বাংলাদেশ পুলিশের ভূমিকার ভূয়সী প্রসংশা করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, এমপি বলেছেন, করোনায় বাংলাদেশ পুলিশ সারাদেশে ডাক্তারদের পাশাপাশি সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে মূল দায়িত্ব পালন করেছে। করোনা মোকাবেলায় এক নতুন অধ্যায় তৈরি করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। করোনা মহামারী আমাদের পর্যদুস্ত করে ফেলেছিল। আমরা দেখেছি, মায়ের ডেডবডি তার ছেলে বা আত্মীয়-স্বজন নিচ্ছে না।
বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর ২০২১) বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ সদস্যদের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ সরকার অনুমোদিত ‘করোনা ইনসিগনিয়া’ উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, করোনার মধ্যে পুলিশ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছে। যখন এলাকায় একজনের করোনা হলে ওই এলাকার মানুষ সবাই পালিয়ে যেতো। সে সময় পুলিশ সবার পাশে দাঁড়িয়েছে, চিকিৎসা দিয়েছে। লাশ দাফন থেকে শুরু করে বাসায় বাসায় খাবার পৌঁছে দেওয়ার মতো মানবিক কাজগুলো তখন করেছেন পুলিশের সদস্যরা। কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসায় কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল (সিপিএইচ) অভূতপূর্ব সফলতা দেখিয়েছে। অনেকে বড় হাসপাতাল ছেড়ে পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
করোনা ইনসিগনিয়া উদ্বোধন অনুষ্ঠানের সভাপতি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার) বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ যখন বাংলাদেশে শুরু হয়, তখন এ নিয়ে কী করা হবে বা চিকিৎসা ব্যবস্থা কী এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন ধারণা ছিল না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে আমরা এক মহাকাব্যিক যুদ্ধে লিপ্ত হই। সেই যুদ্ধে অংশগ্রহণের স্বীকৃতিস্বরূপ আজকের এই ইনসিগনিয়া পাওয়া।’
আইজিপি আরও বলেন, করোনাকালে লাশ দাফন থেকে শুরু করে চিকিৎসা, লকডাউন মানানো, কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করাসহ ব্যাপক কার্যক্রম পরিচালনা করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। পাশাপাশি আমাদের সহকর্মীদের সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়েছে। লকডাউন বাস্তবায়ন থেকে শুরু করে পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল নিশ্চিতে কাজ করেছে পুলিশ।’
তিনি বলেন, ২০১৯ সালের মার্চে দেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্তের পর থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশ বাহিনীর ২৬ হাজার ১২৫ সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে ১০৭ জন মারা যান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আইজিপি থেকে শুরু করে পুলিশ কনস্টেবল পর্যন্ত সব পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যকে করোনা মহামারির সম্মুখ সারির যোদ্ধা (ফ্রন্ট ফাইটার) হিসেবে স্বীকৃতিস্বরূপ ইনসিগনিয়া ব্যাচ পরিয়ে দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ সদস্যদের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ একটি ইনসিগনিয়া পরিধানের অনুমতি দেয় সরকার। এই ব্যাজে করোনাভাইরাসের গঠন-আকৃতির মধ্যে মুষ্ঠিবদ্ধ হাতে বাঁটসহ একটি ছুরি রয়েছে। অনুমোদিত ব্যাজে বাঁটসহ ছুরি দিয়ে করোনাভাইরাসকে বিদ্ধ করা হয়েছে, যা অদম্য ও কার্যকরী মোকাবিলায় প্রতীকী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। মুষ্ঠিবদ্ধ হাত দিয়ে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সম্মুখ যোদ্ধাদের দৃঢ় প্রত্যয়ের প্রতীক বোঝানো হয়েছে।
করোনা ইনসিগনিয়া উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অ্যাডিশনাল আইজি (প্রশাসন ও পরিদর্শন) ড. মোঃ মইনুর রহমান চৌধুরী, বিপিএম (বার), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম বিপিএম(বার), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান(র্যাব) এর মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, বিপিএম, পিপিএম, অ্যাডিশনাল আইজি (অর্থ ও সরবরাহ) এস এম রুহুল আমিনসহ বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।