দেশে প্রথমবারের মতো ‘ক’ শ্রেণির মাদক ডাইমেথক্সিব্রোমোঅ্যাম্ফেটামিন (ডিওবি) উদ্ধার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য ছিল, ব্যবসায়ীর কাছে লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইথ্যালামাইড বা এলএসডি আছে। এই এলএসডি ব্যবসায়ীকে গ্রেফতারে খুলনায় অভিযান চালায় মাদকদ্রব্যের কর্মকর্তারা। একজনের কাছে কিছু এলএসডি উদ্ধারের পর অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদে মেলে ডিওবির তথ্য। উদ্ধার করা হয় ৯০ ব্লটার ডিওবি।
মাদকসেবীদের কাছে প্রতি ব্লট (পিস) ডিওবি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এই মাদক সেবনে ‘তৃতীয় নয়ন’ খুলে যায় বলে দাবি সেবীদের। তবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কেমিক্যাল বিশেষজ্ঞরা জানান, ডিওবি সেবনের পর সেবনকারীকে যে কোনোভাবে প্রভাবিত করা যায়। ফলে সেবনকারী নির্দেশিত কাজ করতে উদ্দমী হয়ে ওঠেন। এর জন্য নির্দিষ্ট মাত্রায় সেবন করতে হয়। বেশি পরিমাণে সেবন করলে মৃত্যু ঘটতে পারে।
এই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত দুজনকে গ্রেফতার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। তারা হলেন- আসিফ আহমেদ শুভ ও তার বন্ধু অর্ণব কুমার শর্মা। এছাড়া সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের খুলনা বয়রা বাজার শাখার ম্যানেজার মামুনুর রশীদকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত খুলনায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। সন্ধ্যায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (উত্তর) কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফজলুর রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এই ডিওবি আমাদের ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত নিষিদ্ধ মাদক। ডিওবি অনেকটা এলএসডির মতো দেখতে হলেও ডিওবি আরও বেশি ক্ষতিকর। অতিরিক্ত সেবনে মৃত্যুও হতে পারে। ডার্ক ওয়েবসাইটে ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে পোল্যান্ড থেকে ২০০ ব্লট ডিওবি অর্ডার করেন খুলনার যুবক আসিফ আহমেদ শুভ। অর্ডারের পর ইন্টারন্যাশনাল কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে মাদকের চালানটি সরাসরি তার বাসায় পৌঁছায়।
মাদকের অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফজলুর রহমান বলেন, বিমানবন্দরগুলোতে উন্নতমানের স্ক্যানার না থাকায় কুরিয়ারে আসা ডিওবি ধরা পড়েনি। স্ক্যানারে ধরা না পড়লেও বিদেশ থেকে এলএসডির মতো মাদক আসতে পারে এ ব্যাপারে অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য ছিল। গত আগস্ট মাসে কি-ওয়ার্ড `syash’ শব্দটি পান গোয়েন্দারা। এরপর চলে অনুসন্ধান। তিন মাসের বেশি সময় অনুসন্ধানের পর এই মাদকের সন্ধান মিলেছে বলে জানিয়েছে মাদক ঢাকা মেট্রো উত্তরের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান।
তিনি বলেন, গ্রেফতারের সময় শুভর বাসায় এলএসডি পাওয়া যায় আর অর্ণবের ডিওবি। জিজ্ঞাসাবাদে শুভ জানান, তিনি দুই মাস আগে ২০০ ব্লট ডিওবি নিয়ে আসেন। যেগুলো তিনি নিজে সেবন করতেন ও অন্য সেবীদের কাছে বিক্রি করতেন। নতুন ক্রেতা তৈরি করতে কিছু ব্লট বিনামূল্যেও দিয়েছেন তিনি।
অভিযানে থাকা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক হেলাল উদ্দিন বলেন, শুভ পোল্যান্ড থেকে দুই শতাধিক ডিওবি এনেছিলেন। আমরা অভিযানের সময় তার কাছে পেয়েছি ৯০টি। বাকিগুলো বিক্রি ও সেবন করেছে।
খুলনা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ডিওবি বিক্রির জন্য শুভর সেলার রয়েছে বলে জানান হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫-৬ জন সেলার আছে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে একজন সেলার।