আজ ১৪ জুন, ‘বিশ্ব রক্তদাতা দিবস’। রক্তদাতা দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘রক্ত দান করুন, দান করুন প্লাজমা, যতবার সম্ভব গ্রহণ করুন, জীবন বাঁচানোর এ অনন্য সুযোগ’। দিবসটিকে সামনে রেখে আজ (বুধবার) বিকালে রাজধানীর রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ উপলক্ষ্যে পুলিশ ব্লাড ব্যাংক চালু করেছে ‘পুলিশ ব্লাড ব্যাংক পদক।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার), পিপিএম। ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম-বার, পিপিএম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাগণ, ব্লাড ডোনার এবং চিকিৎসকগণ উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ ব্লাড ব্যাংকের আজীবন পৃষ্ঠপোষক ও ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান, কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট ডা. মনোয়ার হাসনাত খান, ৩৫ বার রক্তদাতা মো. নজরুল ইসলাম, রক্তদাতা আমেনা হীরা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইজিপি বলেন, করোনাকালে যখন মানবিকতার চরম বিপর্যয় হয়েছিল তখন বাংলাদেশ পুলিশ সাধারণ মানুষের পাশে থেকে জীবন রক্ষার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
তিনি বলেন, রক্তদাতারা নীরবে নিভৃতে মানুষের জীবন বাঁচাতে রক্ত দিয়ে যাচ্ছেন। তারা কোন কিছুর বিনিময়ে এ কাজ করেননি। তারা নিঃস্বার্থভাবে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের এ ঋণের কোন প্রতিদান হয় না। তিনি বলেন, আপনারা মানবিকতার এক উজ্জ্বল নজির স্থাপন করেছেন। দেশের জন্য, সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করতে সকলের প্রতি আহবান জানান আইজিপি।
পুলিশ ব্লাড ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে যারা এপর্যন্ত নিয়ে এসেছেন সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আপনারা রক্ত দিয়ে আরেকজনের জীবন বাঁচিয়ে দিচ্ছেন । আপনারা জানেনও না কার জীবন বাঁচিয়ে দিচ্ছেন। যার জীবন বাঁচে সেও জানে না কার রক্ত দিয়ে তার জীবন বাঁচল। নিঃস্বার্থভাবে রক্ত দিয়ে আরেকজনের জীবন বাঁচিয়ে দেওয়ার চেয়ে বড় মানব সেবা আর কিছুই হতে পারেনা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ দেশের যে কোন প্রয়োজনে এগিয়ে আসে। এর প্রমাণ ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত দেশের সকল প্রয়োজনে পুলিশের অবদান রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, করোনাকালে বাংলাদেশ পুলিশ মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে। করোনা থেকে সুস্থ হয়ে প্লাজমা দিয়ে আরেকজন করোনা রোগীকে সুস্থ করেছে। কোভিড-১৯ মহামারির সময় ৫১০০ ব্যাগ প্লাজমা সরবরাহ করে করোনায় আক্রান্ত বহু মুমূর্ষু রোগীর জীবন বাচাঁতে ভুমিকা রেখেছে পুলিশ ব্লাড ব্যাংক। পুলিশ ব্লাড ব্যাঙ্কে যারা ১০ থেকে ৩৫ বার পর্যন্ত নিঃস্বার্থভাবে রক্ত দিয়েছেন তাদের সম্মাননা দিতে পেরে নিজেকে গর্বিত বোধ করছি ।
অনুষ্ঠানে মোট ৭১ জন রক্তদাতাকে পদক প্রদান করা হয়। এর মধ্যে ২১ এর বেশিবার রক্তদাতা ৫ জনকে গোল্ড পদক, ১৬ এর বেশিবার রক্তদাতা ১৪ জনকে সিলভার পদক এবং ১০ থেকে ১৫ বার রক্তদাতা ৫২ জনকে ব্রোঞ্জ পদক প্রদান করা হয়। আইজিপি পদকপ্রাপ্তদের হাতে ‘পুলিশ ব্লাড ব্যাংক পদক’ তুলে দেন।
এর আগে বিকাল ৩:৩০টায় ডিএমপি কমিশনারের নেতৃত্বে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল থেকে শুরু হয়ে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে গিয়ে শেষ হয় ।
উল্লেখ্য, সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে ‘রক্তে মোরা বাঁধন গড়ি, রক্ত দেব জীবন ভরি’ এ শ্লোগানকে সামনে রেখে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ২০১০ সালের ১২ ডিসেম্বর চালু করে ‘পুলিশ ব্লাড ব্যাংক’। বর্তমানে রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের ২য় তলায় পুলিশ ব্লাড ব্যাংক’ এর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। পুলিশ ব্লাড ব্যাংকের ডোনারের সংখ্যা ৪২ হাজার ৫৯৩ জন। এর মধ্যে পুলিশ সদস্য ৫ হাজার ৪৭৬ জন। সাধারণ ডোনার ৩৭ হাজার ১২৬ জন। ডোনারদের কাছ এ পর্যন্ত সংগৃহীত রক্তের পরিমাণ ৬২ হাজার ৫২১ ব্যাগ। আর সরবরাহকৃত রক্তের পরিমান ৬১ হাজার ২৫৪ ব্যাগ।