মেগাসিটি ঢাকায় প্রতিটি মানুষ ছুটে চলেন জীবন জীবিকার তাগিদে রাজধানীতে জনগণের চলাচল ও যাতায়াত নিয়ে সর্তক করল ডিএমপি
ব্রেকারি ফার্মে চাকুরী করা আরিফুল ইসলাম, চাকুরি করেন একটি বেসরকারি ফার্মে। তার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা, প্রথম সন্তানের অপেক্ষা এই দম্পতির। কিন্তু জীবনের প্রয়োজনে তিনি থাকেন ঢাকার বসুন্ধরা এলাকায়, সন্তানসম্ভবা স্ত্রী থাকেন গাউছিয়ায়। প্রতিটি দিন নিজের স্ত্রীর পাশে থেকে যত্ন করাও হয়ে উঠে না তাই। কিন্তু পরের দিন ছুটির দিন হওয়ায় গত ২০/০৫/২০২১ খ্রিস্টাব্দ, রোজ বৃহস্পতিবার, সেই সুযোগটি তিনি নষ্ট করতে চাননি। কাজ শেষে যাবেন গাউছিয়ায়, অপেক্ষা বাসের জন্য, বাস পাচ্ছেন না, সাথে আরও ২জন ব্যক্তি অপেক্ষা করছেন বাস পাবার আশায়। ঘটনাটি কুড়াতলী বিআরটিসি বাস কাউন্টারের সামনে। বাস না পেলেও তিনি দাঁড়ানো অবস্থায় দেখতে পান ইতোমধ্যে কয়েকজন মানুষ ২টি যাত্রীবাহী প্রাইভেট কারে করে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।
রাত আনুমানিক ০৯ঃ৩০ ঘটিকার দিকে একটি প্রাইভেট কার এসে দাঁড়ায় তাদের কিছুটা সামনে, তিনিসহ ৩জনই সেই প্রাইভেট কারের দিকে দৌড়ে এগিয়ে যান। গিয়ে দেখেন ড্রাইভারসহ ইতোমধ্যে গাড়িতে ৩জন বসা। তাই আরিফসহ ২জন সেই গাড়িতে উঠে বসেন, একজন স্থান সংকুলান না হওয়ায় উঠতে পারেননি।
আরিফ গাড়ির জানালার পাশে বসতে চাইলে তাঁর সাথে ওঠা যাত্রী অনুরোধ করে বলে তার বমির সমস্যা হয়, যদি আরিফুল হক মাঝখানে বসেন তাহলে সেই যাত্রীর উপকার হয়। হাসিমুখে মাঝখানে বসে যাত্রা শুরু, যদিও সেই হাসি ১০ মিনিট পর উবে যায়।
তার সাথে ওঠা সাধারণ যাত্রী এবং আগের যাত্রী ২জনই হয়ে ওঠেন ভয়ানক ছিনতাকারী। তার দুহাত দুদিক থেকে চেপে ধরে গামছা দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়, গলায় ঠেকানো হয় ধারালো ছুরি, চলতে থাকে কিল-ঘুষি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন। জীবনের প্রতি মায়া রেখে তিনি তার মোবাইল, মানিব্যাগে গচ্ছিত টাকা, বিকাশ একাউন্টের পিন নম্বর সবকিছু দিয়ে দেন। ছিনতাকারীদের প্রতি একটাই অনুরোধ করেন তাকে যেনো শারীরিকভাবে আঘাত না করা হয়।
যাওয়ার কথা ছিল গাউছিয়ায়, তারা তাকে কাপাসিয়ার রাস্তা দিয়ে গিয়ে এক পর্যায়ে দীর্ঘসময় পর নামিয়ে দেয় গাজীপুরের কালিগঞ্জ থানার অন্তর্গত এক নির্জন জায়গায়।
মোবাইল, নগদ অর্থের পাশাপাশি ছিনতাইকারীরা পরবর্তীতে বিকাশ একাউন্ট থেকে ১০,৩০০ টাকা সেন্ড মানি করে নিয়ে যায়। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে খিলক্ষেত থানায় একটি মামলা হয়।
মামলার প্রেক্ষিতে ২ মিনিটের ঝাপসা ভিডিও ফুটেজ, ভিকটিমের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া মোবাইল নাম্বার দিয়ে কাজ শুরু করে পুলিশ।
গতকাল (১৬/০৬/২০২১ খ্রিস্টাব্দ) ১৯ঃ৩০ ঘটিকার সময় ডিএমপি’র গোয়েন্দা উত্তরা বিভাগের বিমান বন্দর জোনাল টিম এক অভিযান চালিয়ে একটি প্রাইভেট কারসহ সেই ছিনতাই চক্রের ০৫ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে।
এই অপরাধীরা ধরা না পড়লে আজও হয়তো এরকম আরেকটি ঘটনা ঘটাতো নাম না জানা আরেক ব্যক্তির সাথে, পরিণতি আরও খারাপও হতে পারতো। ভিকটিম ঘটনাটি চেপে না গিয়ে মামলা করায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে আমরা ধন্যবাদ জানাই।
এসব সংঘবদ্ধ অপরাধ সনাক্তকরণে বাংলাদেশ পুলিশ সবসময়ই কাজ করে যাচ্ছে। একইসাথে আমরা আহবান জানাই যাত্রীসাধারণের সচেতন চলাফেরার।
আপনার নিতান্ত প্রয়োজনে রাতে আপনি যে গাড়িতে করে যাচ্ছেন, প্রয়োজনে কাছের কারো কাছে সেই গাড়ির নাম্বার, মডেল এবং রংয়ের বিষয়ে উল্লেখ করতে পারেন। একইসাথে হঠাৎ করেই অপরিচিত ব্যক্তিদের সাথে রাইড শেয়ারিং করা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করুন। এ ধরণের কোনো ঘটনা ঘটে গেলে অবশ্যই নিকটস্থ থানায় অভিযোগ জানান।