ছোটবেলায় অনেকটা টানাপোড়েন নিয়ে তক্কে তক্কে বেঁচেই আজ আমি ছত্রিশে উপনীত। রোগ আমার দেহে হানা দিয়েছে বহুবার। ফাঁক ফোকর দিয়ে বেঁচে গিয়েছি। ২০১৪ সালে বিয়ের কথা পাকা হবার পরই পড়ে যাই PLID এর কবলে। তখন আমি নোয়াখালী কলেজের প্রভাষক।
দুই দিন থেকে আমি পুরো অচল। হাইডোজের পেইন কিলার নিয়ে একুশ পরিবহন করে চলে যাই ঢাকা। প্রাক্তন সহকর্মী জনাব বাকী বিল্লাহ অর্ধবেলা ছুটি নিয়ে আমাকে (বর্তমানে ফরেন সার্ভিসে জুরিখ আছেন) রিসিভ করে নিয়ে যান গুলশান ইউনাইটেড হসপিটালে। সাথে সাথে ভর্তি, পরেরদিন সকাল ৮ টায় অপারেশন স্পাইন সার্জন ডা. এস ইউ আহমেদের অধীনে। এতটুক পর্যন্ত বাবা মাকে কিচ্ছু বলিনি। বাবার অসহায় মুখ আমার খুব খারাপ লাগে। জানি ওনি ভেঙে পড়বেন। এবার ও বলতাম না যেহেতু না দাবী দিতে হবে তাই মা এলেন ঢাকা। আমার মা সংগ্রামী ও সাহসী। দীর্ঘ ১৩ ঘন্টা পর আইসিইউতে আমার সেন্স ফেরে। মনে হলো অন্য জীবন। আলহামদুলিল্লাহ।
বাড়িতে ফিরলে বাবা বললেন ” বাবা এত বড় ঘটনাটা নাসরিনকে বলে দে। জীবনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেই। আমি চাই না হবু বউ আমার ছেলেকে কোন নেতিবাচক কথা বলুক।”
অনেকটা সুস্থ হয়ে ফিরে যাই নোয়াখালীতে। খুলে বলি সব। ভদ্রমহিলা কিছু বললেন না, ভাগ্য বলেই মেনে নিলেন এবং একটা কৃতজ্ঞতার আবেশ দিয়ে কফি খেয়ে চলে গেলেন। কেন জানি একটা ইতিবাচক ফল আসবেই মনে হলো, আসলোও। আলহামদুলিল্লাহ।
২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বর, একটা অন্ধকার রাত। বাসার সামনেই ১১.৩২ এরদিকে বাইক আর সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষ। কী হলো বলতো পারবো না। ছোট ভাই কাফি আহত হলো নির্মমভাবে। এতটুকু মনে পড়ে আমার বড় ছেলের শুভ্র মুখটা ভেসে আসছিল। মনে হচ্ছিল ছেলেকে আর দেখতে পারবো না। বাবা ছেলের কাছে ফিরে এসেছি। আলহামদুলিল্লাহ।
আজ প্রায় ২২ বছর হতে চললো এমন কোনদিন ছিল না যে আমার স্পাইন ব্যাথা করে না। বেশি বসে থাকলে, বেশি শুয়ে থাকলে, ঠান্ডায়, বৃষ্টি সবকিছুই আমার বিরুদ্ধে। মাঝে মাঝে দমে যাই আবার জেগে উঠি। আল্লাহ আমার ঘর আলোকিত করেছেন একজন নেককার নারী ও তিন চাঁদমুখ দিয়ে। আমার বাবা মা এখনো আছেন। স্বচ্ছলভাবে বাঁচার রিজিক দিয়েছেন। আমার আর কী লাগে!!!
ঘুরার মোহ ছাড়া আর কিছুই টানে না।
আজ করোনার রিপোর্ট পজেটিভ আসলো। ঝিরিঝিরি বাতাসে জ্বর শুকচ্ছে আর বাঁচার আনন্দ দোলা দিয়ে যাচ্ছে। আল্লাহ তুমি আমার প্রতিপালক, আমার মালিক। আমাকে মাফ করে দাও। সবাইকে সুস্থ করে দাও।
করোনাভাইরাসহ সব রোগশোকে মুক্ত হোক আমার চারপাশ।
লেখক: মহিবুবুল হক ছোটন সহকারী অধ্যাপক কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ।