সাম্প্রতিক সময়ে আফগানিস্তানে পরপর দুটি সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন বিশ্বের বিবেকবান নাগরিকদের যতো না পীড়া দিচ্ছিল, তার চেয়ে মিথ্যা অপপ্রচার ও বিদ্বেষী মিডিয়ার আগ্রাসী কর্মকান্ড কোনো অংশেই কম কষ্টদায়ক ছিলো না।
১৯৭৯ সালে তখনকার বৃহৎ পরাশক্তি কমিউনিস্ট সোভিয়েত রাশিয়া আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালায়। তখন দেশপ্রেমিক আলেম সমাজ, পীর মাশায়েখের নেতৃত্বে ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষ দেশরক্ষার জিহাদে অংশ নেয়। সামরিক ও রাজনৈতিক নেতারা দুভাগে বিভক্ত ছিলেন। কিছু বিদেশি দখলদারত্বের পক্ষে। একটি অংশ মুক্তিকামী মানুষের পক্ষে। দীর্ঘ ১৪ বছরের যুদ্ধে সোভিয়েত রাশিয়ার পরাজয়ের মাধ্যমে আফগানিস্তান স্বাধীন হয়। এরপর মার্কিন হস্তক্ষেপ, সউদী-ইরান বলয়ের দ্ব›দ্ব, আফগান কমিউনিস্ট পার্টি, স্থানীয় গোত্রীয় দ্ব›দ্ব, নর্দার্ন এলায়েন্স, দোস্তাম (কমরেড) মিলিশিয়া ইত্যাদি সঙ্ঘাতে স্বাধীন আফগান জনগণের মুক্তি সংগ্রামের ফসল ঘরে ওঠেনি।
এসময় স্বাধীনতা সংগ্রামের নতুন যোদ্ধা প্রজন্ম দেশের দায়িত্বভার নেওয়ার জন্য একটি সংগঠনের রূপ নিয়ে মাঠে আসে। মাদরাসা ছাত্রদের এ নতুন জাগরণের নাম আফগানিস্তান ছাত্র আন্দোলন। এর প্রধান ছিলেন মোল্লা উমর। বিবাদমান সব সশস্ত্র গ্রুপকে পরাজিত করে তারা ১৯৯৬ সালে দেশটির শাসনক্ষমতা হাতে নিয়ে নেয়। সাথে সাথে পশ্চিমা অপপ্রচার শুরু হয়ে যায়।
এসময় একজন বড়ো মুসলিম জেনারেল বলেছিলেন, আফগানিস্তানে মানুষ অনেক বড় একটি কারামত দেখতে পাবে। এখানে আমেরিকার সহায়তায় মুসলমানরা সোভিয়েত রাশিয়াকে পরাজিত করবে আর আমেরিকার সহযোগিতায়ই তারা আবার আমেরিকাকেও পরাজিত করবে ইন শা আল্লাহ।
এসময় মার্কিন টুইনটাওয়ার ধ্বংসের ঘটনা নিয়ে আমেরিকা তাদের সাবেক মিত্র বিন লাদেনকে দায়ী করে। আফগানিস্তানের সোভিয়েতবিরোধী যুদ্ধের বড় নেতা এবং বাহ্যিক দৃষ্টিতে আমেরিকার মিত্র শায়খ ওসামা বিন লাদেনের সাথে তখন আমেরিকার বৈরী ভাব শুরু হয়ে গেছে। তালিবান তখন পাঁচবছর ধরে আফগানিস্তানের শাসক হিসাবে নিজেদের প্রমাণ করেছে। বিন লাদেনকে আমেরিকার হাতে তুলে দেওয়ার ব্যাপারে চাপ সৃষ্টি করা হলেও মোল্লা উমর এতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ক্ষমতা চলে গেলেও একজন মেহমান মুক্তিযোদ্ধাকে আমি অমুসলিমদের হাতে তুলে দেব না। তখন মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনীর সমন্বিত বিমান হামলায় তিনি তালিবান আন্দোলনের সদস্যদের নিয়ে রাজধানী কাবুল ছেড়ে সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে থাকেন। ২০০১ থেকে ২০২১ এই কুড়ি বছর সময় তালিবান বিশ্বের ৪৯টি দেশের সমর্থন আদায় করা পরাশক্তি আমেরিকা ও তার মিত্র ন্যাটো বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যায়।
পাকিস্তানের একদল আলেম মোল্লা উমরকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, একটি মানুষের জন্য একটি সরকারের পতন এবং একটি জাতির ওপর বিদেশি দখলদারত্বের সূচনা না ঘটিয়ে কি অন্য কিছু করা যায় না। মোল্লা উমর তখন বলেছিলেন, আপনারা আমাকে এর সপক্ষে শরীয়তের একটি হুকুম দেখান। একজন সাধারণ মেহমানকে আশ্রয় দিলে তার জন্য গোটা স¤প্রদায়ের জীবন দেওয়া আফগানিস্তানের ঐতিহ্য। আর যে মানুষটি আমার দেশের জন্য এতো বছর যুদ্ধ করলেন, তাকে কী করে আমি শত্রæর হাতে তুলে দিই?
এরপর আলেমরা আর কোনো কথা বলার চেষ্টা করেননি। একদল তালিবান মুজাহিদ মুক্তিযোদ্ধা আলেমকে তিনি একথাও বলেছিলেন, অনেক আলেম ও সামরিক কর্তারা আমাকে যখন শায়খ ওসামা বিন লাদেনকে মার্কিনীদের হাতে তুলে দিয়ে আফগানিস্তান ও তালিবান শাসনকে রক্ষা করতে বলতেন, পরপর একাধারে তিনদিন স্বপ্নযোগে নবী করীম সা. হুকুম দিয়েছেন, ‘উমর, তোমার সিদ্ধান্ত ও শরীয়তের নীতি থেকে একচুল পরিমাণও নড়ো না। এ যুদ্ধে তোমরাই বিজয়ী হবে। এরপর আমি আর কার কথা বা পরামর্শ শুনবো।
মোল্লা উমর বিজয় দেখে যেতে পারেননি। তবে তার বেঁচে থাকা সহযোদ্ধারা বিজয় দেখেছেন। একান্তজন মোল্লা আবদুল গনি বারাদার যদি প্রেসিডেন্ট হন তাহলে মোল্লা উমরের ছেলে তালিবান আন্দোলনের সামরিক শাখার কমান্ডার মোল্লা ইয়াকুব হতে যাচ্ছেন সরকারে তার প্রধান সহকর্মী। সুত্র:ইনকিলাব।