রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকায় কেয়ারটেকার সুবল হত্যাকান্ডের ঘটনায় দুই দিনের মধ্যে হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনসহ দুই হত্যাকারীকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- মোঃ মাসুদ রানা ও মোঃ মিজানুর রহমান। এ সময় তাদের হেফাজত হতে ভিকটিমের পরিহিত জামার পুড়িয়ে দেওয়া অংশ বিশেষ ও রক্তমাখা জামা উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও গ্রেফতারকৃতদের স্বীকারোক্তি মতে ঘটনাস্থল থেকে একপিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত কাঁচিটি উদ্ধার করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (১৩ জুলাই, ২০২১) উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বিপিএম, পিপিএম তাঁর কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে হত্যাকান্ডে জড়িতদের গ্রেফতার সম্পর্কে বলেন, গত ১১ জুলাই, ২০২১ তারিখে উত্তরা পশ্চিম থানার ৩ নং সেক্টরের ১০ নং বাড়ির কেয়ারটেকার সুবল চন্দ্র পাল (৪৪) খুন হন। এ খুনের ঘটনায় থানা পুলিশের পাশা-পাশি সিআইডি, পিবিআইসহ একাধিক সংস্থা ছায়া তদন্ত শুরু করে। কিন্তু আমরা ঘটনার দুই দিনের মধ্যে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে হত্যাকান্ডের মূল হোতাসহ রহস্য উদঘাটন করতে পেরেছি। উত্তরা পশ্চিম থানার একটি টিম ১২ জুলাই, ২০২১ (সোমবার) সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে খুনের সাথে প্রত্যক্ষ জড়িত মাসুদ ও মিজানকে গ্রেফতার করে।
হত্যাকান্ডের মোটিভ সম্পর্কে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতারকৃত মাসুদ ঐ বাসায় ড্রাইভার হিসাবে কর্মরত ছিল। দেড় মাস পূর্বে সে চাকরি ছেড়ে সিরাজগঞ্জ চলে যায়। সেখানে একটি লুঙ্গি কারখানায় মাইক্রোবাসের চালক হিসেবে কাজ নেয়। গ্রেফতারকৃত মাসুদ ইতোপূর্বে প্রায়ই ভিকটিমের রুমে ইয়াবা সেবন করত ও নারী নিয়ে এসে ভিকটিমের বসবাসের কক্ষটি ব্যবহার করত। প্রাথমিকভাবে তাদের পরিকল্পনা ছিল, গভীর রাতে দারোয়ানকে হাত-পা বেঁধে জিম্মি করে রাখবে। বাড়ির মালিক ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদে যাবার সময়ে তারা বাসায় প্রবেশ করে বাড়ির সদস্যদের জিম্মি করে লুণ্ঠন কাজ সম্পন্ন করবে। সে মোতাবেক গ্রেফতারকৃত মাসুদ ভিকটিম সুবলের সাথে যোগাযোগ করে। পূর্ব পরিচয়ের সূত্রধরে গ্রেফতারকৃত মাসুদ ভিকটিমকে জানায় সে ও তার চাচাতো ভাই ঢাকায় এসে রাতে তার কক্ষে থাকবে।
সে মোতাবেক ১০ জুলাই দিবাগত রাত ১২:৩০টায় গ্রেফতারকৃতরা কেয়ারটেকারের রুমে প্রবেশ করে ও কেয়ারটেকারের কক্ষে অবস্থান নেয় এবং সেখানে ইয়াবা সেবন করে। পরিকল্পনা মোতাবেক রাত আনুমানিক ৩:৩০ টায় ঘুমন্ত কেয়ারটেকার ভিকটিমের হাত-পা বাঁধার চেষ্টা করলে ভিকটিম জেগে উঠে। রুমে থাকা একটি ধারালো কেঁচি ভিকটিমের গলায় ধরে তাকে চুপ থাকতে বলে। গ্রেফতারকৃত মিজান ভিকটিমের গলায় নাইলনের রশি পেঁচিয়ে ধরলে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে মাসুদ রানা কেয়ারটেকারের গলায় ধারালো কেঁচিটি ঢুকিয়ে দেয়। এতে রক্তক্ষরণ শুরু হলে মিজান ও মাসুদ ভিকটিমের গলা চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করে। মৃত্যু নিশ্চিত করার পর গ্রেফতারকৃতরা শক্তকরে ভিকটিমের হাত পা বাঁধে। রুমের বাহিরের পানির টেপে শরীরে থাকা রক্তের ছাপ ধুয়ে ফেলে এবং জামাকাপড়ে রক্তের ছাপ মুছে ফেলার চেষ্টা করে। পরবর্তী সময়ে গ্রেফতারকৃতরা মালিকের বাসায় লুণ্ঠনের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে উক্ত স্থান ত্যাগ করে। সেখান থেকে তারা বিভিন্ন যানবাহন ব্যবহার করে নিজ গ্রাম সিরাজগঞ্জ চলে যায়।