একটি মহৎ গুণ আছে, যা অর্জন করা অনেক কঠিন; কিন্তু তার ফল অনেক মিষ্টি। বলা যায় সফলতার মূল চাবিগুলোর একটি সেটি। তা হলো ধৈর্য। ধৈর্য মুমিনের ভূষণ।
উত্তম চরিত্রের বিশেষ গুণ। যাদের আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা আছে, তারা কোনো পরিস্থিতিতে বিচলিত হন না; বরং আল্লাহর ওপর ভরসা করে পরিস্থিতি বুঝে তা মোকাবেলা করেন।
মুমিনের ধৈর্যের প্রয়োজন জীবনের সব ক্ষেত্রে, বিপদ-আপদে, মুসিবত, কষ্ট ও জটিলতায়। মুমিন ব্যক্তি বিশ্বাস করে, যত সংকটই আসুক না কেন, সব আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে। ফলে সে বিপদে পড়েও ক্ষোভ, হতাশা ও অস্থিরতা প্রকাশ করে না। নিজের ভাষা ও আচরণ সংযত রাখে। কারণ সে আল্লাহর প্রতি গভীরভাবে বিশ্বাসী। সে তাকদিরে বিশ্বাস করে।
তাকদিরে বিশ্বাস করা ঈমানের ছয়টি স্তম্ভের একটি। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘…আল্লাহর হুকুম ছাড়া কোনো বিপদ আসে না। আর যে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে তিনি তার অন্তরকে সঠিক পথের সন্ধান দেন। ’ (সুরা : তাগাবুন, আয়াত : ১১)
২০০৭ সালে ফুলার থিওলজিক্যাল সেমিনারি প্রফেসর সারাহ এ স্নিটকার এবং ইউসি ডেভিসের মনোবিজ্ঞানী রবার্ট এমোনস জানান, ধৈর্যশীল মানুষ অপেক্ষাকৃত কম বিষণ্নতায় ভোগে। তাদের মধ্যে নেতিবাচক আবেগ কম কাজ করে।
চাপপূর্ণ যেকোনো পরিবেশে নিজেদের সামাল দিতে পারে তারা। মহান আল্লাহ ঈমানদারদের সর্বাবস্থায় ধৈর্য ধারণের নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা ধৈর্য ধারণ করো, ধৈর্যে প্রতিযোগিতা করো এবং সর্বদা আল্লাহর পথে প্রস্তুত থাকো, আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো। ’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ২০০)
ধৈর্যের শাখা
পবিত্র কোরআন ও হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী ধৈর্যের তিনটি শাখা রয়েছে। এক. নফসকে হারাম এবং নাজায়েজ বিষয় থেকে বিরত রাখা। দুই. ইবাদত ও আনুগত্যে বাধ্য করা এবং তিন. যেকোনো বিপদ ও সংকটে ধৈর্যধারণ করা।
ধৈর্যশীলতা অর্জনের উপায়
এটি অর্জন করতে প্রবল ইচ্ছাশক্তির প্রয়োজন। সঙ্গে প্রয়োজন দৃঢ় ঈমান। কারণ কোনো মানুষের মধ্যে দৃঢ়তা না থাকলে, প্রবল ইচ্ছাশক্তি না থাকলে সে ধৈর্যশীল হতে পারবে না।
রাসুল (সা.) একবার আনসারি কিছু সাহাবিকে বলেন, ‘আর যে ব্যক্তি ধৈর্য ধরে আল্লাহ তাকে ধৈর্যশীলই রাখেন। আর যে অমুখাপেক্ষী হতে চায়, আল্লাহ তাকে অভাবমুক্ত রাখেন। ধৈর্যের চেয়ে বেশি প্রশস্ত ও কল্যাণকর কিছু কখনো তোমাদের দান করা হবে না। (বুখারি, হাদিস : ৬৪৭০)
মহান আল্লাহ ধৈর্যশীলদের জান্নাত উপহার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা তাদের রবের সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ধৈর্য ধারণ করে, নামাজ কায়েম করে এবং আমি তাদের যে রিজিক প্রদান করেছি, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে এবং ভালো কাজের মাধ্যমে মন্দকে দূর করে, তাদের জন্যই আছে আখিরাতের শুভ পরিণাম। স্থায়ী জান্নাত—যাতে তারা এবং তাদের পিতৃপুরুষরা, তাদের স্ত্রীরা ও তাদের সন্তানদের মধ্যে যারা সত্ ছিল তারা প্রবেশ করবে। আর ফেরেশতারা প্রতিটি দরজা দিয়ে তাদের কাছে প্রবেশ করবে। (আর বলবে) শান্তি তোমাদের ওপর। কারণ তোমরা ধৈর্য ধারণ করেছ, আর আখিরাতের এ পরিণাম কতই না উত্তম। ’ (সুরা রাদ, আয়াত : ২২-২৪)
দুনিয়াতে মানুষের বিপদাপদ আসা স্বাভাবিক। কিন্তু পরম করুণাময় এর বিনিময়েও মুমিন বান্দাদের গুনাহ মাফ করে দেন। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) ও আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, মুসলিম ব্যক্তির ওপর যে কষ্ট-ক্লেশ, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানি আসে, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে ফুটে, এ সবের মাধ্যমে আল্লাহ তার গুনাহ ক্ষমা করে দেন। (বুখারি, হাদিস : ৫৬৪১)
তাই দুনিয়াতে কোনো কিছু না পেলে বা কোনো বিপদে পড়লে ধৈর্যহারা না হয়ে মহান আল্লাহর সাহায্য চাওয়া উচিত। কারণ আমরা জানি না, কোনটা আমাদের জন্য ভালো, আর কোনটা খারাপ। কোনটা কল্যাণকর আর কোনটা অকল্যাণের। আল্লাহ আমাদের জন্য যখন যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, তাই আমাদের জন্য কল্যাণকর। এতে আমাদের সাময়িক কষ্ট অনুভূত হলেও এর বিনিময়ে আমাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর মাগফিরাত ও মহা প্রতিদান।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই মুসলিম পুরুষ ও নারী, মুমিন পুরুষ ও নারী, অনুগত পুরুষ ও নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও নারী, বিনয়াবনত পুরুষ ও নারী, দানশীল পুরুষ ও নারী, সিয়ামপালনকারী পুরুষ ও নারী, নিজেদের লজ্জাস্থানের হিফাজতকারী পুরুষ ও নারী, আল্লাহকে বেশি স্মরণকারী পুরুষ ও নারী, তাদের জন্য আল্লাহ মাগফিরাত ও মহান প্রতিদান প্রস্তুত রেখেছেন। ’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৩৫)
মহান আল্লাহ সবাইকে এই মহৎ গুণ অর্জনের তাওফিক দান করুন।