সম্পদ-সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার ও সমঅংশীদারত্ব নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে ৬৬টি নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের প্ল্যাটফর্ম ‘সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি’। এছাড়া সংবিধানে প্রদত্ত সমঅধিকার বাস্তবায়নের জন্য আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং প্রতিষ্ঠানিক ভিত্তি গড়ে তোলার দাবি জানানো হয়।
মঙ্গলবার (৮ মার্চ) বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘নারী-পুরুষের সমতা, টেকসই আগামীর মূলকথা’ প্রতিপাদ্যের আলোকে ‘নারীর প্রতি বৈষম্য ও সহিংসতা বন্ধ করো, সম্পদ- সম্পত্তিতে সমান অধিকার ও সমঅংশীদারিত্ব নিশ্চিত করো’ শ্লোগানকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এসব দাবি জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন নবনীতা চৌধুরী ও ছায়া কর্মকার। নৃত্য পরিবেশন করে শিশুশিল্পী অংকিতা সাহা এবং পঞ্চকন্যার পাঁচ আবৃত্তিশিল্পী শারমিন লাকি, তামান্না তিথি, নাজনীন নাজ, বুশরা তিথি এবং হাবিবা হ্যাপী আবৃত্তি পরিবেশন করেন।
সাংস্কৃতিক আয়োজন শেষে সমাবেশে ঘোষণা পাঠ করেন গণস্বাক্ষরতা অভিযানের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার রেহেনা বেগম। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে নারীর অবদানে আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক খাতের বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হলেও নারী ও কন্যাশিশুরা ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাম্প্রদায়িক সহিংসতাসহ বিভিন্ন দ্বন্দ্বের কারণে ধর্ষণসহ বিভিন্ন সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। নারীর প্রতি এমন বৈষম্য ও সহিংসতা বন্ধ করে, সম্পদ-সম্পত্তিতে সমান অধিকার ও সমঅংশীদারত্ব নিশ্চিত করতে তিনি এসময় কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে রয়েছে- ‘নারী ও কন্যার প্রতি নির্যাতনকারীদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিক আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া বন্ধ করতে হবে। দেশে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।’
‘হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসারে ঘটনাস্থলকে মুখ্য বিবেচনা না করে ধর্ষণ, যৌননিপীড়ন এ ধরনের আমলযোগ্য অপরাধের ঘটনায় কোন বৈষম্য, বিলম্ব ছাড়াই তাৎক্ষনিকভাবে থানায় অভিযোগ লিপিবদ্ধ করতে হবে।’
‘অপরাধীকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে, অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে পাড়া-মহল্লায় গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
‘মাদকব্যবসা বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে ধর্ষণ মামলার বিচার করতে হবে। উত্ত্যক্ত ও যৌন নিপীড়ন বন্ধে হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়ন ও রায়ের আলোকে আইন প্রণয়ন করতে হবে।
‘পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২ এর বাস্তবায়ন করতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় নারীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নারীকে অবমাননা করে যেসব প্রতিবেদন প্রকাশ/প্রচার করা হয় তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’
ধর্ষণের শিকার নারীর ডাক্তারি (মেডিকো-লিগ্যাল) পরীক্ষার ক্ষেত্রে ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ নিষিদ্ধ করা হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়ন করতে হবে। ধর্ষণকারীর সঙ্গে বিয়ে দেওয়া চলবে না। অভিবাসী নারী শ্রমিকদের সার্বিক নিরাপত্তা,অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। করোনাকালীন ও করোনাপরবর্তী সময় বিবেচনায় নিয়ে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ আরও জোরদার করতে হবে।’
‘বৈষম্যমূলক পারিবারিক আইন পরিবর্তন করে সব নাগরিকের সমঅধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অভিন্ন পারিবারিক আইন চালু করতে হবে (বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদ, ভরণপোষণ, অভিভাবকত্ব, দত্তক, সম্পত্তির উত্তরাধিকার বিষয়সমূহ)। নারী গৃহকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদান এবং এ বিষয়টিকে শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণনীতি ২০১৫ পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আইন ও বিধিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
এছাড়াও সমাবেশ থেকে ২০১৩ সালের প্রতিবন্ধী অধিকার ও সুরক্ষা আইনের বাস্তবায়ন করার দাবিসহ অনেকগুলো দাবিদাওয়া তুলে ধরা হয়।
এসময় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা দূর করে নারী-পুরুষের সমতার দর্শনকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এই সমতা আমাদের এক নতুন সমাজ উপহার দিতে পারবে।
সমাবেশ শেষে একটি র্যালির আয়োজন করা হয়। র্যালিটি শহীদ মিনার চত্বর থেকে শুরু হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা ওয়াই ডাব্লিউসিএ’র উপাধ্যক্ষ ফ্লোরেন্স গোমেজ।