ম্যাচের আগের দিন স্কটল্যান্ডের কোচ জানিয়ে দিলেন বাংলাদেশকে তারা পাপুয়া নিউগিনি আর ওমানের কাতারেই ভাবেন। যদিও বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ মুখে সেই কথার জবাব দেননি। হয়তো মাঠেই বোঝাতে চেয়েছিলেন স্কটিশদের। কিন্তু না, হলো না। বল হাতে দারুণ শুরুর পর খেই হারালো দল। ৫৩ রানে ছয় উইকেট পতনের পরও ১৪০ রানের লড়াকু পুঁজি পায় স্কটল্যান্ড। পরে টাইগাররা দেখায় অপরিণত ব্যাটিং। ফলাফল হার।
আর এ হার দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করলো বাংলাদেশ। গতকাল মাসকাটে স্কটল্যান্ডের কাছে ৬ রানে হার দেখে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের দল। বিশ্বকাপের আগে জিম্বাবুয়ে, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টানা তিন টি-টোয়েন্টি সিরিজ জেতে বাংলাদেশ। কিন্তু বিশ্বকাপ মিশনে টাইগাররা দেখলো টানা তিন হার। মূল লড়াই শুরুর আগে দুই প্রস্তুতি ম্যাচে শ্রীলঙ্কা ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে যায় টাইগাররা। গতকালের হারের পর কথা উঠেছে- এটা কোন বাংলাদেশ!
ওপেনিংয়ে নাঈম হাসানকে বাদ দিয়ে ভরসা রাখা হয় সৌম্য সরকারের ওপর। সঙ্গী লিটন দাস। কিন্তু আল আমেরাত মাঠে মাঝারি টার্গেটে ব্যাট হাতে দু’জনেই ব্যর্থ। দলীয় ১৮ রানেই তারা দলকে বিপদে ফেলে হাঁটেন সাজঘরে। প্রথম ওভারে দারুণ এক শটেই চার পেয়েছিলেন সৌম্য। পরের ওভারে অবশ্য দিলেন ক্যাচ। জশ ডেভিকে তুলে মারতে গিয়ে মিড উইকেটে জর্জ মানসির হাতে ধরা পড়েন বাংলাদেশ ওপেনার ৫ বলে ৫ রান করে। এরপর জোরের ওপর খেলতে গেলেন লিটন । কিন্তু বাজে শট ব্যাটে বলে হলো না। মিড-অফে ধরা পড়লেন সরাসরি ক্যাচ হয়ে। রানের দিক থেকে লিটন-সৌম্য সমান সমান।
এরপর অবশ্য দলের হাল ধরে কিছুটা আশার আলো দেখালেন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহীম ও সাকিব আল হাসান। চাপ উড়িয়ে মুশফিক পরপর দুই বলে স্কটিশ স্পিনার লিস্ককে মারলেন ছক্কা। সাকিব অবশ্য চেষ্টা করছিলেন খোলস ছেড়ে বের হওয়ার। দু’জন ৪৬ বলে ৪৭ রানের জুটি গড়েন। তাতে স্কোর বোর্ডে ৬৫ রান। ঠিক তখনই রানের চাকা বাড়ানোর চেষ্টায় আউট হতে হতে জীবন পান সাকিব। কিন্তু পরের ডেলিভারিতে পাগলামো শট খেলে ২৮ বলে ২০ রান করে ফিরে যান সাজঘরে। এরপর ৩৬ বলে ৩৮ রান করা মুশফিকও বোল্ড হলেন তার প্রিয় সুইপ শট খেলতে গিয়ে। ১৩.১ ওভারে ৭৫ রানে চার উইকেট হারায় বাংলাদেশ। পরে মাহমুুদুল্লাহ (২২ বলে ২৩) আফিফ হোসেন (১২ বলে ১৮) ও মেহেদী হাসান (৫ বলে ১৩*) ছোট ছোট ইনিংস খেললেও জয়ের জন্য তা যথেষ্ট ছিল না।
এর আগে ৫৩ রানে ৬ উইকেট হারানো স্কটল্যান্ডের সামনে ছিল ভীষণ বিপদ। সে সময় ৮ রানের ব্যবধানে তারা হারায় ৫ উইকেট। ১‘শ রানে গুটিয়ে যাওয়ারই শঙ্কা! কিন্তু মার্ক ওয়াট ও ক্রিস গ্রিভসের ৫১ রানের জুটিতে স্কটল্যান্ড স্পর্শ করে ১০০ । পরে ওয়াট ফিরলেও ক্রিস গ্রিভস খেলেন ঝড়ো ইনিংস। ২৮ বলে ৪৫ রান করে শেষ পর্যন্ত মোস্তাফিজের বলে ক্যাচ দেন তিনি। পরের বলে জশ ডেভিকেও ফেরান মোস্তাফিজ। শেষ ২ বলে ৮ রান নিয়ে অবশ্য স্কটল্যান্ডের শেষ ইতিবাচকই করেন সাফিয়ান শরীফ। শেষ ৮ ওভারে স্কটল্যান্ডের স্কোর বোর্ডে যোগ হয় ৮৫ রান।
