রাজধানীর খিলগাঁওয়ে ৫ বছরের শিশু জিসানুল ইসলাম আকাইদ এর হত্যার রহস্য উদঘাটনসহ মূল অভিযুক্ত মোঃ সেলিমকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর খিলগাঁও থানা পুলিশ।
৯ আগস্ট, ২০২১ (সোমবার) দিবাগত রাত ০২:৪৫ টায় খিলগাঁও থানার গোড়ান এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় এ ঘটনায় অপহরণের কাজে ব্যবহৃত রিকশা, অপহরণের সময় অপহরণকারীর পরিহিত টি-শার্ট ও লুঙ্গি, হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ক্ষুর জব্দ করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ৬ আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৩ টায় ভিকটিম জিসানুল ইসলাম আকাইদ ও তার সমবয়সী ৫/৬ জন শিশু একসাথে খেলাধুলা করতে বাসা হতে বের হয়। খেলা শেষে অন্যান্য শিশুরা বাসায় ফিরে গেলেও ভিকটিম বাসায় ফেরত আসেনি। ভিকটিমের পরিবার অনেক খোঁজাখুজি করেন। ঘটনার দিন অজ্ঞাতনামা রিকশা চালক তার রিকশাতে করে ভিকটিমকে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে স্থানীয় এবং আশেপাশের লোকজনের মাধ্যমে ভিকটিমের পরিবার জানতে পারেন। গত ৭ আগস্ট, ২০২১ ভিকটিমের পিতা অপহরণের ঘটনা বর্ণনা করে অভিযোগ প্রদান করলে খিলগাঁও থানার মামলা রুজু হয়। এ মামলা তদন্ত শুরু করে খিলগাঁও থানা পুলিশ।
খিলগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ফারুকুল আলম বলেন, মামলাটি তদন্তকালে গত ৯ আগস্ট, ২০২১ (সোমবার) সাড়ে ১১ টায় খিলগাঁও থানার মধ্য নন্দীপাড়া নূর মসজিদ গলির একটি ভবনের ২য় তলায় পঁচাগলা অবস্থায় একটি শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ভিকটিমের পিতা-মাতা শিশুর মৃতদেহে পরনে থাকা প্যান্টের রং দেখে ভিকটিমকে শনাক্ত করেন।
তিনি বলেন, এ মামলা তদন্তকালে ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করে অভিযুক্তকে শনাক্ত করা হয়। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গোড়ান এলাকা হতে অভিযুক্ত সেলিমকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, গ্রেফতারকৃত অভিযুক্ত পেশায় একজন রিকশা চালক। ভিকটিমের লাশ প্রাপ্তির ঘটনাস্থল অভিযুক্ত সেলিমের সম্পর্কে আত্মীয়ের বাড়ি। বাড়ির মালিকের স্ত্রী একটি ব্যাংকে চাকুরী করেন। আত্মীয়তার সম্পর্কের কারণে গ্রেফতারকৃত সেলিম উক্ত ব্যাংক কর্মকর্তাকে তার রিকশাযোগে বাসা ও ব্যাংকে আনা নেওয়া করতেন। কিডনী রোগে আক্রান্ত তার স্ত্রী নুপুর আক্তারের চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। তার স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য ব্যাংক কর্মকর্তার কাছে টাকা চায়। ব্যাংক কর্মকর্তা তাকে টাকা প্রদান না করায় অবৈধ জিনিস ব্যাংক কর্মকর্তার বাড়িতে রেখে ফাঁদে ফেলার মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করে অভিযুক্ত সেলিম। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য গত ৪ আগস্ট, ২০২১ দোকান থেকে সে একটি ক্ষুর কিনে তার হেফাজতে রাখে। ঘটনার দিন ভিকটিম জিসানুলকে তার রিকশায় করে ব্যাংক কর্মকর্তার বাড়ির ২য় তলায় নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ভিকটিমের হাত রশি দিয়ে বেঁধে ধারালো ক্ষুর দিয়ে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
ভিকটিমকে হত্যার পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, গত ৪ আগস্ট, ২০২১ (বুধবার) ব্যাংক কর্মকর্তার স্বামী তাদের বাসা পরবর্তী ৭ আগস্ট, ২০২১ পরিস্কার করা হবে মর্মে গ্রেফতারকৃত সেলিমকে বলেন। তারা বাড়ী পরিস্কার করার সময় এই লাশ দেখতে পেলে পুলিশী ঝামেলা এড়াতে লাশটি বাড়ী থেকে সরানোর চিন্তা করবে। এক্ষেত্রে বাড়ির মালিক তাকে দিয়ে লাশটি সরানোর উদ্যোগ নিলে সে বাড়ী থেকে লাশ সরানোর কাজের জন্য মোটা অংকের টাকা দাবী করবে। এ পরিকল্পনায় সে ভিকটিমকে হত্যা করে। কিন্তু ০৩ দিন যাবত বাড়ির মালিক তাকে বাড়ী পরিস্কার করার জন্য না ডাকায় তার এই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। রুজুকৃত মামলায় পেনাল কোড ৩০২/২০১ ধারা সংযোজন করার জন্য বিজ্ঞ আদালতে আবেদন করা হয়েছে মর্মে পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান গ্রেফতারকৃতকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ মতিঝিল বিভাগের মোঃ আঃ আহাদ, পিপিএম (বার) এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (খিলগাঁও জোন) মোহাম্মদ নূরুল আমীন পিপিএম এর সহায়তায়, খিলগাঁও থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সুজিত কুমার সাহা এর নেতৃত্বে এই অভিযানটি পরিচালিত হয়।