পাকিস্তানের প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ড. আব্দুল কাদির খানের মৃত্যুতে দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাকে পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচির জনক বলা হয়। দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের জটিলতায় ভুগছিলেন এই বিজ্ঞানী। গত রোববার (১০ অক্টোবর) সকালে ইসলামাবাদের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
বিশ্বের প্রথম মুসলিম দেশ হিসেবে পাকিস্তানের পরমাণু বোমার অধিকারী হওয়ার পেছনে বড় কৃতিত্ব ছিল বিজ্ঞানী কাদির খানের। তবে বিদেশে পরমাণু বোমার গোপন তথ্য পাচারের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তিনি পাকিস্তানে এতটা জনপ্রিয় হলেও পশ্চিমাদের কাছে খলনায়ক হিসেবেই পরিচিত।
রাজধানী ইসলামাবাদে মারা যাওয়ার আগে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ৮৫ বছর বয়সী এই বিজ্ঞানী। করোনা শনাক্ত হওয়ার পর গত ২৬ আগস্ট তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। এরপর স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি হলে তাকে কাহুটা রিসার্চ ল্যাবরেটরি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সুস্থ হয়ে তিনি বাড়ি ফিরেছিলেন। কিন্তু গত রোববার তাকে ফের হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
পারমাণবিক ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে প্রতিবেশী ভারতের সমান করে তোলার জন্য এবং দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্ভেদ্য করে তোলায় তাকে জাতীয় বীর হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু ইরান, লিবিয়া এবং উত্তর কোরিয়ার কাছে অবৈধভাবে পারমাণবিক প্রযুক্তি পাচারের অভিযোগে তাকে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এসব কারণেই পশ্চিমাদের ক্ষোভের কারণে পরিণত হন তিনি। বিশেষ করে যারা পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্বকে সমর্থন করেন আব্দুল কাদির খান তাদের কাছে ব্যাপক সমালোচনার শিকার হয়েছেন।
অন্যদিকে পশ্চিমাদের অভিযোগ, উত্তর কোরিয়ার মতো দেশগুলোতে পারমাণবিক প্রযুক্তি পাচার করে বিপজ্জনক পথে এগিয়েছেন তিনি। এতে এসব দেশ পরমাণু কর্মসূচিতে আরও এগিয়ে গেছে।
ওই তিন দেশের সঙ্গে পারমাণবিক প্রযুক্তি নেটওয়ার্ক পরিচালনার কথা স্বীকার করার পর কাদির খানকে ২০০৪ সালে ইসলামাবাদে কার্যত গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল। ২০০৬ সালে মূত্রথলির ক্যানসারে আক্রান্ত হন তিনি। পরে অপারেশনের পর সুস্থও হন। ২০০৯ সালে গৃহবন্দি অবস্থা থেকে মুক্তি পান তিনি। কিন্তু তার গতিবিধি কঠোরভাবে সুরক্ষিত ছিল এবং তিনি বাড়ি থেকে বের হলে তাকে নজরদারির মধ্যেই থাকতে হতো।
ড. আব্দুল কাদির খান ১৯৩৬ সালের ২৭ এপ্রিল অবিভক্ত ভারতের ভোপালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় সপরিবারে পাকিস্তানে চলে যান।
তিনি পড়াশোনা করেছেন করাচিতে। পরে উচ্চশিক্ষার জন্য ইউরোপে যান। সেখানে ১৫ বছরের প্রবাস জীবনে টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্ট বার্লিন, নেদারল্যান্ডসের ইউনিভার্সিটি অব ডেলফ্ট এবং বেলজিয়ামের ইউনিভার্সিটি অব ল্যুভেনে পড়াশোনা করেন কাদির খান।
১৯৭৪ সালে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি নিয়ে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর সঙ্গে যোগাযোগ হওয়ার পর ১৯৭৬ সালে স্বদেশে ফেরেন ড. কাদির। ফিরেই ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ল্যাবরেটরিজ স্থাপন করেন, যা ১৯৮১ সালে সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউল হক ড. একিউ খান রিসার্চ ল্যাবরেটরিজ নামকরণ করেন। পাকিস্তানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচিতে এই ল্যাবরেটরি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
তার বিরুদ্ধে ডাচ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরির অভিযোগ আনা হয়েছিল। পরে নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য ও জার্মানির অধ্যাপকদের সুপারিশে নতুন করে তদন্তের পর সেই অভিযোগ থেকে মুক্তি পান ড. কাদির খান।