এর আগে টসে জিতে বাংলাদেশ অধিনায়ক টসের সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেননি। দিনভর মরুভূমি উত্তপ্ত থাকলেও রাতে নেমে আসে শীতল ছাঁয়া। কুয়াশা পড়ে ভিজে যায় ঘাস-উইকেট। আর সেই কারণেই মাহমুদুল্লাহর এমন সিদ্ধান্ত অনুমেয়। তবে শুরুতে দারুণ অত্মবিশ্বাসী শুরু করে আইরিশরা।দেখেশুনেই শুরু করেন স্কটল্যান্ডের দুই ওপেনার কাইল কোয়েটজার ও জস মানসে। কিন্তু ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের ইয়র্কার বুঝতে না পেরে বোল্ড হয়ে খালি হাতে ফেরেন কোয়েটজার। নিজের প্রথম ওভারে মাত্র ১ রান দেয়া মোস্তাফিজ দ্বিতীয় ওভারে খরচ করেন ১৩ রান। পাওয়ার প্লেতে স্কটল্যান্ডের স্কোরবোর্ডে ১ উইকেটে ৩৯ রান। ইনিংসের ৮ম ও নিজের প্রথম ওভার করতে এসে দুজনের ২৯ বলে ৪০ রানের জুটি ভাঙেন শেখ মেহেদী। এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন ১৭ বলে ১১ রান করা ক্রসকে। দুই বলের ব্যবধানে বোল্ড করেন মানসেকেও। এই বাঁহাতি থামেন ২৩ বলে ২৯ রান করে। স্কটল্যান্ড পরিণত হয় ৩ উইকেটে ৪৬ রানে। শুরু হয় আসা যাওয়ার মিছিল।এরপর সাকিব আল হাসান জোড়া আঘাত হানলে কোমর ভাঙে স্কটল্যান্ড ব্যাটিং লাইনআপের। ১১তম ওভারে সাকিব ফেরান রিচি বেরিংটন (২) ও মাইকেল লিস্ককে (০)। ফলে লাসিথ মালিঙ্গাকে পেছনে ফেলে সাকিবই এখন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক। সবমিলিয়ে ৬০০ উইকেট ও ১২ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করা প্রথম ক্রিকেটার সাকিব।
পরের ওভারে ক্যালাম ম্যাকলেওডকে ৫ রানে বোল্ড করে তৃতীয় শিকার শেখ মেহেদীর। ৫৩ রানেই ৬ উইকেট হারায় স্কটিশরা। সেখান থেকে মার্ক ওয়াটকে নিয়ে গ্রেভসের জুটি বদলে দেয় ম্যাচের চিত্র। ১৭ বলে ২২ রান করা ওয়াটকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন তাসকিন আহমেদ। তবে গ্রিভস ছিলেন নিজের ছন্দেই। মোস্তাফিজের করা ইনিংসের শেষ ওভারে আউট হন ৮ম ব্যাটার হিসেবে। ততক্ষণে নামের পাশে ২৮ বলে ৪ চার ২ ছক্কায় ৪৫ রান। শেষদিকে দলীয় সংগ্রহকে আরও ভদ্রস্থ করতে ভূমিকা রাখে ব্রেডলে সেফিয়ান শেরিফের ২ বলে অপরাজিত ৮ ও জস ডেভের ৫ বলে ৮ রানের ইনিংস দুইটি।
ওদিকে টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপে শুভ সূচনা করলো স্বাগতিক ওমান। পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে পেলো ১০ উইকেটের জয়। গতকাল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পর্দা ওঠে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের। ওমানের মাসকাটের আল-আমেরাত স্টেডিয়ামে পাপুয়া নিউগিনি ও ওমানের বিপক্ষে ম্যাচের আগে হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। সম্পূর্ণ মেয়েদের গড়া এক ব্যান্ড দলের পারফরম্যান্স ছিল এ অনুষ্ঠানের মূল অংশ।
বিশ্ব মঞ্চে ওমানের পথচলা ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। পরের আসরে সুযোগ পেয়ে অভাবিতভাবে হয়ে গেছে অন্যতম স্বাগতিক। ঘরের মাঠে ‘বিশ্বকাপ অভিষেক’ দারুণভাবে রাঙিয়েছে ওমান। ১০ উইকেটে উড়িয়ে দিয়েছে পাপুয়া নিউগিনিকে। বিশ্বকাপে মাত্র তৃতীয় দল হিসেবে কোনো উইকেট না হারিয়ে জয় পেলো ওমান।