মাদকের ছোবলে অনেকের জীবন ধ্বংস হয়ে যায়। চেনা-জানা মানুষগুলো দূরে সরে যায়। তবে এই মানুষগুলোও কারও না কারও স্বজন। পরিবারের সদস্যরা তাদের ছুড়ে ফেলতে পারে না। অনেকেই প্রিয় মানুষটির চিকিৎসার জন্য ছোটেন মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে। মাদকমুক্ত সমাজ গড়ার প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে পুলিশও এগিয়ে এসেছে মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসায়।
পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের পরিচালনায় ওয়েসিস মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র নামে একটি আধুনিক মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে রাজধানীর কেরানীগঞ্জে। আগামী ১ অক্টোবর থেকে এখানে রোগী ভর্তি শুরু হবে। শুধু তা–ই নয়, মানিকগঞ্জেও নির্মাণ করা হবে একই মানের ৩০০ শয্যার হাসপাতাল।
কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদে রিভারভিউ আবাসিক এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রটি। ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার)-এর প্রচেষ্টায় দক্ষ কর্মী বাহিনী ও টেকনিশিয়ান এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে এই কেন্দ্র। এখানে তুলনামূলক কম খরচে বিশ্বমানের চিকিৎসা পাওয়া যাবে। কেন্দ্রটি চলবে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমানের তত্ত্বাবধানে। এর পরিচালকের দায়িত্ব পালন করবেন পুলিশ সুপার (এসপি) ডা. এস এম শহীদুল ইসলাম।
দৈনিক ইত্তেফাকের অনলাইনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, সরকারি ও বেসরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে মাদকাসক্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৮০ লাখ। তবে মাদকাসক্তদের সরকারিভাবে চিকিৎসা ব্যবস্থা সীমিত। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অধীনে তেজগাঁও মাদক নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে একটি। এর শয্যাসংখ্যা ১২৪টি। পাবনায় মানসিক হাসপাতালে মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় শয্যা আছে ২৫টি। শ্যামলীর মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে শয্যা আছে ২০০টি। এগুলোর মধ্যে মাদকাসক্তদের জন্য বরাদ্দ ৫০টি শয্যা। সব মিলিয়ে মোট শয্যা ২৪৯টি।
ওয়েসিস মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের পরিচালক পুলিশ সুপার ড. শহীদুল ইসলাম পুলিশ নিউজকে বলেন, এই মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে অত্যাধুনিক ব্যবস্থা আছে। তবে এখানে খরচ পড়বে তুলনামূলক প্রায় অর্ধেক। তিনি বলেন, ‘এই মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র অন্য মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রগুলোর মতোই সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। এখানকার ভর্তি প্রক্রিয়া অন্য কেন্দ্রগুলোর ভর্তি প্রক্রিয়াগুলোর মতোই। অভিভাবক জানানোর পর হয় রোগী নিজে এসে ভর্তি হবে, না হলে আমাদের দল গিয়ে রোগীকে এখানে আনবে। সেবাপ্রত্যাশীরা এই কেন্দ্রের হটলাইন নম্বরে সহজেই যোগাযোগ করতে পারবেন।’
কেরানীগঞ্জে সাততলার নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রটিতে প্রতিটি ফ্লোরে রয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষও রয়েছে এখানে। রয়েছে নারী-পুরুষের জন্য আলাদা ব্যবস্থা। এখানে অত্যাধুনিক ডোপ টেস্ট মেশিন ‘গ্যাস প্রমোটো গ্রাফি’ রয়েছে। আধুনিক এই মেশিনে মাদক গ্রহণের পর ১২০ দিনের মধ্যে পরীক্ষা করলেই ধরা পড়বে। এই কেন্দ্রে রয়েছে ব্যায়াম করার অত্যাধুনিক সব যন্ত্রপাতি। ভবনের ওপরে ছাদের একাংশে ফুলের বাগান, অন্য পাশে ব্যায়ামাগার। এই কেন্দ্রে রয়েছে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা। আকুপাংচার চিকিৎসা ও মেডিটেশনের ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে।
মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রটি প্রসঙ্গে আইজিপি বেনজীর আহমেদ বলেন, মাদকাসক্তদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যেই ওয়েসিস মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মানিকগঞ্জেও বিশ্বমানের অত্যাধুনিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হবে।