ডিএমপি নিউজঃ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এর গোয়েন্দা উত্তরা বিভাগের একটি টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে চাঞ্চল্যকর ডাকাতির মামলার রহস্য উদঘাটন, লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধারসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে।
শনিবার (১৬ অক্টোবর) রাত ০৮:৩০ টায় রাজধানীর হাতিরঝিল থানার মীরবাগ এলাকা হতে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো- মোঃ মাসুদুল হক ওরফে আপেল, মোঃ আমির হোসেন হাওলাদার ও মোঃ শামীম।
এ সময় তাদের হেফাজত থেকে ৫ টি পাসপোর্ট, ২ টি এন আই ডি কার্ড, ২টি এটিএম কার্ড, ১ টি আইপ্যাড, ১ টি ওয়ার্ক পারমিট কার্ড, ১ টি বিএমইটি কার্ড, ১ টি অফিস আইডি কার্ড, ১ টি স্টীলের চাকু ও নগদ ৫৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
আজ রবিবার (১৭ অক্টোবর) বেলা ১১:৩০ টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার, বিপিএম(বার)।
ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, গত ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ তারিখ ভিকটিম মোঃ লিটন সরকার দীর্ঘ ৫ বছর পর মিশর হতে তুর্কি এয়ারলাইন্সযোগে বাংলাদেশে আসেন। তিনি হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর টার্মিনাল হতে বিমান বন্দর গোল চত্ত্বরে ফুটওভার ব্রিজের নিচে এসে বাসার উদ্দেশ্যে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করেন। এ সময় অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জন লোক ধারালো চাকুর ভয় দেখিয়ে তার সাথে থাকা হ্যান্ডব্যাগ ও লাগেজ ব্যাগ নিয়ে যায়। হ্যান্ডব্যাগ ও লাগেজে থাকা তার একটি পাসপোর্ট, মিশরের ভিসা, বিমানের টিকিট, আট আনা ওজনের স্বর্ণের চেইন, ২টি মোবাইল সেট, একটি স্মার্ট কার্ড, প্রয়োজনীয় কাপড়চোপড়সহ নগদ ৪০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ডাকাত দলের সদস্যরা ভিকটিমকে ঘটনাস্থল থেকে একটি বাসে তুলে ঘটনার বিষয়ে কাউকে কোন কিছু না জানানোর জন্য ভয়-ভীতি, হুমকি প্রদর্শন করে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে গত ১৫/১০/২০২১ ইং তারিখ বিমান বন্দর থানায় একটি মামলা রুজু হয়। এই মামলার তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা উত্তরা বিভাগ।
তিনি বলেন, মামলাটি তদন্তকালে গোয়েন্দা তথ্য উপাত্ত্ব বিশ্লেষণ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় এই ডাকাতির ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে মাসুদুল, আমির হোসেন ও শামীমকে গ্রেফতার করা হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, গ্রেফতারকৃতরা অপরাধ কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। তারা কখনও ডাকাতি, কখনও ছিনতাই, কখনও অজ্ঞানপার্টির সদস্য হিসেবে তাদের অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। দেশে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় বিদেশ হতে বিপুল সংখ্যক প্রবাসি দেশে আসা শুরু করায় এ চক্রটি এই সময়কে বেছে নিয়েছে। তারা বিদেশ থেকে আগত যে সকল যাত্রী একা বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করে তাদেরকে টার্গেট করে। টার্গেটকৃত যাত্রীর সাথে সু-কৌশলে সম্পর্ক স্থাপন করে পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনা করে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে যাত্রীর সাথে মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায়। অথবা বিদেশ হতে আগত যাত্রীদের টার্গেট করে সখ্যতা স্থাপন করে। তাদের অপর সদস্যরা টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে সুকৌশলে চেতনানাশক মিশ্রিত খাবার খাওয়ায়। খাদ্য দ্রব্য গ্রহনের পর টার্গেটকৃত ব্যক্তি অচেতন হলে তারা তার মূল্যবান দ্রব্যাদি নিয়ে দ্রুত চলে যায়। এ চক্রের সদস্যরা খাদ্যদ্রব্য হিসেবে চা, কফি, জুস, ডাবের পানি ইত্যাদি ব্যবহার করে। এই চক্রের সদস্যরা বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের চেতনানাশক দ্রব্যাদি খাওয়ানোর মাধ্যমে জিনিসপত্র নিয়ে যায়।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলার তথ্য পাওয়া যায় মর্মে পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান।
গোয়েন্দা উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার কাজী শফিকুল আলম, বিপিএম এর সার্বিক নির্দেশনায় এবং অতিঃ উপ-পুলিশ কমিশনার আছমা আরা জাহান এর তত্বাবধায়নে অতিঃ উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ কায়সার রিজভী কোরায়েশী এর নেতৃত্বে এই অভিযানটি পরিচালিত হয়।