রাজধানীর পল্লবীতে মুখে মাস্ক পরে কথা বলতে বলায় রাজধানীর পল্লবী থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা কর্তব্যরত একজন ট্রাফিক সার্জেন্টকে মারধর করেছেন। এমনকি সার্জেন্টকে তিনি পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যারও হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রানা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তোভোগী সার্জেন্ট।
সোমবার (২৭ জুলাই) রাতে পল্লবী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তাপস কুণ্ড মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘সার্জেন্ট মো. আল ফরহাদ মোল্লা ২৬ জুলাই রাতে একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেছেন। জুয়েল রানাসহ অজ্ঞাত আরও ৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলা নম্বর—৬১। আসামিদের গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
সোমবার রাত ১০টা পর্যন্ত এই ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি বলে জানিয়েছে মামলায় আমি তদন্ত কর্মকর্তা তাপস কুণ্ড। সার্জেন্ট আল ফরহাদ মামলার এজাহারে অভিযোগ করেন, ‘আমি ডিএমপির পল্লবী ট্রাফিক জোনে কর্মরত আছি। ২৬ জুলাই বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে পল্লবীর কালশী মেইন রোডের পূর্বে একটি বসুমতি পরিবহন লিমিটেডের মিনিবাস বিকল হয়ে দাড়িয়ে ছিল। এতে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। চালককে জিজ্ঞাস করে জানতে পারি, বাসটির ইঞ্জিন বিকল হয়েছে। পরে আমি তেতুলিয়া পরিবহন লিঃ এর বাসের চালককে বিকল বাসটিকে পেছন দিক দিয়ে ধাক্কা দিতে বলি। এসময় দেখি বিকল হওয়া বাসটির চালককে একজন ব্যক্তি গালিগালাজ করছে।
আমি তাকে রাস্তার পাশে যেতে বলি। যাতে বাসটির পেছন থেকে ধাক্কা দিলে কোন দুর্ঘটনা না ঘটে। কিন্তু ওই ব্যক্তি আমার কথার কোন গুরুত্ব না দিয়ে উল্টো আমাকে গালিগালাজ করছে। আমি তখন তাকে মাস্ক পরে তাকে কথা বলতে বলি। এতে সে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। আমাকে টানাহেচড়া করে চড় থাপ্পর মারতে থাকে। এক পর্যায়ে পকেট থেকে পিস্তল বের করে, তখন আমি তাকে শান্ত করার চেষ্টা করি। তার হাত ধরে ফেলি। আশেপাশের পথচারী ও পুলিশ কনস্টেবলরা মিলে আমাকে ও জুয়েল রানাকে দূরে নিয়ে যায়। এসময় বেতার যন্ত্রের মাধ্যমে পল্লবী থানার সহযোগিতা চাই। ঘটনার ৪/৫ মিনিট পর জুয়েল রানা তার আরো সহযোগীদের নিয়ে কালশী পুলিশ বক্সের সামনে আসে। সেখানেও তারা ৩০/৪০ জন্য অতর্কিত হামলা করে। তারা আমাকে চড় থাপ্পর, লাথি, কিল ঘুষি মারতে থাকে। এতে আমার শরীরে জখম হয়।’
সার্জেন্ট আরও অভিযোগ করেন, ‘হামলাকারীরা আমার বডি-অন ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে যায় এবং আমার সরকারি পোশাক টেনে ছিঁড়ে ফেলে। পল্লবী থানার ফোর্স আসলে তারা পালিয়ে যায়। এরপর সহকর্মীরা আমাকে উদ্ধার করে ইসলামীয়া হাসপাতালে ভর্তি করান।’
এই ঘটনার পর জুয়েল রানা এলাকা ছেড়েছেন। তাকে গ্রেফতারে পুলিশ একাধিক বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে তবে তাকে সম্ভাব্য কোথাও পাওয়া যায়নি।
জুয়েল রানার বিরুদ্ধে মাদক, হত্যা ও হত্যা চেষ্টার একাধিক মামলা রয়েছে। ২০১৪ সালের ১৬ এপ্রিল মাসে বাঁধের ডি ব্লকের বাউনিয়া বাঁধ ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী জামেনা আক্তার (১৪) ধর্ষণের শিকার হয়। পরবর্তীতে ওই কিশোরী আত্মহত্যা করে। এই ঘটনায় পল্লবী থানায় জুয়েল ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। তবে সেই মামলায় তাকে বেশিদিন কারাগারে থাকতে হয়নি। জামিনে মুক্ত হয়ে ফের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়।