লকডাউনের পঞ্চম দিনের এই সময়ে রাজধানীর গুলিস্তান এলাকা প্রায় জনশূন্য। হাতেগোনা স্বল্প সংখ্যক মানুষ এলোমেলোভাবে ঘোরাফেরা করছেন। কিছুক্ষণ পরপর বিকট আওয়াজে রাস্তা দিয়ে দ্রুতবেগে ছুটে চলেছে পণ্যবাহী ট্রাক। প্রয়াত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের কাছাকাছি টহল দিচ্ছেন কয়েকজন পুলিশ সদস্য। রাত আনুমানিক নয়টার সময় হঠাৎ করে একটি পণ্যবাহী ট্রাক দেখে থামার জন্য সিগন্যাল দেয় টহল পুলিশ। সিগন্যাল শুনে ট্রাকের চালক ব্রেক কষে দাঁড়ান।
এসময় পুলিশ ট্রাকচালক ও হেলপারের কাছে জানতে চায় এতে কী আছে এবং তারা কোথায় যাচ্ছে। তারা জানান, ট্রাকভর্তি লবণের বস্তা চট্টগ্রাম থেকে পাঠানো হচ্ছে রংপুরে। এ সময় পুলিশ ট্রাকের পেছনের দিক প্লাস্টিকের কাভার দিয়ে বাঁধা দেখতে পায়। পুলিশ কৌতূহলবশত ট্রাকের পেছনে কেউ আছে কিনা জানতে চায়। এ সময় ট্রাক ড্রাইভার ও হেলপারের কথাবার্তায় পুলিশের সন্দেহ হয়।
পুলিশ ট্রাকের পেছনে প্লাস্টিকের কাভার খুলে প্রথমে ট্রাকবোঝাই লবণের বস্তা দেখতে পায়। ভেতরে টর্চ দিয়ে এক কোনায় কয়েকজন নারী-পুরুষ ও শিশুকে দেখতে পায়। এ সময় লবণের বস্তায় আড়ালে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় ছয়জনকে ট্রাক থেকে নামিয়ে আনে পুলিশ।
ট্রাকে আসা তরুণ নয়ন মিয়া পুলিশকে জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাট জেলায়। বর্তমানে তারা ভাই-বোনসহ কয়েকজন কুমিল্লার বরুড়াতে থাকেন। সেখানে কেউ চাকরি করেন, কেউ গাড়ি চালান।
তিনি জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাদের দাদার মৃত্যু সংবাদ শুনতে পান। ওই সময় তারা তাড়াহুড়া করে প্রাইভেটকার ও অ্যাম্বুলেন্স খোঁজ করে না পেয়ে লবণবোঝাই ট্রাকে উঠে পড়েন। এ সময় পুলিশ তাদের নাম-ঠিকানা লিখে নিয়ে গুলিস্তান এলাকায় ছেড়ে দেন।
ট্রাকচালক জানায়, মৃত্যুর সংবাদ শুনে মানবিক কারণে তাদের নিয়ে যাচ্ছিলেন। পরে ট্রাকটি ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু পুলিশকে অনুরোধ করার পরও তাদের যেতে দেয়া হয়নি।
নয়ন নামের ওই তরুণ জানান, ঢাকা শহরে তাদের কেউ নেই। এত রাতে কোথায় যাবেন, কীভাবে রংপুর পৌঁছাবেন তারা জানেন না।