প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের চারটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন।
প্রকল্পগুলো হচ্ছে- ‘শাহজালাল বিমান বন্দর সড়কে শহিদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজ সংলগ্ন পথচারী আন্ডারপাস’; ‘সিলেট শহর বাইপাস-গ্যারিসন লিংক ৪ লেন মহাসড়ক’; ‘বালুখালী (কক্সবাজার)-ঘুনধুম (বান্দরবান) সীমান্ত সংযোগ সড়ক’ এবং ‘রাঙ্গামাটি জেলার নারিয়ারচরে চেংগী নদীর ওপর ৫শ’ মিটার দীর্ঘ সেতু’।
তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রকল্প গুলোর সঙ্গে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ এবং ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন বিগ্রেড এই নির্মাণের সাবিক তত্ব¦াবধানে ছিল।
গত ২৯ জুলাই ২০১৯ ইং বিমানবন্দর সড়কে শহিদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজের নিকট মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় ঝরে যায় শিক্ষার্থী আব্দুল করিম রাজিব ও দিয়া খানম মিম এর প্রাণ। তারই প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর তাৎক্ষনিক নির্দেশে সেখানে অত্যাধুনিক আন্ডারপাস নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী রাজিব ও মিম-এর আত্মার মাগফিরাত কামনা করে এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে একটা প্রবণতা আছে, কোন ধরণের দুর্ঘটনা ঘটলেই আগে ড্রাইভারকে ধরে পেটানো হয়। অনেক সময় গণপিটুনি দিয়ে তাকে হত্যাই করা হয়।
তিনি বলেন, সকলের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে কোন ধরণের দুর্ঘটনা ঘটলে দুর্ঘটনাটা কেন, কীভাবে, কার কারনে ঘটলো সেটা যেন বিবেচনা করেন। সেখানে আমি পথচারিদেরকে বলবো ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সকলের জ্ঞান থাকা দরকার। সেটা মেনে চলতে হবে। ট্রাফিক আইন সকলে মেনে চলবেন এবং মোবাইল ফোন কানে নিয়ে সড়কের পাশ দিয়ে, বা রেল লাইনের পাশ দিয়ে চলা বা পার হতে যাবেন না। এটা বন্ধ করতে হবে।
সরকার প্রধান বলেন, দ্বিতীয় কথা হলো যেখানে সেখানে দিয়ে হঠাৎ করে দৌড়ে রাস্তা পার হবেন না। এভাবে রাস্তা পার হতে গেলেই কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটে। কাজেই এ ব্যাপারে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। ফুটপাতে হাঁটলে যেদিক থেকে গাড়ি আসছে তার উল্টো দিকেই হাঁটতে হয়। যাতে সমানে দেখা যায় যে গাড়িটা আসছে। ফুটওভার ব্রীজ এবং আন্ডারপাস বা নির্দিষ্ট স্থান দিয়েই পারাপার হতে হবে। কারণ, একটি যানবাহনে চাইলে অনেক সময় হঠাৎ ব্রেক কষা সম্ভব হয়না, কারণ এটা যান্ত্রিক বিষয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের আমি বলবো রাস্তায় চলাচলের সময় অবশ্যই ট্রাফিক আইন মানতে হবে। আর শিক্ষার ক্ষেত্রেও আমি বলবো আমাদের তরফ থেকে প্রত্যেকটি স্কুল-কলেজে ট্রাফিক রুলস সম্পর্কে থেকে শিক্ষা দেয়া উচিত। প্রত্যেকটি স্কুল, কলেজ এবং বিশ^বিদ্যালয়েও এই ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি বলেন, স্কুল ছুটি এবং শুরুর সময় প্রত্যেকটি স্কুল নিজ উদ্যোগে বিশেষ ট্রাফিকের ব্যবস্থা করবে। ট্রাফিক পুলিশ থাকবে সহযোগিতার জন্য কিন্তু স্কুল কতৃর্পক্ষকে যথাযথভাবে সচেতন হতে হবে এবং তাদেরও লোক রাখতে হবে। যাতে ছেলে-মেয়েরা নিরাপদে রাস্তা পার হতে পারে। কারণ, অনেক সময় অন্যের কথা তারা শুনতে চায়না, কিন্তু যদি স্কুল কতৃর্পক্ষের কেউ থাকে তার কথা ছাত্র-ছাত্রীরা শুনবে। এ ব্যাপারে আমি মনে করি শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রত্যেকটা স্কুলকে নির্দেশ দিতে পারে। একেবারে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা পর্যন্ত।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বলবো এ ব্যাপারে আপনারা উদ্যোগ নিবেন এবং প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এই নির্দেশনা দিবেন। তাহলেই আমাদের সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমবে। এ ছাড়া আমাদের ভারি যানবাহনগুলো বিশেষ করে বাস, ট্রাক, লরি সেগুলোরও যান্ত্রিক কোন ত্রুটি আছে কি-না সেটাও সবসময় পরীক্ষা করতে হবে। এ বিষয়টাও সকলে নজর রাখবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ঘটনা নিছকই দুর্ঘটনা। কাজেই কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না। দোষ কার সেটা পরে দেখা যাবে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে ড্রাইভারকে মারা উচিত নয়।
তিনি উদাহারণ দেন, দুর্ঘটনায় কোন গাড়ির ধাক্কায় পথচারি পড়ে গেলে অনেক সময়তেই সে বেঁচে যেতে পারে। কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটানোর কারণে প্রাণ ভয়ে ভীত হয়ে ড্রাইভার নিজের প্রাণ বাঁচাতে গাড়ি যখন আবার পুনরায় টান দেয় তখন ঐ দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তি চাকার নিচে চলে আসে। তার জীবন চলে যায়। কাজেই কিছু হলেই গাড়ির ড্রাইভারকে ধরে পেটাবেন, আগুন দেবেন, গাড়ি পোড়াবেন এটা কিন্তু ঠিক নয়। কারণ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী আছে তারাই আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টা দেখবেন। কাজেই এ বিষয়ে আমি সবাইকে সজাগ থাকার আহবান জানাচ্ছি।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গণভবন প্রান্তে এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড.এ কে আব্দুল মোমেন, শিক্ষা মন্ত্রী ডা.দীপু মনিসহ ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ প্রকল্প প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন।