শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও পর্ন ভিডিও বিক্রি করতো পমপম গ্রুপের হোতা সায়েম। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সায়েমের একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সন্ধান পেয়েছে, যেখানে এক কোটি ২১ লাখ টাকা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে সায়েমের সেই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিত করে রাখা হয়েছে।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলাম জানান, টেলিগ্রাম অ্যাপে পমপম নামের একটি পর্নোগ্রাফি গ্রুপের গ্রেফতার ৯ জনের মধ্যে চার জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এই পর্নোগ্রাফি গ্রুপের আরও সদস্য রয়েছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া পমপমের মতো আরও কয়েকটি গ্রুপ শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
পুলিশ জানায়, টেলিগ্রাম অ্যাপের পমপম নামে একটি গ্রুপ পরিচালনা করতো সায়েম। সহযোগীদের নিয়ে সায়েম বিভিন্ন নারীদের টার্গেট করে তাদের সোশ্যাল মিডিয়া আইডি হ্যাক করতো। পরে কৌশলে তাদের আপত্তিকর ভিডিও সংগ্রহ করতো। এসব ভিডিও তারা দেশে ও দেশের বাইরে বিক্রি করতো। বিশেষ করে বিদেশে থাকা প্রবাসীরা অর্থের বিনিময়ে এসব ভিডিও কিনে নিতো।
সম্প্রতি এক ভুক্তভোগীর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি পমপম গ্রুপে ছড়িয়ে দেওয়ার পর ভুক্তভোগী তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন। ওই মামলার পর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ গত সোমবার মার্ক সাকারবার্গ ওরফে আবু সায়েমসহ এই চক্রের ৯ জন সদস্যকে গ্রেফতার করে।
সিআইডির এক কর্মকর্তা জানান, আবু সায়েম তার পমপম গ্রুপে মার্ক সাকারবার্গ হিসেবে পরিচতি ছিল। পমপম গ্রুপে প্রায় ৩০ হাজার ভিডিও সংরক্ষিত ছিল। ইতোমধ্যে এসব ভিডিও ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে। পমপমের মতো আরও কয়েকটি গ্রুপের সন্ধান পাওয়া গেছে। তারাও পমপমের মতো একই কায়দায় বিভিন্ন বয়সী নারীর আপত্তিকর ভিডিও সংগ্রহ করে ব্ল্যাকমেল করে আসছিল।
সিআইডি সূত্র জানায়, পমপম গ্রুপের ৯ সদস্যকে গ্রেফতারের পর সংস্থাটির সঙ্গে অনেক ভুক্তভোগী যোগাযোগ করেছেন। এর মধ্যে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ নারী শিক্ষার্থী এই চক্রের কবলে পড়েছিলেন।
সূত্র আরও জানায়, চক্রটি ভিডিও সংগ্রহের পর সংশ্লিষ্ট নারীদের পরিবারের কাছে পাঠানোর কথা বলে ব্ল্যাকমেল করতো। যার কাছ থেকে যা পারতো, সেই হিসেবে অর্থ আদায় করতো। এ ছাড়া তারা অর্থের বিনিময়ে রেজিস্টার্ড সাবস্ক্রাইবারদের কাছে এসব ভিডিও দেখার ব্যবস্থা করে দিতো। দেশে কিছুদিন সাবস্ক্রিপশন দেওয়ার পর বিদেশে ভিডিও ডাউনলোডসহ দেখার বিনিময়েও অর্থ আদায় করতো।
পর্নোগ্রাফি এসব ব্যবসার সঙ্গে বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ও পরিচিত মুখের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে জানায় সিআইডি সূত্র। এরা দেশের শোবিজ মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গেছে। তাদেরও শনাক্তের পর আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছে পুলিশ।
সিআইডি বলছে, পমপম গ্রুপের প্রতারক চক্রের সদস্যের সংখ্যা ২৫। চক্রটির নেতা মার্ক সাকারবার্গ ওরফে আবু সায়েম চট্টগ্রামের বাসিন্দা। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বেকার হলেও সে প্রায় সোয়া কোটি টাকার মালিক এখন। ২০ বছর বয়সী সায়েম চট্টগ্রামের শ্যামলী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেছে। বিকাশের মাধ্যমে পেমেন্ট নিয়ে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ জমা করতো। সিআইডি ওই ব্যাংক হিসাব স্থগিত করেছে। তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনেও মামলার প্রস্তুতি চলছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এক ভুক্তভোগী তরুণী জানান, কিছুদিন আগে তার ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছিল। পরে সেই আইডি উদ্ধার করতে এক দিন সময় লাগে। ঘটনার তিন দিন পর তাকে একটি গ্রুপে যুক্ত করা হয়। সেখানে তিনি দেখতে পান, তার ফেসবুক গ্যালারি ও মেসেজ অপশন থেকে কিছু ছবি সংগ্রহ করে এক মিনিটের একটি ভিডিও বানানো হয়েছে। সেটা মুছে ফেলতে অনুরোধ করলে তার কাছে অর্থ দাবি করে। ব্যক্তিগত ছবি প্রকাশ হওয়ার ভয়ে তিনি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে দিন পার করছিলেন।