লকডাউনে ঘরের বাইরে বের হওয়ার জন্য মুভমেন্ট পাস পেতে এ সংক্রান্ত ওয়েবসাইটে প্রায় ১৬ কোটি বার হিট করা হয়েছে। এর মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করতে পেরেছেন চার লাখ ৯৭৭ জন। রেজিস্ট্রেশনকারীদের মধ্য থেকে তিন লাখ ১৬ হাজার ৮০১টি পাস ইস্যু করা হয়েছে।
পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ বিভাগের এআইজি মো. সোহেল রানা জানান, গত ১৩ এপ্রিল বেলা ১১টা থেকে গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত ১৫ কোটি ৯৯ লাখ ২২ হাজার বার মুভমেন্ট পাসের ওয়েবসাইটে হিট করা হয়েছে। প্রতি মিনিটে ১৪ হাজার ২৬ জন ওয়েব সাইটে প্রবেশ করছেন। তবে চার লাখ ৯৭৭ জন রেজিস্ট্রেশন করতে সক্ষম হয়েছেন। সোহেল রানা জানান, তিন লাখ ১৬ হাজার ৮০১টি পাস ইস্যু করা হয় এই সময়ে। তিন লাখ ১৬ হাজার ৭৫৪টি পাস গ্রহণ করা হয়।
এদিকে, জরুরি সার্ভিসে নিয়োজিত ব্যক্তি ছাড়া অন্য যারা রাস্তায় বের হয়েছেন তাদের মুভমেন্ট পাস আছে কিনা সে বিষয়টি নিশ্চিত করছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। মুভমেন্ট পাস না থাকলে অফিসের পরিচয়পত্র দেখেও অনেককে যেতে দেয়া হয়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খোলা থাকায় রাস্তায় অনেক লোকজন বের হয়েছেন। যাদের অফিস খোলা তাদের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন পুলিশ সদস্যরা। তবে মুভমেন্ট পাস নিয়ে বের হয়েছেন কিনা সে বিষয়টি তারা জিজ্ঞেস করছেন। বেশ কয়েকটি চেকপোস্টে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জরুরি প্রয়োজনে যারা রাস্তায় বের হয়েছেন তাদের মুভমেন্ট পাস আছে কিনা সে বিষয়টি নিশ্চিত করছেন তারা। এছাড়া যাদের অফিস খোলা তাদের পরিচয় পত্র দেখে যেতে দেওয়া হচ্ছে। মুভমেন্ট পাস নিয়ে জরুরি কাজ শেষে বাসায় ফিরে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেন তারা। তবে লকডাউনের প্রথমদিন চিকিৎসক, সাংবাদিকসহ জরুরি সেবায় নিয়োজিত অনেককে চলাচলে বাধা দেওয়া বা হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মিরপুর বিভাগের দারুসসালাম থানার ওসি তোফায়েল হোসেন বলেন, রাজধানীতে প্রবেশের একটি রুট আমার এই থানা এলাকা। সকাল থেকেই সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে ঢাকায় ঢুকতে দেয়া হয়। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যারা বের হয়েছেন, যদি পুলিশ সদস্যরা অনুধাবন করতে পারেন সেটা, তাহলে তাদের ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়।
এদিকে, যারা জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় বের হয়েছেন তাদের বিষয়ে নজরদারি করছে র্যাব। গতকাল দুপুর থেকে রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু এ অভিযান পরিচালনা শুরু করেন। সঙ্গে রয়েছেন র্যাব-৩ এর সদস্যরা। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় বের হওয়া অনেককে জরিমানা করেছেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
শাহবাগে অভিযান পরিচালনাকালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বলেন, জনগণ এখনও সচেতন হচ্ছে না। আমরা সচেতন করানোর চেষ্টা করছি। করোনাকালীন সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারের নির্দেশনায় লকডাউন চলছে। এটি বাস্তবায়নের জন্য আমরা মাঠে রয়েছি। এখন পর্যন্ত অনেককেই জরিমানা করা হয়েছে। তিনি বলেন, যুক্তিযুক্ত কারণ দেখাতে না পারায় ১৫ জনকে ৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অপরাধ বিবেচনায় নানা জনের ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
র্যাব-৩ এর সহকারী পরিচালক এএসপি খায়রুল কবীর বলেন, সরকার নির্ধারিত নির্দেশনা বাস্তবায়নে আমরা মাঠে রয়েছি। র্যাব সবসময় অপরাধ দমনের পাশাপাশি সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাÐে অংশ নিয়ে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর জন্য এই ধরনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। জনগণের মধ্যে মাস্ক পরার প্রবণতা বেড়েছে। যারা মাস্ক ব্যবহার করছেন না, তাদের আমরা সচেতন করার চেষ্টা করছি।
রাজধানী ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন স্থানে বসানো যে চেকপোস্ট রয়েছে সেগুলোতে কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ সদস্যরা। তবে যারা চলাচলের জন্য মুভমেন্ট পস নেননি তাদের চলাচলে বাধা দিয়েছে পুলিশ। শাহবাগ, কারওয়ান বাজার, সায়েন্সল্যাব, ফার্মগেট, মিরপুর ১, ২ ও ১০ নম্বর, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, পাইকপাড়া, গাবতলীসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সড়কে বসেছে পুলিশের চেকপোস্ট। মুভমেন্ট পাসের প্রিন্ট কপি বা মোবাইলে পাসের কপি দেখিয়ে জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া লোকজন চলাচল করছেন। যৌক্তিক কারণ না দেখাতে পারলে পুলিশ সদস্যরা চলাচলকারীদের ফেরত পাঠাচ্ছেন। প্রয়োজনে মামলা ও জরিমানাও করছেন তারা।
পাড়া-মহল্লায় নজরদারি, জটলা বন্ধে কঠোর র্যাব:
এদিকে পাড়া-মহল্লা, অলিগলি কিংবা চায়ের দোকানে যাতে জটলা ও মানুষের আড্ডা দিতে দেখা গেঝে। তবে এটা যাতে না হয় সেজন্য কঠোর অবস্থানে রয়েছে র্যাব। র্যাব সদর দফতর বলছে, চেকপোস্টে বিনা প্রয়োজনে সকলকে ঘরের বাইরে যাওয়ার বিষয়ে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। সরকারি বিধিনিষেধ চলাকালে জরুরি প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে মুভমেন্ট পাস নিয়ে যাওয়ার প্রতি উৎসাহিত করা হচ্ছে।
র্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, জরুরি প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে মাস্ক পরিধান করা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশ প্রদান করা হচ্ছে।