ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেডে (ডিবিবিএল) রাখা ওয়ালটন গ্রæপের সাড়ে ছয় কোটি ও ইউনাইটেড গ্রুফের ১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টার অভিযোগে দশ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে এ চক্রের মূল হোতা নিজেই একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। তিনি ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেডেরই কর্মকর্তা। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এই চক্রের ১০ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ডিএমপির গুলশান বিভাগের ডিসি মো. আসাদুজ্জামান এ সব তথ্য জানান।
পুলিশ জানায়, গ্রেফতার ব্যাংক কর্মকর্তার নাম জাকির হোসেন (৩৫)। তিনি ডাচ বাংলার কারওয়ান বাজার শাখায় এসএমই সেলস টিম ম্যানেজার হিসাবে কাজ করছিলেন। গ্রেফতারকৃত অন্যরা হলেনÑ ইয়াসিন আলী (৩৪), মাহবুব ইশতিয়াক ভ‚ইয়া (৩৫), আনিছুর রহমান সোহান (৪২), মো. দুলাল হোসাইন (৩৫), মো. আসলাম (৫৩), আব্দুর রাজ্জাক (৪৮), জাকির হোসেন (৪৪), মো. আনোয়ার হোসেন ভ‚ইয়া (৫৬) ও মো. নজরুল ইসলাম (৫০)।
গুলশান বিভাগের ডিসি মো. আসাদুজ্জামান জানান, ডাচ বাংলা ব্যাংকে চাকরি করার সুবাদে ব্যাংকের সার্ভার থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টের তথ্য সংগ্রহ করতেন জাকির হোসেন। যে সকল ব্যাংক হিসেবে (অ্যাকাউন্টে) টাকার পরিমাণ বেশি থাকতো তাদের ব্যাংক হিসাবের স্বাক্ষর জাল করে আরটিজিএসের মাধ্যমে তহবিল স্থানান্তরের (ট্রান্সফারের) পরিকল্পনা করতেন তিনি।
ডাচ বাংলার বসুন্ধরা শাখায় থাকা ওয়ালটন গ্রæপের অ্যাকাউন্ট থেকে সাড়ে ছয় কোটি টাকা আরটিজিএস ফরমে ট্রান্সফারের একটি আবেদন আসে ২৫ জানুয়ারি সকালে। বিডি লিমিটেড নামে একটি কোম্পানির এবি ব্যাংকের মতিঝিল শাখার অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফারের আবেদনটি করা হয়। আবেদনটি অস্বাভাবিক মনে হয় ডাচ বাংলার বসুন্ধরা শাখার ব্যবস্থাপকের কাছে। তিনি তখন ওয়ালটন গ্রæপের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ওয়ালটনের কর্মকর্তারা ব্যাংকে গিয়ে বিষয়টি যাচাই করেন। সেখানে গিয়ে তারা বুঝতে পারেন এখানে প্রতারক চক্রের হাত রয়েছে। এরপর টাকা ট্রান্সফারের আবেদনটি স্থগিত করা হয়।
তিনি আরো বলেন, আমরা এই প্রতারক চক্রের ১০ জনকে গ্রেফতার করেছি। চক্রটির কার্যক্রম ব্যাংকের ভেতর থেকে শুরু হয়। এর বাইরে চক্রটির সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত থাকতে পারে। আমরা যখন তাদের গ্রেফতার করতে যাই তখন তারা ইউনাইটেড গ্রæপের অ্যাকাউন্ট থেকে ১২ কোটি টাকা ট্রান্সফারের চেষ্টা করছিল। চক্রটি দুই ভাবে কাজ করে। এক অংশ যে গ্রæপ বা ব্যক্তির টাকা তারা ট্রান্সফার করবে সেই নির্দিষ্ট কর্মকর্তার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে। আরেকটি অংশ যেই শাখায় টাকা ট্রান্সফারের আবেদনটি জমা পড়বে, সেই শাখার ব্যবস্থাপককে তাদের পক্ষে আনার জন্য বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে ম্যানেজ করে।
এটিই এই চক্রের প্রথম জালিয়াতি চেষ্টা কি-না সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওয়ালটন গ্রæপের টাকাটা তারা ট্রান্সফার করার চেষ্টা করছিল। এছাড়া গ্রেফতারের আগে এরা ইউনাইটেড গ্রæপের ১২ কোটি টাকা ট্রান্সফারের চেষ্টা করছিল। এর আগে এরা এরকম ট্রান্সফার করেছে কি তা আমরা জানি না। আদালত তাদের রিমান্ডে নেয়ার অনুমতি দিলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদে জানা যাবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এরা মূলত বাংলাদেশের বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মালিক বা গ্রæপের অ্যাকাউন্টকে টার্গেট করে। এমন প্রতিষ্ঠানকে তারা টার্গেট করে যেখান থেকে অ্যামাউন্ট ট্রান্সফার হলে যেন তাড়াতাড়ি না বোঝা যায়। কেননা বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বড় অঙ্কের টাকা থাকে। গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তারা দীর্ঘদিন দিন ধরে ডিবিবিএল’র সার্ভার থেকে তথ্য সংগ্রহ করে টাকা আত্মসাৎ করার পরিকল্পনা করছিল।