অনেক সময় সচেতনতার অভাবে কোনো রোগ অনেক কঠিনের দিকে চলে যেতে পারে। তাই লক্ষণ দেখে আগেই রোগের উপস্থিতি জানা গেলে দ্রুত আরোগ্য সম্ভব হয়। আসুন জেনে নেয়া যাক কিডনির সমস্যা কিভাবে বুঝবেন।
কিডনি রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মধ্যে কিছু কিডনি রোগ আছে, সময়মতো উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে কিডনি ফেইলুর হয়ে যায়। অর্থাৎ কিডনি তার স্বাভাবিক কাজ করতে পারে না। কিডনি ফেইলুরের অন্যতম কারণ হলো অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস রোগ। মেডিসিন বা অন্য চিকিৎসার পাশাপাশি কিডনি ফেইলুরে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
কিডনি আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। সময়মতো চিকিৎসা করা না হলে কিডনি রোগের শেষ পরিণতি দীর্ঘস্থায়ী হয়। পাঁচটি ধাপে কিডনি বিকলের দিকে অগ্রসর হয়। প্রথম চারটি ধাপ পর্যন্ত চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় অথবা যে গতিতে কিডনি ক্ষয় হচ্ছে তা অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব। কিন্তু একবার পাঁচ নম্বর ধাপে চলে গেলে তখন বেঁচে থাকার উপায় হলো ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি সংযোজন। এসব পদ্ধতি খুবই ব্যয়বহুল।
স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথ ডাইজেস্ট জানায় কিডনি রোগের লক্ষণগুলোর বিষয়ে-
প্রস্রাবে পরিবর্তন- কিডনি রোগের একটি বড় লক্ষণ হলো প্রস্রাবে পরিবর্তন হওয়া। কিডনির সমস্যা হলে প্রস্রাব বেশি হয় বা কম হয়। বিশেষত রাতে এ সমস্যা বাড়ে। প্রস্রাবের রঙ গাঢ় হয়। অনেক সময় প্রস্রাবের বেগ অনুভব হলেও প্রস্রাব হয় না।
প্রস্রাবের সময় ব্যথা- প্রস্রাবের সময় ব্যথা হওয়া কিডনির সমস্যার আরেকটি লক্ষণ। মূলত প্রস্রাবের সময় ব্যথা, জ্বালাপোড়া এগুলো ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের লক্ষণ। যখন এটি কিডনিতে ছড়িয়ে পড়ে তখন জ্বর হয় এবং পিঠের পেছনে ব্যথা করে।
প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া- প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত গেলে এটি খুবই ঝুঁকির বিষয়। এমন হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি লক্ষণ।
ত্বকে দাগ হওয়া- কিডনি অকার্যকর হয়ে পড়লে রক্তে বর্জ্য পদার্থ বাড়তে থাকে। এটি ত্বকে চুলকানি এবং দাগ তৈরি করতে পারে।
বমি বা বমি বমি ভাব- রক্তে বর্জ্য পদার্থ বেড়ে যাওয়ায় কিডনি রোগে বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়ার সমস্যা হতে পারে।
ছোট ছোট শ্বাস- কিডনি রোগে ফুসফুসে তরল পদার্থ জমা হয়। এ ছাড়া কিডনি রোগে শরীরে রক্তশূন্যতাও দেখা দেয়। এসব কারণে শ্বাসের সমস্যা হয়, তাই অনেকে ছোট ছোট করে শ্বাস নেন।
পেছনে ব্যথা- কিছু কিছু কিডনি রোগে শরীরে ব্যথা হয়। পিঠের পাশে নিচের দিকে ব্যথা হয়। এটিও কিডনি রোগের একটি অন্যতম লক্ষণ।
দেহে ফোলা ভাব- কিডনি শরীর থেকে বর্জ্য এবং বাড়তি পানি বের করে দেয়। কিডনিতে রোগ হলে এই বাড়তি পানি বের হতে সমস্যা হয়। বাড়তি পানি শরীরে ফোলাভাব তৈরি করে।
মনোযোগ দিতে অসুবিধা হওয়া- লোহিত রক্তকণিকা কমে যাওয়ার কারণে মস্তিষ্কে অক্সিজেন পরিবহন কমে যায়। এতে কাজে মনোযোগ দিতে অসুবিধা হয়।
সবসময় শীত বোধ হওয়া- কিডনি রোগ হলে গরম আবহাওয়ার মধ্যেও শীত শীত অনুভব হয়। আর কিডনিতে সংক্রমণ হলে জ্বরও আসতে পারে।
কিডনি ভালো রাখার উপায়-
– ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের নিয়মিত রক্তের শর্করা এবং প্রস্রাবের অ্যালবুমিন পরীক্ষা করা ও রক্তের হিমোগ্গ্নোবিন এওয়ানসি নিয়ন্ত্রণে রাখা।
– উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা। (১৩০/৮০-এর নিচে যাদের প্রস্রাবে অ্যালবুমিন থাকে তাদের ১২০/৭০-এর নিচে)।
– ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের কিডনির কার্যকারিতা প্রতি ৬ মাস অন্তর পরীক্ষা করা।
– শিশুদের গলা ব্যথা, জ্বর ও ত্বকে খোস-পাঁচড়ার দ্রুত সঠিক চিকিৎসা করা উচিত। কারণ এগুলো থেকে কিডনি প্রদাহ বা নেফ্রাইটিস রোগ দেখা দিতে পারে।
– ডায়রিয়া, বমি ও রক্ত আমাশয়ের কারণে রক্ত পড়ে ও লবণশূন্য হয়ে কিডনি বিকল হতে পারে। তাই দ্রুত খাবার স্যালাইন খেতে হবে। প্রয়োজনে শিরায় স্যালাইন দিতে হবে।
– চর্বি জাতীয় খাবার ও লবণ কম খাওয়া এবং পরিমিত পানি পান করা।
– চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত অ্যান্টিবায়োটিক ও তীব্র ব্যথানাশক ওষুধ সেবন না করা।
– প্রস্রাবের ঘন ঘন ইনফেকশনের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নেওয়া।
মাত্র দুটি পরীক্ষায় জানা যায় কিডনি রোগ আছে কি-না এবং একটি সহজ সমীকরণে বের করা যায় কিডনি শত ভাগের কত ভাগ কাজ করছে। একটি হলো- প্রস্রাবে অ্যালবুমিন বা মাইক্রো অ্যালবুমিন যায় কি-না এবং অন্যটি রক্তের ক্রিয়েটিনিন।
একটু লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে, সচেতন হলেই এবং একটু কষ্ট করে যদি লাইফস্টাইল বা জীবনযাত্রার প্রণালি বদলে স্বাস্থ্যকর উপায়ে চলা যায়, তাহলে কিডনি বিকল হওয়ার এসব কারণ নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিরোধ করা সম্ভব।