উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন ইরানের পররাষ্ট্রনীতিতে অগ্রাধিকার পাবে বলে সোমবার মন্তব্য করেছেন দেশটির নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। সেই সঙ্গে আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরবের প্রতি অবিলম্বে ইয়েমেনে হস্তক্ষেপ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। খবর রয়টার্স ও এএফপির।
অতিরক্ষণশীল বিচারপতি ও পশ্চিমা দেশগুলোর কড়া সমালোচক ইব্রাহিম রাইসি (৬০) মধ্যপন্থী প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির কাছ থেকে আগামী আগস্টে দায়িত্ব বুঝে নেবেন।
হাসান রুহানির সময় থেকেই ইরান ঝুঁকির মুখে থাকা ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার খড়্গ থেকে দেশের অর্থনীতিকে স্বাভাবিক ধারায় ফেরানোর আশা করছে। তবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তেহরানে প্রথম সংবাদ সম্মেলনে রাইসি বলেন, ‘ইরানের পররাষ্ট্রনীতি ওই চুক্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। ইরান বিশ্বের সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক ও যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে চায়। আরব উপসাগরীয় প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন প্রতিষ্ঠা করা হবে আমার সরকারের অগ্রাধিকার।’
সংবাদ সম্মেলনে রাইসির দেওয়া বক্তব্য রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়। শুক্রবার অনুষ্ঠিত ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাইসি ৬২ শতাংশের মতো ভোট পান।
তাঁর তিন প্রতিদ্বন্দ্বী পরাজয় মেনে নিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন তাঁকে। নির্বাচনে সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ও রক্ষণশীল রাজনীতিবিদদের সমর্থন পেয়েছেন তিনি। অভিনন্দন জানিয়েছেন মধ্যপন্থী প্রেসিডেন্ট রুহানিও।
সংবাদ সম্মেলনে রাইসি আরব প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়নের ব্যাপারে তাঁর সরকারের বিশেষ গুরুত্বারোপ করার কথা তুলে ধরলেও সৌদি আরবকে তিনি অবিলম্বে ইয়েমেনে হস্তক্ষেপ বন্ধের আহ্বান জানান। সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ইরানের তরফে কোনো বাধা নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ইয়েমেনের রাজধানী সানা থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা সরকারকে হটিয়ে দেওয়ার পর ২০১৫ সালে দেশটির যুদ্ধে হস্তক্ষেপ শুরু করে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট।
ইরান ও পশ্চিমা দেশগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, রাইসির জয়ে ইরানে কট্টরপন্থী রাজনীতির উত্থান ঘটলেও পরমাণু চুক্তি নিয়ে দেশটির সমঝোতার অবস্থানে সম্ভবত পরিবর্তন হবে না। কেননা রাষ্ট্রীয় বড় ইস্যুতে আয়াতুল্লাহ খামেনির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
রাইসি তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু চুক্তি লঙ্ঘন করেছে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন তার প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি যুক্তরাষ্ট্রকে তার প্রতিশ্রুতিতে ফিরে আসার আহ্বান জানাই।’ চুক্তি প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘যে সমঝোতায় জাতীয় স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত হবে, তা অবশ্যই সমর্থন করা হবে। কিন্তু সমঝোতার স্বার্থে কোনো সমঝোতা আমরা মানব না।’
যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর থেকে আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলো তুলে নিলে নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে রাইসি ‘না’ বলেন।
রাইসি আরও বলেন, তিনি ইরানের জনগণের অধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষা করতে চান। একজন বিচারপতি হিসেবে তিনি আগেও সব সময় মানবাধিকার রক্ষায় সচেষ্ট থেকেছেন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে যুক্তরাষ্ট্র তাঁর ওপর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে, সেটি বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্যই করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।