ধর্মীয় উগ্রবাদী জিহাদে আহ্বানকারী এবং বিজ্ঞ বিচারক ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপর হামলার পরিকল্পনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নাম- মনির আব্দুল রাজ্জাক। এসময় তার হেফাজত হতে ০১ টি মোবাইল ফোন, ০১ টি পাসপোর্ট ও দেশি-বিদেশি ০২ টি সিম কার্ড ও ১৯ পাতার বিভিন্ন অপরাধমূলক স্ক্রিনশট উদ্ধারমূলে জব্দ করা হয়।
গত ০৫ মার্চ ২০২২ (শনিবার) রাজধানীর মতিঝিল থানার ফকিরাপুল এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেফতার করে সিটিটিসির সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের ই-ফ্রড টিম।
আজ রবিবার (৬ মার্চ ২০২২) সকাল ১১:৩০ টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মোঃ আসাদুজ্জামান, বিপিএম (বার)।
তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত মনির আব্দুল রাজ্জাক ২০০৭ সালে প্রথমে একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করার জন্য বাহরাইন যায়। প্রবাসে থাকা অবস্থায় সে ডিজিটাল বিন্যাসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় উগ্র মতবাদপুষ্ট বিভিন্ন পোস্ট ও ভিডিও দেখে রেডিক্যালাইজড হয়। পরে সে ফেইক ফেসবুক আইডি খুলে নিজের পরিচয় গোপন রেখে গাজওয়াতুল হিন্দ নামক একটি ধর্মীয় উগ্র মতবাদী সংগঠনে যোগ দিতে আমন্ত্রন জানিয়ে বিভিন্ন পোস্টে সবাইকে এই জিহাদে যোগদানের আহবান করে। সর্বশেষ সে বাহরাইন থেকে ২০১৮ সালে দেশে আসে এবং ২ মাস পরে পুনরায় প্রবাসে গমন করে। প্রবাসে বসে সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় উগ্রবাদপুষ্ট উস্কানিমূলক পোস্ট দিয়ে অনলাইনে জঙ্গীবাদ ছড়িয়ে দিচ্ছিল এবং রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করছিল।
তিনি আরো বলেন, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি ধর্মীয় উগ্রবাদী সংগঠন গাজওয়াতুল হিন্দে যোগদানের বিষয়ে সকলের দোয়া কামনা করে যেন “গাজওয়াতুল হিন্দ”এর এই যুদ্ধে আল্লাহ তাকে কবুল করেন। সে এই হীন উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশের বিজ্ঞ বিচারক এবং পুলিশ বাহিনীকে টার্গেট করে ফেসবুকে বিভিন্ন উগ্রবাদী পোস্ট দিতে থাকে। তাঁদের উপর হামলার পরিকল্পনা করার বিষয়টি মাথায় নিয়েই বাহরাইন হতে পরিবারের কাউকে না জানিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ সে বাংলাদেশে আসে। এরপর ধর্মীয় উগ্র জিহাদী কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের জন্য ছদ্মবেশে ঢাকায় অবস্থান করছিল।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি প্রবাসে (বাহরাইন) থাকাকালে তার সহকর্মী পাকিস্তানি নাগরিকের পরামর্শে পাকিস্তানি সেজে ফেসবুকে ÒGolam RabbaneÓ নামে একটি ফেইক ফেসবুক আইডি খোলে। যেখানে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি নিজেকে পাকিস্তান উর্দু স্কুল এন্ড কলেজে পড়াশুনা করেছে মর্মে স্ট্যাটাস দেয় যাতে অন্যরা তার আইডি দেখে তাকে পাকিস্তানি বলে মনে করেন। এরপর সে তার ফেক ফেসবুক আইডিতে অনবরতভাবে বাংলাদেশবিরোধী বিভিন্ন নাশকতা ও ষড়যন্ত্রমূলক পোস্ট দিত।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির ফেইক ফেসবুকে বিতর্কিত বিভিন্ন পোস্টসমূহ নিম্নরুপঃ
১। “গাজওয়াতুল হিন্দ ডাকছে আমায়। জিহাদের ডাকে নিজেকে কোরবানি করলে তার সকল হিসাব সহজ হয়ে যায়। সকলের দোয়া কামনা করছি, গাজওয়াতুল হিন্দ এর এই যুদ্ধে যেন আল্লা আমারে কবুল করেন। আপনারাও দলে দলে গাজওয়াতুল হিন্দ এর পতাকাতলে আসেন। এই যুদ্ধে আমাদের জয় হবেই হবে।
২। “দেশকে কে না ভালোবাসে? দেশের ভাল কে না চায়? এই ভালোবাসার খাতিরে দেশকে ভালোবেসে প্রয়োজনে শান্তি ফিরিয়ে আনতে, জুলুম হতে দেশ আবার স্বাধীন করতে হবে। তাই আরেকটি যুদ্ধ করতে হবে। আর এই যুদ্ধ শুরু হোক সুষ্ঠু বিচার পরিচালনার জন্য। কয়েকটা বিচারক আর পুলিশ নিধন করলেই আমাদের সোনার বাংলা আবার ফিরে পাবো।’’
৩। “দেশকে মুক্ত করতে হলে জানোয়ার পুলিশ ও শুকরের বাচ্চা বিচারকদের উপর হামলা করো। দেশ স্বাধীন করো।’’
৪। “দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে হলে সরকার দলীয় হুজুর গুলাকে আগে ইসলামী ফাউন্ডেশন ছাড়াতে হবে। প্রথমে নিজেদের ভিতরের জিহাদ দরকার। অতপর দেশ। তাই ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য জিহাদ অপরিহার্য।’’
৫। “সারাদেশের পুলিশ সদস্যদের টার্গেট করেন। তাদের পরিবার ও পুলিশের উপর হামলা করেন। ১০/১২ টা মরলেই কেল্লা ফতেহ।’’
৬। “সারাদেশের পুলিশ সদস্যদের ও বিচারকদের টার্গেট করেন। তাদের পরিবার ও তাদের উপর হামলা করেন। ১০/১২ টা মরলেই কেল্লা ফতেহ। বিচারকরা তখন জামিন দেবে। জেল কমে যাবে। দেশ ভালো হবে।’’
৭। “গাজয়াতুল হিন্দ,ডাকছে আমায়’’
৮। ‘‘জিহাদের ডাকে নিজেকে কোরবানি করলে তার সকল হিসাব সহজ হয়ে যায়। সকলের দোয়া কামনা করছি, গাজওয়াতুল হিন্দ এর এই যুদ্ধে যেন আল্লা আমারে কবুল করেন।’’
ব্রিফিংকালে ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (সিটি- সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ) আ.ফ.ম আল কিবরিয়া; উপ-পুলিশ কমিশনার (রিসার্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগ) মুহাম্মদ হাবীবুন নবী আনিছুর রশিদ; উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস্ বিভাগ) মোঃ ফারুক হোসেন; অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (সিটি- সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ) ইশতিয়াক আহমেদ, পিপিএম (সেবা); সহকারী পুলিশ কমিশনার (সিটি- সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ) সুরঞ্জনা সাহা; সহকারী পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস্ বিভাগ) আবু তালেবসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সংবাদকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
অভিযানটি উপ-পুলিশ কমিশনার (সিটি- সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ) আ.ফ.ম আল কিবরিয়া এর নির্দেশনায়, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (সিটি- সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ) ইশতিয়াক আহমেদ এর সহযোগিতায় এবং সিটি- সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের ই-ফ্রড টিমের সহকারী পুলিশ কমিশনার সুরঞ্জনা সাহার নেতৃত্বে পরিচালিত হয়।