আলোচিত কলেজছাত্রী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা কন্যা মোসারাত জাহান মুনিয়াকে (২২) ধর্ষণ ও হত্যা মামলার প্রধান আসামি বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ওপর শুনানি আগামী ১০ অক্টোবর। রবিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) এ বিষয়ে শুনানির তারিখ থাকলেও তা হয়নি। ঢাকার সিএমএম আদালত নতুন করে তারিখ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বাদী পক্ষের আইনজীবী।
অন্যদিকে এ মামলার আরেক আসামি কথিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসাকে (মাদকসহ গ্রেফতার হওয়ার পর বর্তমানে কারাবন্দি) শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। মুনিয়া হত্যার মামলার রহস্য উদ্ঘাটনে যেকোনো সময় পিয়াসাকে গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে আনা হতে পারে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট পিবিআই কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চাঞ্চল্যকর মুনিয়া হত্যা মামলার প্রধান আসামি ভিকটিমের প্রেমিক আনভীরকে যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে, আদালতের মাধ্যমে সেই বার্তা নতুন করে দেশের সব ইমিগ্রেশনে দিতে চায় তদন্ত সংস্থা পিবিআই। এ জন্য গত বৃহস্পতিবার ঢাকার আদালতে আবেদন করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক গোলাম মোক্তার আশরাফ উদ্দিন। সেই আবেদনের ওপর রবিবার শুনানি হওয়ার কথা ছিল। এর আগে মুনিয়ার রহস্যজনক মৃত্যুর পর গত মে মাসে আনভীরের দেশত্যাগে এমন নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।
এর আগে গত শনিবার সকালে ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যান পিবিআই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সরোয়ার জাহান ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক গোলাম মোক্তার আশরাফ উদ্দিন। তারা কুমিল্লা জেলা পিবিআই কার্যালয়ে বসে প্রায় চার ঘণ্টা ধরে মামলার বাদী নুসরাত ও চারজন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন।
এজাহার অনুযায়ী ঘটনার আদোপান্ত বর্ণনা দেন বাদী নুসরাত। এ সময় তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মাসুদ সালাউদ্দিনও উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, মুনিয়ার শরীরে পুরুষের ডিএনএ পাওয়া, গুলশানের বাসায় মূল আসামি সর্বশেষ কত তারিখে গিয়েছিল, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও অন্য মামলার গ্রেফতার হয়ে কারাবন্দি ফারিয়া মাহবুব পিয়াসাকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হতে পারে কিনা— এসব বিষয় নিয়েও সেখানে আলোচনা হয়।
জানা গেছে, তদন্তভার পাওয়ার পর গত ১২ সেপ্টেম্বর গুলশানের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। সেখানে তিনি সেই ভবনের বাসিন্দাদের কাছে থেকেও তথ্য নেন।
মুনিয়াকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে গত ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ আদালতে মামলা করেন মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান তানিয়া। ওই আদালতের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ বেগম মাফরোজা পারভীন মামলাটি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
আদালতের নির্দেশে পরের দিন গুলশান থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) (২)/৩০ ধারা এবং ৩০২/৩৪ ধারায় মামলাটি (নম্বর-৫) রেকর্ড হয়। মামলা রেকর্ড হওয়ার পর তদন্তের জন্য পিবিআইয়ের কাছে পাঠানো হয়।
ধর্ষণের পর হত্যার এই চাঞ্চল্যকর মামলায় প্রধান আসামি বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীর (৪২)। পাশাপাশি তার বাবা বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান (৭০), মা আফরোজা সোবহান (৬০), আনভীরের স্ত্রী সাবরিনা (৪০), হুইপপুত্র শারুনের সাবেক স্ত্রী সাইফা রহমান মিম (৩৫), কথিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা, পিয়াসার বান্ধবী ও ঘটনাস্থল গুলশানের ফ্ল্যাট মালিকের স্ত্রী শারমিন (৪০) ও তার স্বামী ইব্রাহিম আহমেদ রিপনকে (৪৭) আসামি করা হয়েছে।
গত ২৬ এপ্রিল রাতে গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে মোসারাত জাহান মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সেই রাতেই বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি আনভীরের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করেন ভিকটিমের বোন নুসরাত জাহান তানিয়া।
তদন্ত শেষে গত ১৯ জুলাই আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে গুলশান থানা পুলিশ জানায়, আসামির আনভীরের সঙ্গে ঘটনার সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেয়া হোক। এর বিরুদ্ধে আদালতে না-রাজি দেন বাদী নুসরাত। গত ১৮ আগস্ট পুলিশ প্রতিবেদন গ্রহণ করে ও বাদীর আবেদন খারিজ করে আসামিকে অব্যাহতি দেন ঢাকার সিএমএম আদালত। এ নিয়ে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকসহ বিভিন্ন মহলে নানা প্রশ্ন ও প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সুত্র:মানব কন্ঠ