রাজধানীর বিভিন্ন থানা এলাকায় ভেজাল মদপানে মৃত্যুর ঘটনার রহস্য উদঘাটনসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ। এ সময় ভেজাল মদ তৈরির কারখানার সন্ধানসহ বিপুল পরিমাণ ভেজাল মদ ও মদ তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলো-মনতোষ চন্দ্র অধিকারী ওরফে আকাশ (৩৫), রেদুয়ান উল্লাহ (৩৫), সাগর বেপারী (২৭), নাসির আহমেদ ওরফে রুহুল (৪৮), মোঃ জাহাঙ্গীর আলম (৪৫) ও সৈয়দ আল আমিন (৩০)।সোমবার (০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১) রাত ৮.৪৫ টায় রাজধানীর তেজগাঁও ও ভাটারা থানা এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করে ডিবি গুলশান জোনাল টিম।
প্রসঙ্গত, গত কয়েকদিন মদপান করার পর অসুস্থ হয়ে ভাটারা থানা এলাকায় তিনজন, ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকায় একজন ও মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় দুইজনসহ মোট ছয়জনের মৃত্যু হয়। যা রাজধানীসহ দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এ সকল ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা রুজু হয়। উক্ত মামলাসমূহ থানা পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ।
তদন্তে ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকায় মদ সেবনে মৃত্যুর ঘটনাস্থল থেকে প্রাপ্ত সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, দুইজন ব্যক্তি মোটরসাইকেলযোগে এসে এক বোতল মদ ভিকটিমকে দিয়ে চলে যায়। যা সেবন করে ভিকটিমের মৃত্যু হয়। পরবর্তী সময়ে ওই দুই ব্যক্তিকে সনাক্ত করে গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর সোমবার রাত ৮:৪৫ টায় তেজগাঁওয়ের ইয়ানতুন চাইনিজ রেস্টুরেন্টের সামনে হতে মনতোষ, রেদুয়ান ও সাগরকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভাটারা থানার খিলবাড়িরটেক এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে ভেজাল মদ তৈরির কারখানার সন্ধানসহ কারখানার মালিক নাসির, ম্যানেজার আল আমিন ও কারিগর জাহাঙ্গীরকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় ভেজাল মদের কারখানা থেকে নকল বিদেশি মদ, মদের খালি বোতল, মদের বোতলেরর মুখ আটকানো কর্ক, স্টিকার, স্পিরিট, কৃত্রিম রংসহ বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এই চক্রের মূলহোতা নাসির ভেজাল মদ তৈরি করে বিক্রি করতো। সাম্প্রতিক সময়ে ওয়্যারহাউজগুলো থেকে মদ ক্রয় বিক্রয়ে কড়াকড়ি থাকায় বাজারে মদের সংকট তৈরি হয়। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তারা ভেজাল মদ তৈরির কারখানা গড়ে তুলে। তারা ভেজাল মদ তৈরির উপকরণ স্পিরিট, স্টিকার ও রং মিটফোর্ট হাসপাতালের আশপাশ এলাকা থেকে সংগ্রহ করতো। এরপর সেগুলো দিয়ে চিনি পোড়ানো কালার ব্যবহার করে ভেজাল মদ তৈরি করতো। তৈরিকৃত ভেজাল মদ চক্রের অন্যান্য সদস্যদের দিয়ে বিভিন্ন খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতো। তাদের মাধ্যমে ভেজাল মদ চলে যেত সেবনকারীদের কাছে।
মোহাম্মদপুর ও ভাটারা থানা এলাকায় মদপানে যে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে সেগুলোও গ্রেফতারকৃতদের কারখানাতেই তৈরিকৃত ভেজাল মদ বলে গোয়েন্দা তদন্তে বেরিয়ে আসে।এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে ভাটারা থানায় মামলা রুজু হয়েছে।