আমার মায়ের মুখ দেখে বহুজন্মের দুঃখের কথা মনে পড়ে। মায়েদের মুখটাই এমন! মায়ের মুখ একটা ঝোড়ো হাওয়ায় উড়ে গেছে। এখন আর মনে করতে পারি না কিন্তু মায়ের জন্যও একটা চাপা দুঃখ মাঝে মাঝে মৌসুমী হাওয়ার মত উড়ে আসে।
আর্দ্র বাতাস পাহাড়ে ধাক্কা দিয়ে বৃষ্টি ঝরায়। আমার মা ছোটো ছোটো আমরা দুই ভাইকে পরম যত্নে বড় করে তুলেছেন ধীরে ধীরে। এখন আমরা বড় হয়ে গেছি, বাবা ছোট হয়ে গেছেন। ছোটো হয়ে গেছে তাঁর জীবনীশক্তি। একদিন এই শক্তি টুপ করে নিভে যাবে। তারপর পূর্ব পশ্চিম উত্তর দক্ষিণ সব দিক নিয়ে তিনিও মায়ের মত ঝাঁপ দেবেন অনিবার্য অন্ধকারে!
পৃথিবীতে একটা সন্তানকে তার বাবা মা শুধু দিয়ে যেতে পারেন তাদের মতই আরেকটা বাবা-মায়ের পরিচয়! একদিন তাদের প্রতি করা সমস্ত অপরাধ বাবা- মা হওয়ার পর ছায়া মেলে ধরে। তখন বাবা-মাকে আরো বেশি করে মনে পড়ে যায় ।একদিন তাদের ‘ভালোবাসি’ এই কথাটা বুকে টেনে হাজার হাজার বার না বলতে পারাটা নিজের সন্তানকে বুকে টেনে বলতে চাই আমরা। অপরাধ আর ভালোবাসা জীবনের এই পর্যায়টায় মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়!
বাবা-মা-সন্তানের এই চক্রবৃত্তে আটকে পড়ার নামই সংসার! আর এই চক্রবৃত্তে ভেঙে বেরিয়ে আসার নামই সন্ন্যাসী। সংসার মানেই – ক্লান্তি, অবসাদ, বিষন্নতা, অনাবিল আনন্দ, আপনজন হারানোর কালজয়ী বেদনা । সংসার মানেই এক অনিশ্চয়তার দিকে বহুমুখী যাত্রা। অন্যদিকে সন্ন্যাসী মানে সবকিছু ছেড়ে নিজের দিকে এক অন্তর্মুখী যাত্রা, এক মুক্তির দিকে, নিশ্চয়তার দিকে যাত্রা। তবুও কেন মানুষ নিশ্চয়তা ছেড়ে এক অনিশ্চয়তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে— দিনের পর দিন- রাতের পর রাত??
লেখক:
রুবায়েত হোসেন