চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের দুই কেজি ক্রিস্টাল মেথ বা আইসসহ দুই যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (৮ অক্টোবর) ভোরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের কেরানীহাটে আন্দার মার দরগাহ এলাকায় একটি মিনি ট্রাকে তল্লাশি চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত ট্রাক চালক কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার গুরা মিয়ার ছেলে ফয়সাল আহমদ ওরফে ফজল (২৯) এবং হেলফার কক্সবাজার ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নাগরিক জাহেদ আলম (২০)। শুক্রবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকারিয়া রহমান জিকু বিষয়টি জানিয়েছেন।
পুলিশ জানায়, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার এক কর্মী কক্সবাজার থেকে ঢাকায় মালামাল নিয়ে যাওয়ার জন্য ট্রাকটি ভাড়া করেন। কিন্তু ট্রাকচালক ও হেলপার গাড়িতে দুই কেজি আইস নিয়ে নেন।
গোপন সূত্রে এমন সংবাদ পেয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে অবস্থান নেন সাতকানিয়া থানা পুলিশ। বিভিন্ন গাড়ি তল্লাশির একপর্যায়ে ট্রাকটি থামানোর সংকেত দেওয়া হয়। এরপর চালক ও হেলপারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা স্বীকার করেন গাড়ির এয়ারকুলারের ভেতর আইস রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় ট্রাকচালক ও হেলপারকে গ্রেফতার করা হয়।
সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) জাকারিয়া রহমান জিকু বলেন, উচ্চ মাত্রার মাদক দুই কেজি আইসসহ দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যার বাজারমূল্য আনুমানিক ১০ কোটি টাকা। ইয়াবায় সাধারণত অ্যামফিটামিন থাকে মাত্র পাঁচ শতাংশ, যেখানে আইস শতভাগ এ উপাদান থেকে তৈরি। গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, এ মাদক তারা কোথা থেকে সংগ্রহ করেছেন এবং কোথায় সরবরাহ করবেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ১৮৮৭ সালে জার্মানিতে মারাত্মক সব ড্রাগের ওপর গবেষণা করতে গিয়ে আবিষ্কৃত হয় ক্রিস্টাল ড্রাগ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুদ্ধবিমানের চালক ও সৈনিকদের সারাক্ষণ নির্ঘুম রাখতে জার্মান ও জাপানে মাদকটি ব্যবহারে উৎসাহিত করা হতো। পরবর্তীতে এই মাদকের নাম পরিবর্তিত হয়ে কোথাও ক্রিস্টাল মেথ, আইস, এক্সটেসি এবং এলাকাভেদে নানা ছদ্মনামে এর ব্যবহার চালু হয়।
১৯৭০ সালে আমেরিকাতে ক্রিস্টাল মেথ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ২০১০ সালে অস্ট্রেলিয়া হয়ে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, লাওস, চীন, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার হয়ে বাংলাদেশে মাদকটির ব্যবহার শুরু হয়। ক্রিস্টাল আইস অতি উচ্চমাত্রার একটি মাদক এবং এটি সেবনে অনিদ্রা ও অতি উত্তেজনা তৈরি হয়।
মাদকটি গ্রহনের ফলে স্মৃতিভ্রম ও মস্তিষ্ক বিকৃতি, স্ট্রোক, হৃদরোগ, কিডনি, লিভার নষ্ট হয়। এছাড়া দাঁতক্ষয়, অতিরিক্ত ঘাম, চুলকানি, রাগ ও আত্মহত্যার মতো ভয়ানক প্রবণতাও তৈরি হয়।