নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের উল্লাস করেছে বাংলাদেশ। তবে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জেতার আনন্দ কখনও করতে পারেনি। এবার সেই আক্ষেপও জুড়ালো মাহমুদউল্লাহরা। তৃতীয় টি-টোয়েন্টি হেরে যে ধাক্কা লেগেছিল, সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে গতকাল সিরিজ জয়ের উল্লাসে মাতলো লাল-সবুজ জার্সিধারীরা।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের চতুর্থ টি-টোয়েন্টি ৬ উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ। যদিও নিউজিল্যান্ডের ৯৩ রানের সংগ্রহটাই কঠিন হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশের জন্য! শেষ ওভারে গিয়ে জয় নিশ্চিত করে ৪ উইকেট হারিয়ে। তাতে এক ম্যাচ আগে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ ৩-১ ব্যবধানে জিতে নিলো স্বাগতিকরা। এনিয়ে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ সিরিজ জিতল নয়টি। সেই তালিকায় আছে পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আয়ারল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে, অস্ট্রেলিয়ার মতো দল। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হল নিউজিল্যান্ডও।
কিছুদিন আগে জিম্বাবুয়ে সফরে গিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে ফিরেই ইতিহাস রচনা করে টাইগাররা। প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জয়ের স্বাদ পায় টাইগাররা। ৪-১ ব্যবধানে উড়িয়ে দেয় অজিদের। গতকাল সেই ইতিহাস আর একটু সমৃদ্ধ হলো। কিউইদের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের পাঁচ ম্যাচের এই সিরিজ শুরু হয় গত ১ সেপ্টেম্বর। প্রথম দুই ম্যাচে দাপট দেখিয়ে জেতে স্বাগতিকরা। সিরিজের তৃতীয় ম্যাচ জিতলে ইতিহাস লেখা হতো সেদিনই, তবে অপেক্ষা বাড়লেও আক্ষেপে পুড়তে হয়নি স্বাগতিকদের।
গতকাল টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশি বোলারদের বোলিং তোপে একেবারেই সুবিধা করেত পারেনি নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা। মাত্র ৯৩ রানেই গুঁটিয়ে যায় তাদের ইনিংস। সর্বোচ্চ ৪৮ বলে ৪৬ রানের লড়াকু ইনিংস আসে ইয়াংয়ের ব্যাট থেকে। নাসুমের ৪ উইকেটের পাশাপাশি এ ম্যাচে পেসার মুস্তাফিজুর রহমানও নেন সমান ৪ উইকেট। ৩ ওভার ৩ বল থেকে তিনি খরচ করেন ১২ রান।
জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুটাও ছিল বেশ নড়বড়ে। প্রথম দুই ওভার থেকে স্কোর বোর্ডে ৪ রান তুলতে পারেন দুই ওপেনার লিটন দাস ও নাঈম শেখ।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে জোড়া আঘাত হানেন এজাজ প্যাটেল। শুরুতে তার শিকারে পরিণত হন সাকিব আল হাসান। ৮ বলে ৮ রান করে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়েন তিনি। দুই বল বাদে বোল্ড হয়ে সাজঘরের পথ ধরেন মুশফিকুর রহিম। রানের খাতা খুলতে পারেননি এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
৬ ওভার শেষে ৩২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে খানিক বিপদে পড়ে বাংলাদেশ দল। সেখান থেকে দলকে বিপদমুক্ত করেন ওপেনার নাঈম ও অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। চতুর্থ উইকেটে দুজনের জুটি থেকে আসে ৩৪ রান। ঝুঁকি নিয়ে ২ রান নিতে গেলে রান আউটে কাটা পড়ে ফেরেন ৩৫ বলে ২৯ রানের ইনিংস খেলে।
এরপর আফিফ হোসেন যখন উইকেটে এলেন, তখন জয়ের জন্য বাংলাদেশ দলের প্রয়োজন ছিল ৩৩ বলে ২৪ রান। বাকি আনুষ্ঠানিকতা সারতে একেবারে ঝুঁকি নেননি মাহমুদউল্লাহ ও আফিফ। দুজনের অবিচ্ছেদ্য জুটিতে ইতিহাস লেখে বাংলাদেশ। এতে ৬ উইকেট ও ৫ বল হাতে রেখে জয় পায় বাংলাদেশ দল। সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া মাহমুদউল্লাহ ৪৮ বলে ৪৩ রানে অপরাজিত থাকেন। আফিফের ব্যাট থেকে আসে ৬ রান।
অসাধারণ বোলিংয়ে কিউইদের ব্যাটিং লাইনআপ ভেঙে দেয়া নাসুম হয়েছেন ম্যাচসেরা। তার স্পেলটা ছিল এরকম-৪-২-১০-৪। এমন পারফরম্যান্সের পর ম্যাচসেরার পুরস্কার তার হাতেই মানায়। আগামীকাল একই ভেন্যুতে সিরিজের শেষ ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
নিউজিল্যান্ড : ১৯.৩ ওভারে ৯৩ (রবীন্দ্র ০ , অ্যালেন ১২, ল্যাথাম ২১, ইয়ং ৪৬, নিকোলস ১ , গ্র্যান্ডহোম ০, ব্ল্যান্ডেল ৪ , ম্যাকনকি ০, এজাজ ৪, টিকনার ২, হামিশ ০* ; নাসুম ৪/১০ , সাকিব ০/২৫, শেখ মেহেদী ১/২১, মুস্তাফিজ ৪/১২ , সাইফুদ্দিন ১/১৬, মাহমুদউল্লাহ ০/৭)
বাংলাদেশ : ১৯.১ ওভারে ৯৬/৪ (নাঈম ২৮, লিটন ৬, সাকিব ৮, মুশফিক ০, মাহমুদউল্লাহ ৪৩* , আফিফ ৬*; বেনেট ০/১৭, এজাজ ২/৯ , ম্যাকনকি ১/৩০, রবীন্দ্র ০/৮, গ্র্যান্ডহোম ০/৩, টিকনার ০/১৩)
ফল : বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা : নাসুম আহমেদ
সিরিজ : বাংলাদেশ ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে (৫ ম্যাচ সিরিজ)