প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি) ২০১১ সালে কাতার স্পোর্টস ইনভেস্টমেন্ট কিনে নেয়। এই প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান নাসের আল খিলাইফি। স্পোর্টস মার্কেটে প্রচলিত তেল বিক্রির টাকা ফুটবলে বিনিয়োগ করছেন খিলাইফি। পেট্রোডলারে যেন সয়লাব প্যারিস! প্রথমেই স্বপ্ন ছিল পিএসজিকে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতাবেন খিলাইফি। অবশ্য স্বপ্ন আর ধরা দেয়নি।
লিওনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে টার্গেট করেছিলেন খিলাইফি সেই ১০ বছর আগ থেকেই। অবশেষে মেসিকে দলভুক্ত করতে পেরেছেন। উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের স্বপ্ন এই কাতারি মালিকের চোখে-মুখে। গুঞ্জন রয়েছে- কিলিয়ান এমবাপ্পে রিয়াল মাদ্রিদে গেলে জুভেন্টাস থেকে রোনালদো এসে হাজির হবেন প্যারিসে! মেসি যোগ দেওয়ায় ইতোমধ্যে পিএসজির শেয়ার মার্কেটে উচ্চহার, জার্সি বিক্রির রেভিনিউ, ক্লাবের সাথে অন্য স্পন্সর চুক্তির হার বৃদ্ধি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফলোয়ার বেড়েছে পিএসজির। ফেসবুক, টুইটার ও ইনস্টাগ্রাম থেকেও বাড়তি আয় হবে এখন প্যারিসে কাতারি ধনকুবের খিলাইফির।
প্যারিসের শেয়ারবাজারে ‘মেসি’ : পিএসজিতে যোগ দিতে পারেন লিওনেল মেসি- শুধু এমন সম্ভাবনার কারণেই তরতর করে দাম বাড়তে শুরু করেছিল ফরাসি ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম। ইতোমধ্যে সেটি বেড়েছে। মেসি আসলেই যোগ দিয়েছেন প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ে। প্যারিসের ক্লাবটিতে সাবেক বার্সেলোনা অধিনায়ক যোগ দিলে বাড়বে ফরাসি ফুটবলের জনপ্রিয়তা- এটা জানা ছিল। একই কারণে বেড়ে যাবে টিভি দর্শকের সংখ্যাও। দুইয়ে মিলিয়ে শেয়ারবাজারে এই প্রভাব। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লিগ ওয়ানের দল অলিম্পিক লিওঁর শেয়ারের দাম বেড়েছে দশমিক ৯ শতাংশ। টিভি গ্রুপ টিএফওয়ান এবং চ্যানেল প্লাসের মালিক ভিভেন্দির শেয়ারের দাম বেড়েছে যথাক্রমে- ১ দশমিক ৩ ও দশমিক ২ শতাংশ।
জার্সি বিক্রিতে লাভ : প্যারিস সেইন্ট জার্মেই ইউরোপের অন্যতম বড় ক্লাব। এই ক্লাবে নেইমার ও কিলিয়ান এমবাপ্পে খেলেন। এ ছাড়া আরও বড় তারকা এই ক্লাবে আছেন। তাদের জার্সি পুরো বিশ্বেই বিক্রি হয়; কিন্তু লিওনেল মেসির ব্যক্তিগত ফ্যানবেজ বিশাল। পিএসজির জার্সি যারা সাপোর্ট করতেন তারা ক্লাব বা নেইমারকে পছন্দ করার জন্য কিনবেন। নেইমারের ফ্যানবেজও বড়। মেসি যোগ দেওয়ার ফলে তার ফ্যানবেজ এখন পিএসজির জার্সি কেনার দিকে ঝুঁকেছেন। পিএসজির অফিসিয়াল ‘৩০’ নম্বর জার্সিটি মেসির। ইতোমধ্যে প্রথমধাপে পিএসজি অনলাইনে জার্সি ছেড়েছিল। ৩০ মিনিটে সব জার্সি বিক্রি হয়ে যায়। প্রতিটি জার্সির মূল্য বাংলাদেশি টাকায় ১৫ হাজার ৭২০ টাকা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আয় : ফেসবুক ও ইনস্টগ্রামে ক্লাবের যথেষ্ট আয় রয়েছে। অ্যাড ও মনিটাইজেশনের ব্যাপার রয়েছে। আর অবশ্যই ক্লাবগুলো মনিটাইজ করা। ইনস্টাগ্রামে মেসি আসার আগে পিএসজির ফলোয়াড় ছিল ৩৪ মিলিয়ন। সেটি এখন ৪২ মিলিয়নে গেছে। ভিডিও ও ছবির পোস্টের লাইক, কমেন্ট ও শেয়ারে আয় বাড়বে। মেসিরও ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল রয়েছে। তার ফলোয়াররাও এখন পিএসজি ফলো করবে- এটাই স্বাভাবিক।
টেলিভিশন থেকে আয় : লিওনেল মেসি প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ে আসায় লিগের সঙ্গে পিএসজির যে টেলিভিশন সংক্রান্ত চুক্তি রয়েছে, সেখানে সংশোধনের দরকার পড়েছে। অতিদ্রুতই সে ব্যাপারে আপডেট জানা যাবে। মেসির সমর্থক দক্ষিণ আমেরিকা তো বটেই, চীন ও ভারতেও প্রচুর। এই দুটি দেশ সবচেয়ে বড় বিশ্বে। ফলে টেলিভিশনে খেলা দেখানোর যে মূল্য আগে নির্ধারণ ছিল (পিএসজির খেলা), সেটিরও পরিবর্তন আসবে। টেলিভিশন থেকেই বিশাল অঙ্ক পাবে ক্লাব পিএসজি।
মেসির আয় কেমন হবে পিএসজিতে : দুই বছরের জন্য চুক্তি হয়েছে ৭০ মিলিয়ন ইউরোয়। সে হিসাবে প্রতিবছর পারিশ্রমিক পাচ্ছেন ৩৫ মিলিয়ন ইউরো, যা বাংলাদেশি টাকায় এক মৌসুমে সাড়ে তিনশ কোটি টাকার বেশি। এর বাইরে তো বোনাস থাকছেই। প্রতিমাসে মেসির আয় তিন মিলিয়ন ইউরো (২৯ কোটি ৮৯ লাখ ৪০ হাজার ৮০৪ টাকা)। প্রতিসপ্তাহে তার আয় প্রায় ৭ কোটি ৪৭ লাখ ৩৫ হাজার ২০০ টাকা। প্রতিদিন তার আয় প্রায় এক কোটি ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৪৫৭ টাকা আর প্রতিমিনিটে তার আয় প্রায় ৭ হাজার ৪১৪ টাকা। তবে শুধু এই টাকাই নয়, পিএসজিতে সই করার জন্য আরও ২৫ মিলিয়ন ইউরো অর্থাৎ ২৪৯ কোটি ১০ লাখ ৭৭ হাজার ৯৫২ টাকা পেয়েছেন মেসি। এই অর্থ নেইমারের আয়ের চেয়ে বেশি।