কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া খোরশেদ আলমের লাশের আকৃতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক অপপ্রচার ও গুজব চালানো হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকগণও মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে অপপ্রচার চালায়। অনেকে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন,তিনি হাসপাতালের ছটফট করে মারা গেছেন, মৃত্যুর সময় কেউ পাশে ছিলো না। তার দেহটি সোজা করে দেয়নি। এ জাতীয় গুজব ও অপ্রচার নিয়ে মৃতের ছেলে মাহমুদুল হাসান দু:খ প্রকাশ করেন। মারা যাওয়া ব্যক্তি খোরশেদ আলম কুমিল্লা মনোহরগঞ্জ উপজেলার বাইশগাঁও গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি একজন ব্যাংক কর্মকর্তা ছিলেন। ১ মে ভোর বেলায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি।
এ বিষয়ে খোরশেদ আলমের ছেলে মাহমুদুল হাসান বলেন, আমার বাবা খোরশেদ আলম করোনায় মারা গেছেন। বাবার শারিরিক অবস্থা ভাল না থাকায় গত ২৪ এপ্রিল কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি। ২৬ তারিখ আমরা জানতে পারি, তিনি করোনা পজিটিভ। ১ মে ভোর ৫.৫০ মিনিটে তিনি মারা যান। বাবা জনতা ব্যাংক লাকসাম শাখার সিনিয়র অফিসার পদে দায়িত্বে ছিলেন। আমি বড় হওয়ার পর থেকে দেখছি, বাবা লাঠি ভর করে চলতেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি আহত হয়েছেন। সে সময়ে কোমরে প্রচন্ড ব্যথা পাওয়ার পর থেকে লাঠি ভর করে হাঁটতেন। প্রথম জীবনে মনোহরগঞ্জ নূরুল হক হাই স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। টাকার অভাবে প্রথম জীবনে চিকিৎসা করা হয়নি। তিনি ১৯৯৫ সালে প্রথম স্ট্রোক করেন। এর পরে আরও কয়েকবার স্ট্রোক করেছেন। তিনি প্যারালাইজড রোগী ছিলেন। বাবার ডান হাত ও ডান পা অচল ছিলো। কোমর বাঁকা ছিলো। বাবা যখন ইন্তেকাল করেন আমি পাশে ছিলাম। আমার পরিবারের আরও দুইজন সদস্য সাথে ছিলেন। ফেসবুকে অনেকে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। তাদের ধারণা করে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করবো। বাবাকে হারিয়ে আমরা শোকাহত, আবার মানুষের মিথ্যাচার। যা কখনো কাম্য নয়।
নিহত খোরশেদ আলমের লাশ নিয়ে গোসল জানাজা ও দাফন করে কুমিল্লার টিম বিবেক। বিবেকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইউসুফ মোল্লা টিপু বলেন, সকাল ৭টায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিট থেকে মনোহরগঞ্জের খোরশদে সাহেবের লাশ গ্রহন করে সেখানে গোসল ও কাফনের ব্যবস্থা করে জানাজা আদায় করি। গোসলের সময় লাশ আমরা সোজা করার চেষ্টা করলে তার ছেলে বলেন বাবা প্যারালাইজ রোগী ছিলেন। তিনি প্যারালাইজ রোগী হওয়ার কারনে দেহ বাঁকা ছিল।
এ বিষয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাজেদা খাতুন বলেন, করোনা ওয়ার্ডে সর্বাক্ষণিক ডাক্তার, নার্সসহ সকল জনবল রয়েছে। এখন এ হাসপাতালে করোনার কোন সরঞ্জাম সংকট নেই। মনোহরগঞ্জের খোরশেদ আলম ২৪ তারিখ এখানে ভর্তি হয়েছেন। ১ মে মারা যান। অনেকে সামাজিক মাধ্যমে বলে ডাক্তার, নার্স অনুপস্থিত ছিলো, এ তথ্যটি ভূল। হাসপাতাল ২৪ ঘণ্টা সিসি টিভির আওতায় রয়েছে। আমাদের নিকট সকল ডাটা আছে। ফেসবুকে মিথ্যা ও গুজব না ছড়ানোর সকলের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।