হয়েছিল। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কৃষকের চাষাবাদের সুবিধার্থে সেচ ও পানি নিষ্কাশনের বিকল্প ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।