ভাটারার ছোলমাইদ ঢালীবাড়ী এলাকায় পাওয়া বস্তা ভর্তি লাশের মূল খুনিকে গ্রেফতারসহ হত্যার রহস্য উন্মোচন করলো ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপির) গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ। গ্রেফতারকৃত হত্যাকাণ্ডের মুলহোতার নাম আব্দুল জব্বার।
গত ১০ অক্টোবর, ২০২১ তারিখ বিকাল সাড়ে চারটায় ভাটারার ছোলমাইদ ঢালী বাড়ি এলাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালগামী রোডের পাশে বস্তাবন্দি অবস্থায় একটি মৃতদেহ পাওয়া যায়। পরবর্তী সময়ে জানা যায় ঐ মৃতদেহের নাম শিপন আক্তার (৩৪)। অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা ঐ নারীকে হত্যা করে হত্যার দায় হতে নিজেদেরকে আড়াল করতে হত্যার পর লাশ বস্তায় ভরে ঐ স্থানে ফেলে যায়।
ডিবি গুলশান বিভাগ সূত্রে জানানো হয়, অজ্ঞাতনামা ক্লুলেস এ হত্যাকান্ডের পর ভাটারা থানার পাশাপাশি ডিবি গুলশান বিভাগ ছায়া তদন্ত শুরু করে। বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ ও অপরাধ সংশ্লিষ্ট এলাকার সিসি টিভির ফুটেজ পর্যালোচনার মাধ্যমে খুনিদেরকে সনাক্ত ও ঘটনার রহস্য উৎঘাটনে সচেষ্ট থাকে। অবশেষে আশার আলো দেখা যায়। এক পর্যায়ে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয় হত্যাকান্ডের মূলহোতা আব্দুল জব্বারকে।
গ্রেফতারকৃত জব্বার জানিয়েছে হত্যাকান্ডের শিকার শিপন আক্তার একজন গার্মেন্টস কর্মী। মাঝেসাজে টাকার বিনিময়ে পরিচিত জনদের সাথে সময় কাটায় সে। গত ৮ অক্টোবর, ২০২১ তারিখ জুম্মার নামাজের পরে মোবাইল ফোনে পূর্ব পরিচিত জব্বারের সাথে সময় কাটানোর জন্য বের হয় সে। গাড়ির গ্যারেজের কর্মী জব্বার এই শিপন আক্তারকে নিয়ে যমুনা ফিউচার পার্ক এবং ফুটপাতের ফুসকার দোকানে ঘোরাঘুরি শেষে সন্ধার পরে ছোলমাইদ ঢালীবাড়ীর ভাড়া বাসায় আনে। ইতোপূর্বে জব্বার তার স্ত্রী এবং সন্তানকে শ্বশুরবাড়ী চাঁদপুর পাঠিয়ে দিয়েছিল। গ্রেফতারকৃত আঃ জব্বার তার বাসায় ঐ নারীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক শেষ করলে ঐ নারী টাকা দাবি করে এবং চলে যেতে চায় । তখন আঃ জব্বার ভিকটিম নারীকে সারা রাতের জন্য রাখতে চাইলে ঐ নারী আঃ জব্বারের কথায় ক্ষিপ্ত হয় এবং আঃ জব্বারের সব কর্মকাণ্ড জনসম্মুখে ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি প্রদান করে এবং চিৎকার করতে থাকে । এতে আঃ জব্বার আত্মসম্মান রক্ষার ভয়ে শিপন আক্তারকে রাত অনুমান ১০ টার দিকে গলা টিপে হত্যা করে।
ইয়াবা আসক্ত জব্বার তারপর ভিকটিম শিপন আক্তারের মোবাইলটি নিয়ে ১ জনের কাছে ১০০০ টাকায় বিক্রি করে এবং বিক্রয়লব্ধ টাকা দিয়ে তিনটি ইয়াবা ক্রয় করে বন্ধু হীরাকেসহ বাসায় চলে আসে। হীরার সাথে ইয়াবা খাওয়া শেষে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে দুজনে লাশটিকে প্রথমে একটি কার্টুনের মধ্যে ভরে এবং পরবর্তীতে ভাঙ্গারীর দোকান থেকে আনা বড় বস্তা ভর্তি করে। রাত তিনটার দিকে জব্বার বন্ধু হীরার সহায়তায় মাথায় করে লাশকে তিনতলা থেকে নামায় এবং পরবর্তীতে ১০০ টাকার ভাড়া রিকশায় করে লাশটিকে রাস্তার পাশে ফেলে দেয়।
গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিম খুনীর স্বীকারোক্তি মতে চুরি হওয়া মোবাইল, ভিকটিমের ফেলে দেয়া বোরকা এবং স্যান্ডেলসহ হত্যাকাণ্ডের অন্যান্য আলামত উদ্ধার করেছে। গ্রেফতারকৃত জব্বার ইতোমধ্যে বিজ্ঞ আদালতে সমস্ত ঘটনার বর্ণনা দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।