ঢাকার শ্যামলীতে বাংলাদেশ গম গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনোয়ার শহীদকে (৭২) ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
সোমবার (১৫ নভেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। পরে র্যাবের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত একজন হত্যাকারী মো. সাইফুল ইসলাম ও অপরজন মূল পরিকল্পনাকারী মো. জাকির হোসেন। এর মধ্যে জাকির ব্যবসা ও জমির দালালির সঙ্গে জাড়িত। দিনাজপুরে তার একটি চালের গোডাউন আছে বলে দাবি করেছে র্যাব।
আর সাইফুল একজন মাদকসেবী। সে জমি, বাড়ি এবং অর্থের লোভে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আনোয়ার শহীদের বাসা মিরপুরের কল্যাণপুর এলাকায়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে তিনি শ্যামলীর হানিফ কাউন্টারে যাওয়ার জন্য শ্যামলীর বোনের বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন। এ সময় হানিফ পরিবহনের বাস কাউন্টারের পাশেই হলিল্যান্ড গলিতে তাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়।’
পরে, পুলিশ গলির একটি বাসার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং ঘটনাস্থল থেকে একটি ছুরি উদ্ধার করেছে। এই ঘটনায় নিহতের পরিবার একটি হত্যা মামলা করেছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাকিরের বরাত দিয়ে র্যাব তাদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, আনোয়ার শহীদ দিনাজপুর শহরে কর্মরত থাকা অবস্থায় তার সঙ্গে পরিচয় হয় যা পরবর্তীতে ঘনিষ্ঠতায় রূপ নেয়। এই সুবাদে শহীদের কাছ হতে বিভিন্ন সময়ে জাকির ১২ লাখ টাকা ধার হিসেবে নেয়। প্রায় এক বছর আগে জাকির তার চালের গোডাউন বন্ধক রেখে ২০ লাখ টাকা লোন পাইয়ে দিতে আনোয়ার শহীদের সহযোগিতা চায়। কিন্তু বিষয়টিতে সহযোগিতা করতে অপারগতা জানান শহীদ। এরপর পাওনা ১২ লাখ টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য জাকিরকে চাপ দিতে থাকেন।
আর টাকা লেনদেন সম্পর্কে আনোয়ার শহীদ ও জাকির ছাড়া কেউ জানত না। ফলে জাকির ছয়-সাত মাস যাবৎ আনোয়ার শহীদকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে। হত্যার তিন মাস আগে আনোয়ার শহীদকে তার পূর্ব পরিচিত ধানের চাতাল শ্রমিক মো. সাইফুলকে দিয়ে পরিকল্পনা করে ঢাকায় হত্যার চেষ্টা করে। কিন্তু সেটি ব্যর্থ হয়।
সাইফুলের বরাত দিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাকিরের গোডাউনে কর্মরত থাকাকালীন বিভিন্ন সময়ে জাকির সাইফুলকে অর্থ দিয়ে সহায়তা করতো। তিন-চার মাস আগে জাকির সাইফুলকে ঢাকায় আসতে বললে সে ঢাকায় আসে। এ সময় সাইফুলকে আর্থিক লোভ দেখিয়ে আনোয়ার শহীদকে হত্যা করতে হবে বলে জানায়। সে সময়ে জাকির সাইফুলকে একটি ছুরিও কিনে দেয়। পরে, কিন্তু ওইসময় পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি এবং পুলিশের উপস্থিতির কারণে তারা ব্যর্থ হয়।
কিন্তু সেখানে থেমে না থেকে হত্যার চেষ্টা চলতে থাকে। পরে, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাকে হত্যা করা হয়।
হত্যার পর জাকির এবং সাইফুল কল্যাণেপুরের একটি আবাসিক হোটেলে এসে পোশাক পরিবর্তন করে দিনাজপুরের উদ্দেশে হোটেল থেকে বের হয়ে যায়। এ সময় দিনাজপুর থেকে একজন ব্যক্তি জাকিরকে ফোন দিয়ে আনোয়ার শহীদ আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন বলে জানায়। পরে জাকির নিজের বাসের টিকিট বাতিল করে সাইফুলকে ৬০০ টাকা দিয়ে দিনাজপুর চলে যেতে বলে এবং হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিজেকে সন্দেহের ঊর্ধ্বে রাখতে সে ভিকটিমকে দেখার জন্য সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে যায়। এরপর দিনাজপুরে চলে যায়।
বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন শুরু হলে জাকির ও সাইফুল দিনাজপুর ত্যাগ করে বিভিন্ন স্থান পরিবর্তন করে পালিয়ে থাকে। পরবর্তীতে তাদেরকে রাজধানীর গাবতলী এলাকা হতে গ্রেপ্তার করা হয়।সুত্র:সস