সেই হাঁড়িভাঙা গাছটিই পাল্টে দিল রংপুরের অর্থনীতি। ওই একটি গাছ থেকেই জন্ম লাখো গাছের। আর এই লাখো গাছ থেকে আজ বিক্রি হচ্ছে শত কোটি টাকার আম। সেই হাঁড়িভাঙা গাছটি আজও দাঁড়িয়ে আছে সগৌরবে। প্রায় ৭৫ বছর আগে যাত্রা হলেও এ আমের ব্যাপক সম্প্রসারণ শুরু হয়েছে নব্বইয়ের দশকে। হাঁড়িভাঙা আমের নামকরণ প্রসঙ্গে মিঠাপুকুরের খোড়াগাছ ইউনিয়নের তেকানি গ্রামের আমজাদ হোসেন জানান, প্রায় ৭৫ বছর আগে তার বাবা নফল উদ্দিন এ গাছটি রোপণ করেছিলেন।
তিনি গাছটি প্রসঙ্গে বলেন, শত বছর আগে মিঠাপুকুরের বালুয়া মাসুমপুর এলাকার জমিদার ছিলেন তাজ বাহাদুর সিংহ। তিনি খুব শৌখিন মানুষ ছিলেন। তার একটি ফলের বাগান ছিল। এই বাগানে বিভিন্ন প্রজাতির ফল ছিল। পেশাদার কিছু আম ব্যবসায়ী তার বাগান থেকে আম নিয়ে পদাগঞ্জ হাটে বিক্রি করতেন। সেখান থেকে তার বাবা এই হাঁড়িভাঙা আম ক্রয় করে আবাদ শুরু করেন। আমটি খুবই সুস্বাদু হওয়ায় তৎকালীন সময় পাঁচ টাকা দিয়ে ১০০ আম কিনে আনেন এবং আম খাওয়ার পর আমের আঁটি থেকে চারা গজায়। ভাঙা হাঁড়ির টুকরোর মাঝখানে গাছটি জন্মেছিল বলে গাছটির নামকরণ করা হয় হাঁড়িভাঙা। তখন থেকেই এই অঞ্চলে হাঁড়িভাঙা আমের যাত্রা শুরু। সেই গাছটি এখনো জীবিত রয়েছে এবং ফলও দিচ্ছে। আমজাদ হোসেন হাঁড়িভাঙা আমের জনক হিসেবে তার বাবার স্বীকৃতি দাবি করেন। ১৯৯২ সাল থেকে রংপুরে হাঁড়িভাঙা আমের সম্প্রসারণ শুরু হয়। এদিকে আবদুস ছালাম নামে এক কৃষক নিজেকে হাঁড়িভাঙা আমের সম্প্রসারক দাবি করেন। তার দাবি, তিনি ১৯৯২ সাল থেকে হাঁড়িভাঙা আমের চাষ শুরু করেন। তার দেখাদেখি এখন রংপুরে কয়েক লাখ হাঁড়িভাঙা আমের গাছ রয়েছে।
রংপুর কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার রংপুর জেলায় ৩ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে আমের ফলন হয়েছে। এর মধ্যে হাঁড়িভাঙার ফলন হয়েছে ১ হাজার ৪৫০ হেক্টর। গত বছর প্রতি হেক্টরে ফলন হয়েছিল ৯ দশমিক ৪ মেট্রিক টন। এবার আশা করা হচ্ছে গত বছরের চেয়ে ফলন বেশি হবে। সেই হিসাবে শুধু হাঁড়িভাঙা উৎপাদন হতে পারে ১৫ হাজার মেট্রিক টনের ওপর। মৌসুমের শুরুতে দাম কিছুটা কম থাকলে প্রতি কেজি হাঁড়িভাঙা আম ৮০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি হয়। এই আম বিক্রি করে চাষিরা ২০০ কোটি টাকার ওপর ঘরে তোলেন।