ইসলামে জানাজার নামাজের গুরুত্ব অনেক বেশি অথচ সমাজের অনেক মুসলমানই এ নামাজে অংশগ্রহণের ব্যাপারে অবহেলা করে। জানাজার নামাজ ফরজে কেফায়া বিধায় অনেকেই এ নামাজকে গুরুত্ব দেয় না। কোনো মুমিনের জন্য জানাজার নামাজকে এ দৃষ্টিতে দেখা উচিত নয়। বরং জানাজার নামাজকে গুরুত্ব দিয়ে তাতে থাকা সাওয়াব ও বরকতের পাওয়ার পাশাপাশি আল্লাহর খুশির বিষয়টি বিবেচনা করা খুবই জরুরি।
জানাজার নামাজ মূলত মৃত ও জীবিত উপস্থিত-অনুপস্থিত সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ দোয়া। হাদিসের অনেক বর্ণনায় জানাজার নামাজে মৃতের জন্য বেশি বেশি দোয়া করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
إذا صليتم على الميت فأخلصوا له الدعاء
’যখন তোমরা মৃতের উপর (জানাজার) নামাজ আদায় করবে তখন তার জন্য আন্তরিকতার সঙ্গে দোয়া করবে।’ (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)
মুসলিম মৃতব্যক্তির কাফন, জানাজা ও দাফন জীবিতদের উপর আবশ্যক পালনীয় নির্দেশ। কোনো মুসলিম মারা গেলে তার জানাজার নামাজ আদায় করা ফরজে কেফায়া। ইসলামে জানাজার নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে পাকে বিশেষ দিকনির্দেশনা এসেছে।
জানাজার নামাজে আছে অকল্পনীয় সাওয়াব ও বরকত। জানাজার নামাজে অংশগ্রহণের বিশেষ সাওয়াব থাকার কারণ হলো- জানাজার ইবাদতটি সৃষ্টির সেবা কেন্দ্রিক। আল্লাহ তাআলা এ সেবার কারণে সবচেয়ে বেশি খুশি হন এবং বান্দার জন্য এর বরকত বাড়িয়ে দেন। এক হাদিসে এসেছে-
১. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
من تبع جنازة فصلى عليها فله قيراط فإن شهد دفنها فله قيراطان القيراط أعظم من أحد
‘কেউ যদি কারো জানাজার যায় এবং নামাজে অংশগ্রহণ করে তবে সে এক ’কিরাত’ সাওয়াব অর্জন করবে। আর যদি সে তার দাফনে (কবরস্থ করায়) উপস্থিত থাকে তাহলে সে দুই ‘কিরাত’ সাওয়াব অর্জন করবে। এক ‘কিরাত’ ওহুদ পাহাড়ের চেয়েও বড়।’ (মুসনাদে আহমাদ, মুসতাদরাকে হাকেম)
২. অন্য বর্ণনায় হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন বলেন-
مَنْ أَصْبَحَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ صَائِمًا ؟ ، قَالَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ : أَنَا ، قَالَ : فَمَنْ تَبِعَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ جَنَازَةً ؟ ، قَالَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ : أَنَا ، قَالَ : فَمَنْ أَطْعَمَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ مِسْكِينًا ؟ ، قَالَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ : أَنَا ، قَالَ : فَمَنْ عَادَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ مَرِيضًا ؟ ، قَالَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ : أَنَا ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : مَا اجْتَمَعْنَ فِي امْرِئٍ إِلَّا دَخَلَ الْجَنَّةَ
‘তোমাদের মধ্যে আজ কে রোজা ছিলে? আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘আমি’। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রশ্ন করেন, ‘তোমাদের মধ্যে কে আজ কোনো জানাজায় শরিক হয়েছ? হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘আমি’। তিনি প্রশ্ন করেন, ‘তোমাদের মধ্যে কে আজ দরিদ্রকে খাদ্য দিয়েছ? হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘আমি’। তিনি আবারও প্রশ্ন করেন, ‘আজ কে অসুস্থ কোনো মানুষকে দেখতে গিয়েছ? হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘আমি’।
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এই কাজগুলো যদি কোনো মানুষের মধ্যে একত্রিত হয় তবে সে ব্যক্তি অবশ্যই জান্নাতি হবে।’ (মুসলিম)
এ কারণেই ইসলামি শরিয়তে কাফন, জানাজা ও দাফন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আর জীবিত মুসলমানরা আবশ্যক ইবাদত মনে করে তা পালন করে। ইসলামের নির্দেশনাও এটি।
তাই ফরজে কেফায়া মনে করে অবহেলা বশতঃ জানাজার নামাজ থেকে বিরত থাকার কোনো সুযোগ নেই। কেননা জানাজার নামাজে রয়েছে অনেক বেশি সাওয়াব ও বরকতের হাতছানি। যা একজন মানুষকে জানাজায় অংশগ্রহণ করার কারণে জান্নাতি মানুষের পরিণত করে দেয়। মুমিন মুসলমানের জন্য এরচেয়ে বড় সৌভাগ্যের বিষয় আর কি হতে পারে!
জানাজার নামাজ আদায়ের নিয়ম:
জানাজার নামাজ সেজদাবিহীন ৪ তাকবির ও সালামের মাধ্যমে আদায় করতে হয়। এ নামাজের কোনো আজান ও ইকামত নেই। এ নামাজে ইমাম ও মুক্তাদি সবাই তাকবির ও সালামগুলো মুখে উচ্চরণ করবে।
১. নিয়ত করা : উপস্থিত মৃতব্যক্তির (নারী/পুরুষ/শিশু) জানাজার ফরজে কেফায়া নামাজ ৪ তাকবিরের সঙ্গে এ ইমামের পেছনে পড়ছি- ‘আল্লাহু আকবার’।
২. জানাজার নামাজের প্রথম তাকবির তাকবিরে তাহরিমা’র মতো উভয় হাত বাঁধবে।
৩. তারপর দ্বিতীয় তাকবিরের আগে ছানা পড়বে। অনেকে সুরা ফাতিহাও পড়ে থাকেন। তারপর ইমাম দ্বিতীয় তাকবির বলবে; মুসল্লিরাও তাকবির বলবে।
৪. দ্বিতীয় তাকবিরের পর তৃতীয় তাকবিরের আগে দরূদ শরিফ (দরূদে ইবরাহিম) পড়বে। তা না পারলে ছোট কিংবা বড় যে কোনো দরূদ শরিফ পড়লেও হবে।