বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি চলছে। ঝুঁকির মধ্যেও মমতা নিয়ে রোগীর পাশে রয়েছেন করোনাযুদ্ধে ফ্রন্টফাইটার দেশের নার্সরা। ইতিমধ্যে ১ হাজার ৬৭৮ জন নার্স করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন আট জন নার্স। পিপিই, মাস্ক ও সু-কভারও ঠিকমতো পাননি নার্সরা। যেটুকু পেয়েছেন তার মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। অথচ দেশের ক্রান্তিলগ্নে অতন্দ্র প্রহরীর মতো নার্সরা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। নার্স ছাড়া পরিপূর্ণ চিকিত্সা সেবা সম্ভব নয় বলেও বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা জানিয়েছেন। এ সরকারের আমলে এ পর্যন্ত ৩০ হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এটি স্বাস্থ্য খাতে বিরল ঘটনা।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. জাহিদ মালেক বলেন, করোনাকালে নার্সরা জীবনবাজি রেখে চিকিত্সা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের পেশাগত মান উন্নয়নে সরকার গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। নার্সদের বিষয়টি তিনি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।
বর্তমান পরিস্থিতিতে একজন চিকিত্সকের পাশে থেকে একজন নার্স অনেক বেশি দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। চিকিত্সকরা ব্যবস্থাপত্র দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেন। কিন্তু তার ওষুধ খাওয়ানো থেকে সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকেন নার্সরা। একজন নার্সই পারেন তার সার্বক্ষণিক ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে রোগীর মানসিক যন্ত্রণা বা ভীতি কমিয়ে দিতে। ২০০৯ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নার্সিং শিক্ষার মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে আটটি নার্সিং ইনস্টিটিউটকে নার্সিং কলেজে রূপান্তর করেন। এন্ট্রি পয়েন্টে সিনিয়র স্টাফ নার্সদের দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা দেন। প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ২৬৪ জন নার্সকে দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে প্রথম শ্রেণিতে পিএসসির মাধ্যমে উন্নীত করেন। এরপর আর কোনো পদোন্নতি হয়নি। কিন্তু নার্সিং শিক্ষা খাতে কোনো অগ্রগতি আসেনি। কলেজগুলোতে পদ বিন্যাস হয়নি। কলেজগুলো বিভিন্ন জায়গা থেকে উচ্চতর ডিগ্রিধারীদেরকে দিয়ে নিজ বেতনে চালানো হচ্ছে। তারা হলেন সিনিয়র স্টাফ নার্স। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরও পদ বিন্যাস কেন হয়নি, তার সদুত্তর কেউ দিতে পারছেন না। নার্সিং অধিদপ্তরে মহাপরিচালক পর্যন্ত বসেন। কিন্তু মনে হয় যেন অনভিজ্ঞ দিয়ে চলছে এই অধিদপ্তর। কয়েক শ’ সিনিয়র স্টাফ নার্স আছেন যারা দেশ-বিদেশের উচ্চতর ডিগ্রিধারী। পদ বিন্যাস না করার কারণে তারা সিনিয়র স্টাফ নার্সই থেকে যাচ্ছেন। এ সংক্রান্ত কোনো ফাইল অধিদপ্তর থেকে মন্ত্রণালয়ে গেলে তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এক পর্যায়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে ফাইল আটকা পড়ে। অথচ এটি হওয়ার কথা নয়। আমলাদের মধ্যে একটি গ্রুপ আছে, যারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মতো নার্সিং অধিদপ্তরও নার্সদের দিয়ে পরিচালিত হোক তারা তা চান না।