হাইকোর্টের রায়ের পর যাত্রাবাড়ীতে গ্রিনলাইন পরিবহনের বাসচাপায় পা হারানো প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে চার কিস্তিতে ২০ লাখ দিয়েছে গ্রিনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষ।
রাসেলের পারিবারিক সূত্র জানায়, হাইকোর্টের রায়ের পর ক্ষতিপূরণ হিসেবে চার কিস্তিতে ২০ লাখ দিয়েছে গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষ। রায়ের আগে উচ্চ আদালতের আদেশের পর রাসেলকে দুই দফায় ১০ লাখ টাকা এবং তার চিকিৎসাবাবদ ৩ লাখ ৪২ হাজার টাকা দিয়েছিল গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষ। সব মিলিয়ে ৩৩ লাখ ৪২ হাজার টাকা পেয়েছেন রাসেল।
এর আগে, ২০২০ সালের ১ অক্টোবর গ্রিনলাইন পরিবহনের বাসের চাপায় পা হারানো গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর রাসেল সরকারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে আরও ২০ লাখ টাকা সংশ্লিষ্ট বাস কোম্পানিকে তিন মাসের মধ্যে দিতে নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট।
বাকি টাকা কিস্তিতে দেওয়ার আদেশ থাকলেও তা স্থগিত করে দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এর পরে আপিল বিভাগের নির্দেশনার আলোকে চূড়ান্ত রুল নিষ্পত্তি করে ২০ লাখ টাকা দিলে সব মিলিয়ে রাসেল পাওয়ার কথা ৩৩ লাখ ৪২ হাজার টাকা। তারই আলোকে এ অর্থ পরিশোধ করলো গ্রিনলাইন।
২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল মেয়র মো. হানিফ ফ্লাইওভারে গ্রিনলাইন পরিবহনের ধাক্কায় প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারের (২৩) বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ ঘটনায় গাইবান্ধার একই এলাকার বাসিন্দা জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সরকার দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি হাইকোর্টে রিট করেন।
হাইকোর্ট ওই বছরের ১৪ মে এ বিষয়ে রুল জারি করেন। রুলে কেন রাসেলকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। পরে আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট এক আদেশে রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দেন। প্রতিমাসে পাঁচ লাখ টাকা করে দিতে বলা হয়। এ নির্দেশের পর রাসেলকে দুই দফায় ১০ লাখ টাকা এবং তার চিকিৎসাবাবদ ৩ লাখ ৪২ হাজার টাকা দিয়েছিল গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষ।
গত ১২ মার্চ হাইকোর্ট এক আদেশে দুই সপ্তাহের মধ্যে রাসেলকে ৫০ লাখ টাকা দিতে গ্রিনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে প্রয়োজন হলে তার পায়ে অস্ত্রোপচার এবং কাটা যাওয়া বাম পায়ে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃত্রিম পা লাগানোর খরচ দিতে পরিবহন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এর অগ্রগতি হলফনামা আকারে ৩১ মার্চের মধ্যে আদালতে দাখিল করতেও বলা হয়। তবে হাইকোর্টের ১২ মার্চের আদেশের বিরুদ্ধে গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষ আপিল বিভাগ আবেদন করে, যা ৩১ মার্চ খারিজ হয়। ফলে হাইকোর্টের আদেশ বহাল থাকে।
এরপর ২০২০ সালের ১ অক্টোবর হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে পা হারানো রাসেল সরকারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে আরও ২০ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেন। তিন মাসের মধ্যে এ টাকা দিতে বলা হয়েছে।
আইনজীবীরা বলেন, এ রায় নিয়ে গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষ আর আপিল করবে না বলে আইনজীবীর মাধ্যমে জানিয়েছে। তাই সর্বসম্মত জাজমেন্ট দিয়েছেন আদালত।