হেফাজতের নতুন আমীর হলেন আল্লামা শাহ মুহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী। ১৯ আগষ্ট হেফাজত আমীর আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর নামাজের জানাজার সময় হেফাজতের আমির হিসেবে মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর নাম ঘোষনা করা হয়।
আল্লামা শাহ মুহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী:
১৯৩৪ সনের ১৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার অজপাড়াগাঁ দৌলতপুরস্থ বাবুনগর গ্রামে আলেম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী। তার পিতা আল্লামা শাহ মুহাম্মদ হারুন বাবুনগরী (র.) ও মাতা উম্মে ছালমা। দুই ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। শৈশবে তিনি বাবা আল্লামা হারুন বাবুনগরী কর্তৃক ১৯২৪ সনে প্রতিষ্ঠিত আল-জামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগর মাদরাসায় লেখাপড়া করেন। ৮ বছর (চাহরম শ্রেণি) পড়ে ১৯৪৯ সনে তিনি হাটহাজারী মাদরাসায় ভর্তি হন। সেখানে ২ বছর (চুয়াম শ্রেণি পর্যন্ত) পড়ে ১৯৫২ সনে পাড়ি জমান ভারতের বিখ্যাত দ্বীনি শিক্ষাঙ্গন ‘দারুল উলুম দেওবন্দ’ মাদরাসায়। সেখানে গিয়ে তিনি আবারো চুয়াম (৯ম শ্রেণি), দুয়াম (১০ম শ্রেণি), উলা ও দাওরায়ে হাদীস শেষ করেন। পরে আরো এক বছর হাদীস শাস্ত্রে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেন। ওই সময় তার ওস্তাদ ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের পুরোধা আল্লামা হোসাইন আহমদ মাদানী (র.), আল্লামা বলিয়ভী (র.) ও শায়খুল হাদীস আল্লামা সৈয়দ ফখরুদ্দীন (র.)। ওখানে যাওয়ার সাড়ে ৩ বছরের মাথায় আল্লামা হোসাইন আহমদ মাদানী ইন্তেকাল করেন এবং সেই ঐতিহাসিক জানাজায় তিনি শরীক ছিলেন।
১৯৬০ সনে তিনি দেওবন্দ থেকে ফেরৎ এসে পিতার প্রতিষ্ঠিত বাবুনগর মাদরাসায় শিক্ষকতায় মনোনিবেশ করেন। ১৯৮৬ সনে তার গর্বিত পিতা আল্লামা শাহ মুহাম্মদ হারুন বাবুনগরী ইন্তেকাল করলে তিনি বাবুনগর মাদরাসার মুহতামিম নিযুক্ত হন। সে থেকে আজ অবদি তিনি মুহতামিম হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ১৯৬০ সনে দেওবন্দ থেকে ফিরেই পিতার নির্দেশে ফটিকছড়ির ধর্মপুর আদু বাপের বাড়ি থেকে বিয়ে করেন। তার স্ত্রীর নাম মরিয়ম বেগম। তিনি গত ৪ আগস্ট ইন্তেকাল করেছেন। তার ৩ পুত্র মাওলানা মুহাম্মদ আইয়ুব বাবুনগরী, মুফতি মুহাম্মদ মহিউদ্দীন বাবুনগরী ও মাওলানা মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন বাবুনগরী এবং ৮ কন্যা সন্তান যারা সকলে বিবাহিত। তিনি হেফাজতের প্রতিষ্ঠাকালীন সিনিয়র নায়েবে আমীর ছিলেন। কওমী সনদের সরকারি স্বীকৃতি নেয়া বিষয়ে বিরোধের জের ধরে তিনি হেফাজত, হায়াতুল উলিয়া ও বেফাকুল মাদারিস এবং ইসলামী ঐক্যজোটসহ সব সংগঠন থেকে পদত্যাগ করেন। হেফাজত আমীর আল্লামা আহমদ শফির ইন্তেকালের পর তিনি হেফাজতে ফেরেন এবং সংগঠনটির আমীর হবার সম্ভাবনা থাকলেও আপন বড় ভাগিনা আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর আত্মত্যাগ মূল্যায়ন দিতে তিনি তা হতে রাজী হননি। তবে ওনাকে হেফাজতের প্রধান উপদেষ্টা করা হয়। গত বৃহস্পতিবার ভাগিনা হেফাজত আমীর আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর মৃত্যুতে আমীর পদটি শূন্য হলে জুনায়েদ বাবুনগরীর জানাজায় আল্লামা শাহ মুহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীকে হেফাজতের নতুন আমীর ঘোষণা করা হয়।